• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ০৮:৪৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ০৯:৩৪ পিএম

বিজিবি-বিএসএফ গুলি বিনিময়

এক বিএসএফ সৈন্য নিহত, বিজিবি বলছে তথ্য প্রমাণ পায়নি

এক বিএসএফ সৈন্য নিহত, বিজিবি বলছে তথ্য প্রমাণ পায়নি

রাজশাহী সীমান্ত

...................

রাজশাহীতে পদ্মা নদীর বাংলাদেশ সীমান্তের মধ্যে প্রবেশ করে ইলিশ ধরার সময় ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। জেলেকে আটকে রাখাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় বড়াল নদীর পদ্মার মোহনায় এ ঘটনা ঘটে।

ওই গোলাগুলিতে এক বিএসএফ জওয়ান নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে একাধিক বিদেশি গণমাধ্যম। তবে সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত বিজিবির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য পাওয়া যায় নি। 

বিবিসি, এনডিটিভি, জিনিউজ ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির চর পাইকমারির জিরো পয়েন্টে বিএসএফ-বিজিবির মধ্যে গোলাগুলি হয়। গুলিতে নিহত হন বিএসএফ জওয়ান বিজয়ভান সিং। এ ঘটনায় আহত জওয়ানের নাম রাজবীর সিং। তিনি বিএসএফ’র হেড কনস্টেবল। বর্তমানে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

বিএসএফ’র বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানায়, বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্তে পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া কয়েকজন ভারতীয় মৎসজীবীকে বিজিবি আটকে রেখেছে, এই অভিযোগ পেয়ে তারা যখন পতাকা বৈঠক করতে বিজিবি’র চৌকিতে গিয়েছিল, তারপরেই ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে বিজিবির রাজশাহীর-১ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পরিচালক মেজর আসিফ বুলবুল গণমাধ্যমকে জানান, ভারতীয় একজন জেলে তাদের কাছে আটক রয়েছে। বিকেল ৪টার দিকে বিজিবি ও বিএফএফ কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক ডাকা হয়েছে। তার পরই বিস্তারিত বলা যাবে। তারপর থেকে বিজিবির কোনও কর্মকর্তা ফোন ধরেন নি।

এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমিত কুমার জানান, বিকেল ৪টার বৈঠক এক ঘণ্টা বিএসএফ পিছিয়ে দিয়েছে। বিএসএফের একজন জওয়ান মারা গেছে বলে তারা এই বৈঠক পিছিয়ে দেয়। তবে তারা ৫টা ৪০ মিনিটে পতাকা বৈঠকে উপস্থিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

পদ্মায় মাছ ধরা প্রতিরোধ অভিযানে থাকা চারঘাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রজনন মৌসুমের জন্য এখন নদীতে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ অবস্থায় জেলেরা যেন নদীতে ইলিশ শিকার করতে না পারে সে জন্য বিজিবি সদস্যদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে নদীতে অভিযানে যায়। তারা দেখেন, পদ্মা-বড়ালের মোহনায় বাংলাদেশের সীমানার ভেতর একটি  নৌকায় করে তিনজন ভারতীয় জেলে ইলিশ শিকার করছেন।

আরিফুল ইসলাম বলেন, তারা গিয়ে ভারতীয় জেলেদের আটকের চেষ্টা করেন। এ সময় দুজন পালিয়ে যান। আরেকজনকে আটক করা সম্ভব হয়। এ সময় পালিয়ে যাওয়া জেলেরা গিয়ে বিএসএফকে বিষয়টি অবহিত করে। বিএসএফ সদস্যরা এসেই গালাগাল শুরু করে দেয়। পরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। বিজিবিও এর প্রতিবাদ জানিয়ে গুলি ছোড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েক রাউন্ড গোলাগুলি হয়। একপর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা পিছু হটে।

আরিফুল ইসলাম আরও বলেন, এ ঘটনার পর প্রণব মণ্ডল নামের একজন ভারতীয় জেলেকে আটক করে বিজিবির চারঘাট করিডর সীমান্ত ফাঁড়িতে আনা হয়। জব্দ করা হয়েছে তার ইলিশ শিকারের জালও।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘রাজশাহীর পদ্মা নদীর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলিতে এক ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী নিহত হয়েছেন বলে সে দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে রাজশাহী জেলা বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট কর্নেল ফেরদৌস মাহমুদ বিবিসিকে জানিয়েছেন, বিএসএফের সৈন্য নিহত হবার কোন তথ্য প্রমাণ পায় নি বিজিবি।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বলছে, বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্তে পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া কয়েকজন ভারতীয় মৎসজীবিকে বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ বা বিজিবি আটকে রেখেছে, এই অভিযোগ পেয়ে তারা যখন পতাকা বৈঠক করতে বিজিবি’র চৌকিতে গিয়েছিল, তারপরেই ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয়।

বিএসএফ’র দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের ডিআইজি এসএস গুলেরিয়া জানিয়েছেন,  সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বাহিনীর পাঁচ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে পোস্ট কমান্ডার বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠক করতে যান।

বৈঠকের পরেও আটক ভারতীয় মৎসজীবিকে ছাড়তে রাজি হয় নি এবং বিএসএফ’র সদস্যদের ঘিরে ফেলতে শুরু করে বিজিবি সদস্যরা।

গুলেরিয়া বলেন, পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে দেখে বিএসএফ দল যখন স্পিডবোটে ফিরে আসছিল, তখন হঠাৎই বিজিবি সদস্যরা গুলি চালায়।

এ ব্যপারে রাজশাহী জেলা বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট কর্নেল ফেরদৌস মাহমুদ বিবিসিকে জানান, দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিএসএফ দাবি করেছে তাদের একজন সৈন্য নিহত হয়েছে। কিন্তু আমরা এর কোনও তথ্য প্রমাণ পাই নি। এখন দুই দেশই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবে।

ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ওই গোলাগুলিতে হেড কনস্টেবল বিজয়ভান সিংয়ের মাথায় গুলি লাগে, আর হাতে গুলি লাগে নৌকাচালকের। মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই বিজয়ভান সিং মারা যান বলে তারা জানান। এই ঘটনার পরে বিএসএফ বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সেখানে গিয়েছেন। বিজিবি এবং বিএসএফ-এর মহাপরিচালকদের মধ্যে ফোনে কথাও হয়েছে বলে জানা গেছে।

এই প্রসঙ্গে বিএসএফ’র অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি সলিল কুমার মিত্র বিবিসি বাংলাকে বলেন, এটা অভূতপূর্ব ঘটনা। এর আগে কখনও পতাকা বৈঠকের সময়ে গুলি চালানোর ইতিহাস নেই। পতাকা বৈঠক মানেই দুই বাহিনীর সম্মতি নিয়ে আলোচনা। সেখানে কেন বিজিবি গুলি চালালো, এটাই স্পষ্ট নয়। এরকম ঘটনা অনভিপ্রেত।’

বিজিবি কর্মকর্তা মাহমুদ জানান, সীমান্তে এখন কোনও উত্তেজনা নেই, তবে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

এসএমএম

আরও পড়ুন