• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০১৯, ০৯:৪৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৩, ২০১৯, ০৯:৪৪ এএম

পূর্ব সুন্দরবনে অবকাঠামোগত ও নৌযানের ক্ষতি সাড়ে ৩৯ লাখ টাকা

পূর্ব সুন্দরবনে অবকাঠামোগত ও নৌযানের ক্ষতি সাড়ে ৩৯ লাখ টাকা

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে পূর্ব সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অবকাঠামোর ও নৌযানের। কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বন্যপ্রাণীর। বনের কোথাও বন্যপ্রাণী মারা পড়া কিংবা আহত হওয়ার মত খবর নেই বনবিভাগের কাছে। এদিকে বনের গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ে কাজ চলছে। তাই আগামী দুই একদিনের মধ্যে জানা যাবে গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ। 

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় (বাগেরহাট) বন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান জানান, বুলবুলের আঘাতে চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে ৬টি আবাসিক ভবন ও ১৭টি অনাবাসিক ভবনের আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এগুলোর কোনটির চাল উড়ে গেছে, কোনটির দেয়াল ধসে পড়েছে। বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়িতে থাকা ১০টি জেটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১৯টি অন্যান্য স্থাপনারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, পল্টুন, ফুট ট্রেইলার, গ্যাংওয়ে, হরিণের খাঁচা, পাহার ঘর ও সোলার প্যানেল। ক্ষতি হয়েছে বনবিভাগের ১টি স্প্রিড বোট ও দুইটি ট্রলারের। বনবিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের ৭টি স্টেশন ও ৩৩টি টহল ফাঁড়ির অবকাঠামোগত ও নৌযানের এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার। 

ঝড়ের পর চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. শাহিন কবির ও শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্ত বনাঞ্চল এলাকা পরিদর্শন শেষে ক্ষয়ক্ষতির এ প্রতিবেদন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসানের কাছে দাখিল করেছেন। এই দুই কর্মকর্তাই আগামী দুই একদিনের মধ্যে বনের গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে দাখিলের কথা রয়েছে। 

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বঙ্গোপসাগরপাড়ের সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের জেলে পল্লীতেও কম বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চরে শুঁটকির জেলেদের গড়ে তোলা অস্থায়ী বসতঘর, মাচা ও গুদাম ঘর ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাতে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি চরের জেলেদের স্থাপনার। কারণ চরের অধিকাংশ ঘরই তৈরি সস্তা ও সহজলভ্য বাঁশ, গোলপাতা, হোগলা ও পলিথিন দিয়ে। ঝড়ে ওই সকল ঘর, মাচা, চাল, বেড়া ও পলিথিন উড়ে গেলে তা আবার ঠিক করে নিয়েছেন তারা। আর শুঁটকির মৌসুম মাত্র শুরু হওয়াতে তেমন ক্ষতি হয়নি শুঁটকি মাছের। 

গত ১ নভেম্বর থেকে দুবলার চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। চলবে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত। চরের জেলেদের জাল নৌকার ও কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কারণ এবারের ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বনবিভাগের প্রচারণা ও প্রস্তুতিও ছিল অন্যান্য দুর্যোগকালীন সময়ের তুলনায় অনেক ভাল। এছাড়া কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী আগে থেকেই দুবলার চরের জেলেদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়। জেলেরাও অধিক সতর্কতাবস্থায় থাকায় তাদের ট্রলার ও জাল দড়ির কোন ক্ষতি হয়নি। বিগত সিডর ও আইলার সময়ে সুন্দরবনে ব্যাপক প্রাণহানীর ঘটনা ঘটলেও ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে জানমালের উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। 

সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ছোট বড় সকল দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে উপকূলের জনসাধারণকে আগলে রাখছে সুন্দরবন। তাই সুন্দরবনই আমাদের রক্ষাকবজ। এই কবজের যত্ন না নিলে আমাদেরকে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই আমাদের সকলকেই যে যার অবস্থান থেকে সুন্দরবন রক্ষা করতে হবে। বিগত সিডর ও আইলায় যে প্রাণহানী ঘটেছিল যদি সুন্দরবন না থাকতে তাহলে তা আরো বেশি ভয়াবহ হতো। এবার বুলবুলের তাণ্ডব থেকে মোংলাসহ আশপাশ উপকূলের লোকজনকে বাঁচিয়েছে সুন্দরবন।

কেএসটি

আরও পড়ুন