• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০১৯, ০৯:৪৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১০, ২০১৯, ০৯:৪৬ এএম

রাণীনগরে ১২ হাজার গবাদিপশু ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ রোগে আক্রান্ত

রাণীনগরে ১২ হাজার গবাদিপশু ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ রোগে আক্রান্ত

সম্প্রতি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় হঠাৎ করেই গবাদি পশুর ভাইরাস জনিত চর্মরোগ ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ এর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে চরম আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা। তারা বলছেন, এ রোগের সুনির্দিষ্ট প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন না থাকায় প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা আরো বাড়ছে। তবে শঙ্কিত না হয়ে খামারিদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

সূত্রে জানা গেছে, লাম্পি স্কিন ডিজিজ' রোগটি প্রথম ১৯২৯ সালে জাম্বিয়াতে দেখা দেয়। পরে আফ্রিকা মহাদেশের সর্বত্রে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে এবং ২০১৪-২০১৫ সালে আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, কাজাকিস্থানসহ আশেপাশের দেশসমূহে এ রোগ দেখা দেয়। ২০১৬ সালে গ্রীস, সাইপ্রাস, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, কসোভোসহ আশপাশের দেশসমূহে ছড়িয়ে পড়ে। 
২০১৯ সালে চীন ও ভারতে আক্রান্তের পরেই বাংলাদেশে এ রোগটি অতি সম্প্রতি প্রথম বারের মতো দেখা দেয়। এ রোগ মশা, মাছি, আটালি, আক্রান্ত পশুর লালা, নাক-চোখের ডিসচার্জ, ষাড়ের বীর্য, আক্রান্ত গরু-মহিষের দুধ এবং ব্যবহারিত ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মধ্যমে ছড়ায়। অনুকূল পরিবেশে এ ভাইরাস ছয় মাস পর্যন্ত জীবিত থাকে। ভাইরাস জনিত এ চর্মরোগে শুধুমাত্র গরু-মহিষ আক্রান্ত হয়। ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ রোগে আক্রান্ত গবাদিপশু দুর্বল হয়ে ওজন কমে যায়, দুধ উৎপাদন হ্রাস পায় এবং চামড়ার গুনগতমান নষ্ট হয়ে যায়। 

রাণীনগর উপজেলার এনায়েতপুর, কাশিমপুর, গোনাসহ আশপাশের প্রায় ১০টি গ্রামে এ পর্যন্ত ১০-১২ হাজার গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর (মূলত গরু) শরীরে ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রি তাপমাত্রার জ্বর দেখা দেয় এবং গরু খাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতস্থান থেকে মাংস খুলে পড়ে। এই রোগের চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন উপজেলার খামারি ও কৃষকরা। তবে খামারি ও কৃষকদের অভিযোগ এই রোগটি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়লেও সরকারি চিকিৎসকরা তেমন খোঁজ-খবর রাখছেন না। তাদেরকে ডাকলেও তারা সেভাবে সাড়া দিচ্ছেন না। 

এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক লেবু বলেন, বর্তমানে তার ৩টি গরু এই রোগে আক্রান্ত। হঠাৎ একদিন প্রথমে গরুর চামড়ার উপরি অংশে টিউমার জাতীয় উপসর্গ ও বসন্তের মতো গুটি গুটি দেখতে পাই। এরপর দু-একদিনের মধ্যেই গরুর শরীরজুড়েই গুটি গুটি হয়ে ঘা-এ পরিণত হয়েছে। তবে ছোট গরুর (বাছুর) অবস্থা খুবই খারাপ। গরুর গায়ের অসংখ্য গুটি গুটি ক্ষত দেখে খুব খারাপ লাগে। কিন্তু কি করবো। সরকারি হাসপাতাল থেকে কোন ওষুধই দেয় নাই। শুধু দীর্ঘ ব্যবস্থাপত্র দিয়েই ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এই রোগের চিকিৎসার ব্যয় অনেক। প্রতিদিন ৩টির গরুর জন্য প্রায় ৪হাজার টাকা ওষুধ লাগছে। কিন্তু কি করবো নিজেরা না খেয়ে গরুর চিকিৎসা করছি। কারণ এই গরু ৩টিই আমার শেষ সম্বল। 

শুধু লেবুই নয় উপজেলার ছোট ছোট খামারিরা রয়েছেন আরো দুশ্চিন্তায়। এটি ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় একটি গরু থেকে আরেকটি গরু আক্রান্ত হচ্ছে। তাই তারা চরম আতঙ্কে রয়েছে। খামারিরা তাদের সবকিছু দিয়ে গরু মোটা-তাজাকরণ করছে। প্রতিটি গরুর আনুমানিক মূল্য লক্ষাধিক টাকা। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দু-একটি গরুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাই উপজেলার সকল কৃষক ও খামারিরা এখন গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।

নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, এখন পর্যন্ত এ রোগে কোথাও গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও আমার লোকজনরা আক্রান্ত এলাকায় গিয়ে সচেতনমূলক লিফলেট বিতরণ ও কৃষক-খামারিদের পরামর্শ প্রদান করছে। সাধ্যমতো ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর এই রোগের নির্দিষ্ট কোন ওষুধ ও ভ্যাকসিন আমাদের কাছে নেই তবুও আমরা চেষ্টা করছি সম্পূরক ওষুধ দিয়ে আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা প্রদানে। তবে ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে শুধুমাত্র গরু-মহিষ আক্রান্ত হয় কিন্তু মানুষ আক্রান্ত হয় না।

কেএসটি

আরও পড়ুন