• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০১৯, ০৯:০৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৪, ২০১৯, ০৯:০৭ এএম

দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হলে কিছুটা শান্তি পাবো : নুসরাতের  ভাই

দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হলে কিছুটা শান্তি পাবো : নুসরাতের  ভাই

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায়ের অপেক্ষায় তার পরিবার। চার মাসের বিচারিক কার্যক্রম শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত রায়ের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দিন ধার্য করেন। নুসরাতের পরিবার চায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও মামলার প্রধান আসামি সিরাজ উদ দৌলাসহ অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড।  রাষ্ট্রপক্ষের আশা, ১৬ আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা দেবেন আদালত।

সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী নুসরাত গত ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে তার মায়ের শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে মামলা করেন।

নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বলেন, আমরা আপুকে ফিরে পাবো না। তবে দৃষ্টান্তমূলক সাজা হলে কিছুটা শান্ত্বনা পাবো। আপুর আত্মা শান্তি পাবে।

মামলার বাদী নোমান বলেন, অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়- এটা প্রমাণ হোক। রাষ্ট্র বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে দেশবাসীকে জানিয়ে দিক অপরাধ করে কেউ বাঁচতে পারবে না।

এদিকে, নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে মারার আলোচিত ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ বৃহস্পতিবার। রায়কে ঘিরে নানা হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের। আসামি পক্ষের লোকজন ভয়ভীতি দেখিয়ে বলছেন, রায় বিপক্ষে গেলে নুসরাতের পরিবারে বাতি জ্বালানোর মতো কাউকে রাখা হবে না। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার এসব কথা জানিয়েছেন। এ জন্য পুরো পরিবার নিরাপত্তা শঙ্কায় আছে বলেও জানান তিনি।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকালে ফেনীর সোনাগাজী পৌর শহরের উত্তর চরচান্দিয়ার বাড়িতে গেলে নুসরাতের মা শিরিন বলেন, ‘প্রধান আসামি সিরাজ উদ দৌলাসহ আসামি পক্ষের লোকজন হুমকি দিচ্ছে। বলছে রায় যদি তাদের স্বজনদের বিপক্ষে যায়, তবে আমাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হবে। কবর থেকে নুসরাতের মরদেহ গায়েব করার হুমকিও ‍দিচ্ছে কেউ কেউ। এই অবস্থায় আমরা বাড়তি নিরাপত্তা চাই।

হুমকি দাতাদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্দিষ্ট কারও নাম বলেননি নুসরাতের মা। তবে তিনি আশঙ্কা করে বলেন, সিরাজ উদ দৌলা জেল থেকে আমার মেয়েকে পুড়িয়ে মারার ষড়যন্ত্র করেছে। এখন তো আসামি ১৬ জন। তারা ইচ্ছা করলে আমাদের বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারে।

নুসরাতে মা শিরিন আক্তার আশা করছেন রায় তাদের পক্ষে যাবে। তিনি বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ সব আসামির ফাঁসি চাই। এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড যেন আর না হয়। আমার মতো আর কোনও মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়।

নুসরাতের বাবা এ কে এম মুসা বলেন, দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর আমাদের আস্থা আছে। আদালত নুসরাতের খুনের সঙ্গে জড়িতদের এমন শাস্তি দিক যাতে আমরা একটি শান্ত্বনা নিয়ে বাঁচতে পারি।

নুসরাত হত্যা মামলার ১৬ আসামি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহমেদ বলেন, এই  মামলায়  ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যায় জড়িত থাকার প্রমাণ দিতে পেরেছি। আশা করি আদালত থেকে নিহতের স্বজন, ন্যায় বিচার ও সন্তোষজনক রায় পাবে।

নিরাপত্তার বিষয় জানতে চাইলে ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী জানান, নুসরাতের পরিবারের নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট রয়েছে জেলা পুলিশ। সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছেন তিনজন পুলিশ সদস্য। এ নিরাপত্তার বাইরেও নুসরাতের পরিবার যেকোনও বিষয় জানালে পুলিশ সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখার জন্য তৎপর রয়েছে।

কেএসটি

আরও পড়ুন