• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০১৯, ১১:০৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৩, ২০১৯, ১১:০৭ এএম

গুরুদাসপুরে ৮ মাসে ২৯ জনের আত্মহত্যা

গুরুদাসপুরে ৮ মাসে ২৯ জনের আত্মহত্যা

অপরিণত বয়সে প্রেম, বাল্য বিবাহ, মাদক, পারিবারিক কলহ, পরকীয়া, মানসিক অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় গত ৮ মাসে নারী-পুরুষসহ মোট ২৯ জন আত্মহত্যা করেছে। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নাটোর জেলার ৬টিঁ উপজেলার মধ্যে গুরুদাসপুরে আত্মহত্যার প্রবণতাটা বেশি।

গুরুদাসপুর থানা সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি ২০১৯  হতে ৯ অক্টোবর-১৯ ইং পর্যন্ত মোট ৩১টি ইউডি মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৭ জনই আত্মহত্যা করেছে। বাকি ৫ জন কেউ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট কেউ পানিতে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছে। এর মধ্যে ১৩ জন পুরুষ ও ১৪ জনই নারী। শিশু কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, যুবক পর্যন্ত ওই আত্মহত্যার তালিকায় রয়েছে। গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে ১১ জন এবং বিভিন্ন কিটনাশক বা  গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেছে ১৪ জন। 

গত ২৪ আগস্ট উপজেলার গুপিনাথপুর গ্রামে হৃদয় বিদারক একটি ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর আড়াই মাস আগে প্রেম করে বিয়ে হয় মো. হাসান (১৯) ও সপ্না (১৫) এর সাথে। আড়াই মাস খুব ভালই চলছিল সংসার। হঠাৎ করেই একদিন রাতে দুজনের মধ্যে মান অভিমানে দুজনই গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করে। অপরদিকে, উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বড় হাসমারি গ্রামে স্কুল ড্রেস পেতে দেরি হওয়ায় আত্মহত্যা করে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী রঞ্জনা খাতুন। ভাইয়ের উপর অভিমান করে আত্মহত্যা করে উপজেলার দরিহাসমারী গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী সবিতা খাতুন। বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অবস্থান। এক পর্যায়ে আত্মহত্যা করলো প্রেমিক সোহাগ। মানুসিক অসুস্থতার কারণেও আত্মহত্যার করেছে কয়েকজন। পারিবারিক কলহ, পরকীয়সহ আরো বিভিন্ন কারনে আত্মহত্যা করেছে অনান্যরা।

আত্মহত্যাকারী কয়েকটি পরিবারের সাথে সরেজমিন কথা বলে জানায়, মোবাইল ফোনের মাত্রারিক্ত ব্যবহার, এক রোখা, মানসিক ব্যাধিগ্রস্ততা, যৌতুক ,বাল্যবিবাহ, পরকিয়া, স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য, ব্যর্থতা, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলসহ নানা কারণে সংগঠিত হয় এসব আত্মহতার মত মর্মান্তিক ঘটনা।

আত্মহত্যার বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ আনারুল ইসলাম বলেন, আত্মহত্যা বন্ধ করতে হলে প্রথমে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা পরিবারের শিশু কিশোররা যদি বাবা মার সাথে ফ্রি না হয় তাহলে তাদের কষ্টগুলো শেয়ার করতে পারে না। ফলে বুকের ভিতর চাপা কষ্ট রেখেই তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বেশির ভাগ সময়ে কীটনাশক জাতীয় গ্যাস ট্যাবলেট খেয়েই আত্মহত্যা করছে তারা। বাজারে এসকল ট্যাবলেট সহজলভ্য হওয়ার কারণে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। সচেতনতামূলক কর্মসূচি দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না আত্মহত্যার মত জঘন্য এসব কাজ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তমাল হোসেন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাল্য বিয়ে, মাদক, ইভটিজিং, আত্মহত্যার বিষয়ে জনসচেতনতামূলক পোগ্রাম প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও গ্রাম এলাকায় করে থাকি। আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে প্রথমত এগিয়ে আসতে হবে প্রতিটি পরিবারকে। সন্তানদের সাথে সব সময় বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। কখনও তাদের মতের বিরুদ্ধে জোর করে কিছু করা যাবে না। কারণ কিশোর বয়সে অধিকাংশ ছেলে মেয়েরাই থাকে অত্যন্ত আবেক প্রবণ। সব সময় তাদের সাথে সহনশীল আচরণ করতে হবে। ৮০ ভাগ ভালবাসা এবং ২০ ভাগ শাসন দিয়ে সন্তানদের মানুষ করতে হবে। 

কেএসটি

আরও পড়ুন