• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯, ১১:১৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯, ০১:১১ পিএম

তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র

নদীগর্ভে বিলীন ৭ শতাধিক ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি

নদীগর্ভে বিলীন ৭ শতাধিক ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি

তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র  নদের ভাঙনে গাইবান্ধায় প্রতি বছরেই বাড়ছে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন মানুষের সংখ্যা। গেল এক মাসে নদীতে বিলীন হয়েছে সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার অন্তত ২ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি। ভাঙনের শিকার হয়ে কে কোথায় আশ্রয় নিয়েছে তা জানা নেই ক্ষতিগ্রস্তদের।

গত দুই সপ্তাহের বেশি পানি বাড়ছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে। সেই সঙ্গে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে নদী ভাঙন। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লালচামাড়ার, হরিপুর, চন্ডিপুর, তারাপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। এরইমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে কয়েকটি গ্রামের ৭ শতাধিক বসতঘর। ভাঙনে বিলীন হয়েছে অন্তত এক হাজার একর ফসলি জমি। রক্ষা পায়নি গাছপালা আর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। এতে ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদী তীরবর্তী জনপদের মানুষ।

লালচামাড় ঘাটের বাসিন্দা আয়তাল বলেন, ‘বন্যার আগেও নদীর ভাঙনে বাড়িঘর, ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। এখন আবার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। দফায় দফায় ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ভাঙনের শিকার অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধ আর অন্যর জমিতে। খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন কাটছে কোন রকমে’।

হরিপুর ঘাটের বাসিন্দা ছালাম বলেন, ‘ভাঙনের কারণে প্রতিনিয়ত তাদের বাড়িঘর সড়িয়ে নিতে হচ্ছে। ঘরবাড়ি সড়িয়ে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন তাও জানা নেই তার। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে না উঠতেই নদীর ভাঙনে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে’।

নদী ভাঙনে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে অনেকের আশ্রয় হয়েছে অন্যর জায়গা আর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। খোলা আকাশের নিচে কোন রকমে দিন কাটছে তাদের। এছাড়া হুমকির মুখে বসতঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙন কবলিত এলাকায় জিওব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তাতে কোন কাজ হচ্ছেনা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফজলুর রহমান নান্নু বলেন, ‘তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। গত ১৫ দিনে হরিপুরসহ আশপাশ কয়েক গ্রামের ৭ শতাধিক বসতভিটে ১ হাজার আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে আরও বহু বাড়িঘর, ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সেই সঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয় হাজার-হাজার পরিবার বাঁধসহ অন্যর জায়গায় কোন রকমে বসবাস করে আসছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারকে সহায়তা ও পুনর্বাসনে বারবার দাবি জানিয়ে আসলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ তার’।

এদিকে, তিস্তার ভাঙন ঠেকাতে এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ দাবি জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি ভাঙনে দিশেহারা এলাকার মানুষ তিস্তা নদীর পাড়ে পুঠিমারী এলাকায় দাঁড়িয়ে একসঙ্গে নামাজ আদায় ও বিশেষ মোনাজাত করেন। এছাড়া ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে কচিমবাজার এলাকায় নদী পাড়ে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এটিএম মোনায়েম হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জরুরি পদক্ষেপে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ চলছে। ভাঙন রোধে তীর রক্ষায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প জমা দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। অনুমোদন হলে দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে’।

অব্যাহত নদীর ভাঙনে উদ্বিগ্ন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড তৎপর রয়েছে। বরাবরেই ভাঙন রোধে নদী তীরবর্তী এলাকায় শুধু অস্থায়ীভাবে বালুর বস্তা ফেলানোর কাজেই হয়েছে। তবে এবার ৬টি পয়েন্টে ৪১২ কোটি টাকার প্রকল্পে একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই প্রকল্প অনুমোদন হলে স্থায়ীবাঁধ নির্মাণসহ পুরো এলাকাকে সুরক্ষিত করা সম্ভব হবে’।

শুধু আশ্বাসেই নয়, ভাঙন রোধে মজবুত বাঁধ নির্মাণসহ ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে দ্রুতই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি, নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের।

কেএসটি

আরও পড়ুন