• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০১৯, ০৯:৫৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৫, ২০১৯, ১০:০৩ এএম

পাহাড়জুড়ে জুমিয়াদের সোনালী ধান

পাহাড়জুড়ে জুমিয়াদের সোনালী ধান

বান্দরবান জেলার পাহাড়জুড়ে জুমের ধানে সবুজ পাহাড় এখন সোনালী রূপ ধারণ করেছে। পাহাড়ের ভূমিতে এই জুমকে ঘিরে যাদের স্বপ্ন, পাহাড়ের চিরচারিত প্রথা জুম চাষাবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য আদিবাসীদের এত সংগ্রাম-সংঘাত। সেই জুম পাহাড়ের জুমের পাকা ধানে আদিবাসীদের চোখে মুখে এনে দিয়েছে হাসির ঝিলিক।

পাহাড়িদের আদি পেশা জুম চাষ। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদমসহ ৭টি উপজেলায় বসবাসকারী পাহাড়ি পরিবারগুলো প্রায় সকলেই জুম চাষ করে থাকে। জেলার মারমা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, খুমী, লুসাই, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকাংশরাই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। জুমের উৎপাদিত ধান থেকে বছরের ১২ মাসের অন্তুত ৮ মাস তারা খাদ্যের জোগান মজুদ করে আদিবাসীরা। পার্বত্য জেলার আদিবাসীরা প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত পাহাড়ে জুম চাষ করে আর এর ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। 

বান্দরবানের  চিম্বুক পাড়ার জুম চাষি মেনড্রং ম্রো জানান, এ বছর আবহাওয়া ভাল থাকায় জুমের ফসল ভাল হয়েছে। নিজেদের জন্য রেখে জুমের বাকি ধান বিক্রি করে ভাল টাকাও আয় করতে পারব। 

বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ৮৮৯৫ হেক্টর জমিতে জুম ধান চাষ হয়েছে। এর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৪শ ৫৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে নিড়িখা, উফশি, পিডি, ককরো, বিনি, গেলং, কানভূই জাতের ধান। আর গত বছর জুম চাষ করা হয়েছিল ৮৪৫৮ হেক্টর জমিতে সে হিসেবে এ বছর পাহাড়ে ৪৩৭ হেক্টর জমিতে জুম চাষ বেড়েছে। 

প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে শুরু হয় জুমে ধান লাগানোর প্রক্রিয়া। প্রায় ৩-৪ মাস পরিচর্যার পর সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিক থেকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করে জুমিয়ারা আর শেষ হয় অক্টোবর মাসে। তাই জুমের ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে জুমিয়া পরিবারগুলো। শিশু কিশোরসহ পরিবারের কেউই বসে নেই ঘরে। পরিবারের সবাই জুমের ধান কাটতে নেমেছে পাহাড়ে। 

চিম্বুক এলাকার জুম চাষি থংপ্রে ম্রো বলেন, জুমের ফলন ভাল হওয়ায় খুব খুশি লাগছে পরিশ্রমও স্বার্থক হয়েছে। সারা বছর শান্তিতে খেতে পারব। 

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিরা জুমে ধানের পাশাপাশি ভুট্টা, মরিচ, যব, সরিষা, মিষ্টি ও চাল কুমড়া, চিনার, বেগুন, কাকন ধান, মারপা, তিল, পুঁই ও টকপাতাসহ হরেক রকমের শাক সবজি চাষ করেছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার জুমে রেকর্ড পরিমাণ জুম চাষ হয়েছে। 

জেলার জুমিয়া পরিবারগুলো প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে জুম চাষের জন্য পাহাড়ে আগুন দেয়। আর মে-জুন মাসের দিকে আগুনে পোড়ানো পাহাড়ে জুম চাষ শুরু করে। 

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক ড. একে এম নাজমুল হক বলেন, জুমে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের ধানের ফলন বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃষি গবেষণা এবং কৃষি অধিদপ্তর কাজ করছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জুম চাষ করা হলে তাদের আর্থ-সামজিক উন্নয়নসহ আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে এবং সারা বছরের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। 

কেএসটি

আরও পড়ুন