• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০১৯, ০৮:৩১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৪, ২০১৯, ০৮:৩১ এএম

বগুড়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীদের ম্যাজিক

বগুড়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীদের ম্যাজিক

‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে’ কথাটির সাথে যথার্ত মিল রয়েছে। বিশেষ করে বগুড়া অঞ্চলের নারীদের ক্ষেত্রে। পল্লী জনপদের নারীরা অভাবের সাথে যুদ্ধ করে, শত প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে অনেকে আজ স্বাবলম্বী। সংসারের কাজের ফাঁকে তারাও হাত বাড়াচ্ছে পুরুষদের সহায়তায়। এ জেলায় সর্ব কর্মযজ্ঞে তাদের অংশগ্রহণ যেন নতুন মাত্রা। 

নারীরা আজ পুরুষের কাতারে দাঁড়িয়ে শ্রম দিচ্ছে সমান তালে। এতে করে শুধু সংসারেই নয়, দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এ জেলার অর্থনীতির গতি। বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের ‘গ্রাম-শহর সমান উন্নতি’ নীতির কারণে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন, অবদান রাখছেন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে। তাদেরই একজন বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের বামিহাল চৌমুহনী গ্রামের মনিরুজ্জামানের স্ত্রী সুরভি আক্তার। পুরো সংসারের কাজ শেষ করে অবসরে বসে না থেকে নিজেই স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। আজ তা বাস্তব। 

সুরভি আক্তার বলেন, শিক্ষার সনদ নিয়ে চাকরি নামের সোনার হরিণের পিছনে ছুটে চলে কান্ত প্রায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। গত কয়েক বছর ধরে স্বামী মাছ চাষ করে কোনমত সংসার চালাচ্ছিল। ২ বছর আগে মাছ চাষে বড় ধরনের লোকশান গুনতে হয় তাকে। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়ে যেত আমাদের পরিবারে। প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁস ও দেশি মুরগীর খামার শুরু করি। সফলতার বিকিরণে আলোকিত হতে থাকে আমার নিজের পরিবার, আসে আর্থিক সচ্ছলতা, সাবলম্বিতা আর পরিবারে স্থাপিত হয় সিদ্ধান্ত দেয়ার অধিকার। এখন সব মিলিয়ে ৯টি দেশি মুরগির সেড স্থাপন করেছে সে। আর এগুলো সবচেয়ে কম খরচে পরিবেশ বান্ধব টেকসই সেড। যেখানে ঘর নির্মাণে খরচ হত ২-৩ লাখ টাকা সেখানে ৩০-৪০ হাজার টাকায় সেড স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খামারটিতে বিশাল সংগ্রহশালা। এখন সেখানে ২ হাজার ৫শ টি দেশি মুরগি ও ১ হাজার হাঁস পালন করছে। যা থেকে প্রায় প্রতিদিন ১২শ দেশি মুরগির ডিম উৎপাদন হচ্ছে। 

সুরভি আক্তার আরো জানান, আমার প্রতি মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মত আর্থিক আয়। আর এখন আমরা দুজনসহ খামারে আরো দুইজন মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। আমার একটি মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে, আরেকটি মেয়ে কলেজে পড়াশোনা করছে। আমার সংসারের সম্পূর্ণ খরচ চলে এই খামার থেকে।

জানা যায়, বিগত ৩-৪ বছরে জেলার শেরপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতায় উপজেলার সর্বস্তরে গড়ে উঠেছে গরু, ছাগল, ভেড়া, হাস ও দেশি মুরগির অনেক খামার। যেমন- ঘোলাগাড়ি কলেনী গ্রামের মজিদা এক ছাগল থেকে ৪০টি ছাগল ও ৫টি গরু, ১শ ২টি দেশি মুরগি, উচরং গ্রামের তামান্না আঁখি ১৮টি গরু পালন করেন আধুনিক খামার স্থাপন করেছেন সেখানে ২ জনের কর্মসংস্থান, তালপুকুড়িয়ার রাজ বিথি খাতুন ২৬টি গরু, কাশিয়াবালা গ্রামের নাছিমা ৬টি গরু, লক্ষিখোলা গ্রামের তাসলিমা খাতুনের ১৪ ছাগল, চকপাথালিয়া গ্রামের নাদিরা বেগম ৬টি গরু পালন করছে এছাড়াও উপজেলায় রয়েছে প্রায় ৬০/৭০ জন নারী খামারী পালন করছে গরু, হাঁস, মুরগী ছাগল, ভেড়া। আর এরফলে নারীরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন আবার গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হচ্ছে।

শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ডা. মো. আমির হামজা বলেন, প্রাণিসম্পদের দুয়ার সকলের জন্য খোলা। প্রয়োজনের তাগিদে খামারিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা বিনামুল্যে চিকিৎসা প্রদান করে আসছি। আর এ কারণে উপজেলায় বর্তমানে গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগী পালনের পাশাপাশি অনেক শাক-সবজি চাষ অথবা পুকুরে মাছ চাষ করছেন। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী বলেন বলেন, আগে নারীরা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য গ্রাম থেকে শহরে চলে আসত। এর মূল কারণ ছিল গার্মেন্টস শিল্প। মূলত নারীরা শহরেই আসত এসব পোশাক কারখানায় চাকরি করে নিজের খরচ চালানোর জন্য। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করতে চায় এই সরকার। এজন্য নেয়া হয়েছে বেশ কিছু উদ্যোগ। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে বর্তমান সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পে আগ্রহী হয়ে এখন অধিকাংশ বাড়িতেই গড়ে উঠেছে খামার এতে সাবলম্বী হচ্ছেন বাড়ির মেয়েরাই বেশি।

কেএসটি

আরও পড়ুন