• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০১৯, ০৯:২০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৯, ২০১৯, ০৯:২০ এএম

লাল শাপলার লাল গালিচা

লাল শাপলার লাল গালিচা

বিকিবিলে কয়েক মাসের জন্য পূর্ব আকাশে সূর্যের আলোকেও হার মানায় শত সহস্র রক্তিম লাল শাপলায়। প্রথম দেখায় মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে আসবে সুন্দর যেন ফুলে ফুলে সাজানো হাওরের দেশে লাল গালিচা। মনের অজান্তেই গান ধরতে পারেন তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল, নাকি তোমার মন। প্রকৃতিতে শীতের আগমন না ঘটলেও ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বিধাতা যেন নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছে বিকিবিলের চারপাশে লাল লাল ফুলের সমারোহে লাল শাপলায়। এর সঙ্গে রয়েছে দেশীয় নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির সুর। মনে হয় যেন প্রকৃতি তার রূপের সঙ্গে নিজে বাদ্যযন্ত্রে সুরের ঝরনা ধারা ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রাকৃতিকভাবেই এই হাওরে ফুটছে আর্কষণীয় লাল শাপলা হাওরের আশপাশের পরিবেশ আর গ্রামগুলোকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে। ব্যাপারটা স্বপ্নের মতো লাগছিল। 

তা দেখতে হলে যেতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা তাহিরপুর উপজেলার ইউনিয়নের উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল গ্রামের পাশে বিকিবিল হাওরে। শুধু লাল শাপলার উৎস নয় এটি লাল শাপলার গ্রাম। লাল শাপলার বিলে ছুটে আসে স্থানীয় প্রকৃতিপ্রেমীরা। তবে এতটা পরিচিতি পায় নি টাংগুয়ার হাওর, বারেকটিলা, যাদুকাটা, শহীদ সিরাজ লেকসহ সীমান্তের কয়েকটির ছড়ার মত বাহিরের পর্যটক ও দর্শনার্থীদের কাছে। 

বর্ষার ৬ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে এ হাওরটি। আর ৬ মাস এখানে চাষ হয় এক ফসলী বোরো জমি। মাত্র কয়েক মাসের জন্য শাপলা ফুল ফুটে এখানে। সূযের্র উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে শাপলা তার আপন সৌন্দর্যকে গুটিয়ে নিয়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিথর হয় ক্লান্তি নিয়ে ঘুমাতে শুরু করে। সূর্যোদয় থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাল শাপলার সৌন্দর্য দৃশ্যমান থাকে। বিলের থেকে দেখা যায় ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য ফলে এ বিলটিকে আর্কষণীয় করে তুলেছে।

জানা যায়, বিকিবিল হাওরের ১শ কিয়ারের অধিক (৩০ শতাংশে এক কিয়ায়) জমি নিয়ে এর অবস্থান। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শাপলার উপস্থিতি দেখা যায় এ হাওরে। এখানে জন্মে লাল শাপলার পাশাপাশি সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলার। তবে এর মধ্যে নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার প্রতি আকর্ষণ সবার চেয়ে বেশি। সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা মূলত লাল শাপলার তুলনায় অপ্রতুল। অনেকে স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন হাটে বিক্রি করে থাকেন। 

হাওরের পাশের গ্রামের বাসিন্দা সমাজের সেবক মাসুক মিয়াসহ অনেকেই জানান, কোন প্রকার চাষ ছাড়াই জন্মেছে লাল শাপলাগুলো। গোটা এলাকাজুড়ে এখন লাল শাপলার অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। বর্ষার শুরুতে শাপলা জন্ম হলেও হেমন্তের শিশির ভেজা রোদ মাখা সকালের জলাশয়ে চোখ পড়লে রং-বেরংয়ের শাপলার বাহারী রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে হয় কোন এক সাজানো ফুল বাগানের মধ্যে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছি। এদৃশ্য চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। 

আশরাফুল আলম আকাশসহ স্থানীয়দের সাথে কথা বলে তারা জানান, এই হাওরে আমারও জমি আছে। বর্ষা মওসুমের শুরুতে এফুল ফোটা শুরু হয়ে প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত বিল ঝিল জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় লাল শাপলা। রান্নাবান্নার তরকারি হিসেবে ও বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সংগ্রহের কারণে সাদা শাপলার সংখ্যা দিন দিন সংকীর্ণ হচ্ছে। এই লাল সাদা সব ধরনের শাপলা ফুলের গন্ধে গোটা হাওর মুখরিত হয়ে ছড়িয়ে পরে আশপাশের গ্রামগুলোতে। ছোটদের পাশা পাশি বড়দের কাছেও লাল শাপলা ফুল একটি প্রিয় পাশাপাশি অনন্ত সৌন্দর।
তিনি আরো জানান, বর্তমান সভ্যতায় বাড়তি জনগণের চাপের কারণে আবাদি জমি ভরাট করে বাড়ি, পুকুর মাছের ঘের বানানো এবং অপরিকল্পিতভাবে জমিতে সার প্রয়োগের ফলে এ পরিমাণ যেমন কমেছে তেমনি শাপলা জন্মানোর জায়গা ও কমে আসছে।

কেএসটি

আরও পড়ুন