• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০১৯, ১১:৫৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৩, ২০১৯, ১১:৫৬ এএম

ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত দক্ষিণাঞ্চলের ২ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি

ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত দক্ষিণাঞ্চলের ২ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে বরিশালের ছয় জেলায় রোপা আমন ও শীতকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান নিরুপন করতে পারেনি কৃষি বিভাগ। যদিও ঝড়ে আক্রান্ত ফসলের পরিসংখ্যান নিরুপন করেছে তারা। এ বিভাগের ৬টি জেলায় মোট ৮ লাখ ৬৫ হাজার ২৫৮ হেক্টর আবাদি জমির ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৯ হেক্টর ফসল ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে ২ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন আক্রান্ত হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় (খামারবাড়ি) এর অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. আফতাব উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ‘বরিশাল বিভাগে মোট ৮ লাখ ৬৫ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমিতে রোপা আমন, শীতকালিন সবজি এবং খেসারি ডালের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৯ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩৫৩ হেক্টর আবাদি জমির ২ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর রোপা আমন আক্রান্ত হয়েছে। ১১ হাজার ৩৪৫ হেক্টর শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছিল। যার মধ্যে ৪ হাজার ৭ হেক্টর জমির সবজি আক্রান্ত হয়েছে।

এছাড়া ৩ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে খেসারি ডালের আবাদ করা হয়। যার পুরোটাই দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। ৬ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে পান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১৫২ হেক্টর জমির পান দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। ৩ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে কলাগাছ আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ৪৬৪ হেক্টর জমির কালাগাছ ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৪৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁপে গাছ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে ৪৭৪ হেক্টর জমির পেঁপে বাগান।

এদিকে, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিভাগের ৬ জেলার মধ্যে ভোলা এবং পটুয়াখালীতে ক্ষয়ক্ষতি ও আক্রান্ত জমির পরিমাণ বেশি। এই দুটি জেলায় ঝড়ের প্রভাব বেশি ছিল। প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভোলায় রোপা আমন আবাদ হয়েছিল ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। যেখানে আক্রান্ত হয়েছে ৫৩ হাজার ৭৮৩ হেক্টর জমি।

এ জেলায় শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে। দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে ৭৪২ হেক্টর। খেসারি আবাদ হয় ৫১৮ হেক্টর জমিতে, যার পুরোটাই আক্রান্ত হয়েছে। পান আবাদ হয় ৫৩৮ হেক্টর জমিতে এর মধ্যে ৫৪ হেক্টর আক্রান্ত হয়েছে।

পটুয়াখালী জেলায় বোরো আমন আবাদ হয়েছিল ২ লাখ ২ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৫৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমি। এ জেলায় শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছিল ৬শ হেক্টর জমিতে। দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে ১৮০ হেক্টর। এই জেলায়ও খেসারি বেশি আক্রান্ত হয়েছে।

অপরদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল জেলার উপ-পরিচালক হরিদাস শিকারী জানিয়েছেন, ‘এ জেলায় রোপা আমন আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৩৩ হেক্টর জমিতে। দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে ৬২ হাজার ৩শ হেক্টর জমি। শীতকালীন শাকসবজির আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। সেখানে আক্রান্ত হয়েছে ৯৮০ হেক্টর জমি। খেসারির আবাদ হয় ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। যার শতভাগ আক্রান্ত হয়েছে। কলা ৪৬৬ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। এ থেকে আক্রান্ত হয়েছে ৭০ হেক্টর জমি, পেঁপে ৪৬৭ হেক্টর জমির মধ্যে ৭১ হেক্টর ও পান আবাদ হওয়া ২ হাজার ৬৮২ হেক্টর জমির মধ্যে থেকে ৫৩৬ হেক্টর জমির পানের বরজ আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত হওয়া ফসলের মধ্যে একমাত্র খেসারি ডালই শতভাগ আক্রান্ত হয়েছে। এমনকি আক্রান্ত হওয়া পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে অন্যান্য ফসলের ক্ষতি নিরুপন করতে আরও ২-৪ দিন সময় লাগবে। এ সময়ের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসেব তৈরি করে তা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে।

তিনি বলেন, ‘এখন শীতকালীন সবজি চাষ পুরোপুরিভাবে শুরু হয়নি। যে কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান তেমণ হবে না। আমন ধান মাঠে রয়েছে কিছুদিন বন্যা এবং জোয়ারের পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে। তাছাড়া কিছু চাষি অগ্রীম শীতকালীন সবজি চাষ করেছে। তাদেরটাই ক্ষতি হয়েছে। তাই সবজিতেও ক্ষয়ক্ষতি তেমন হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য নতুন করে কোন প্রণোদনা কার্যক্রম চালু হয়নি। বর্তমানে চালু থাকা পূর্বের প্রণোদনা কার্যক্রম থেকেই ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’এ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বীজ ও সার বিতরণ করা হবে। তবে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে সরকারি নির্দেশ পেলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাব।

কেএসটি
 

আরও পড়ুন