• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০১৯, ১২:৫২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৫, ২০১৯, ০৩:৪৬ পিএম

সিডরের ভয়াল স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে

সিডরের ভয়াল স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরের আঘাতে এভাবেই ধ্বংস্তপে পরিনত হয় উপকূল- ছবি: জাগরণ

প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভয়াল স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে উপকূলীয় এলাকায়। বাড়িঘর, গাছপালা উপড়ে লণ্ডভণ্ড করে দেয় বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রকৃতির রোষানলে প্রাণ হারিয়ে ছিলেন হাজার-হাজার মানুষ। সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল অগণিত পরিবার। স্বজনহারা মানুষের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। 

১২ বছর আগে এ দিনে সিডরের তাণ্ডবে ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাসের সঙ্গে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার পানি আঘাত হেনেছিল উপকূলীয় এলাকায়। এতে পানির চাপে পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর পাড়ের বেড়িবাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ১লাখ ৮৯ হাজার ৭৮৫টি ঘরবাড়ি। 

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায় ৩৭ হাজার ৬৪ একর জমির ফসল। সিডরের আঘাতে বরগুনায় সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ১হাজার ৩৪৫ জন, আর নিখোঁজের তালিকায় ছিল ১৫৬ জন। ভয়াবহ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়ক, নৌ, বিদ্যুৎ এবং টেলিযোগাযোগসহ সার্বিক অবকাঠামো। সিডরের আঘাতের কারণে বরগুনায় ৯০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০ কিলোমিটার। সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে প্রকৃতির এ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখে শিউরে ওঠে গোটা বিশ্ব। সাহায্যের হাত বাড়ায় দেশি-বিদেশিরা।

ওই সময় কবরের জায়গা না পাওয়ায় বরগুনা সদর উপজেলার গর্জণবুনিয়া এলাকায় সড়কের পাশে ১৯টি কবরের ২৯ জনের মৃতদেহ সমাহিত করা হয়েছিল। সম্প্রতি বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে গণকবরটিকে সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছেন। বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিচুর রহমান ২ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেছেন।

অন্যদিকে, উপমহাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এ ঝড়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। এ পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্নিঝড়। ১৯৭০ সালের ১১ নভেম্বর বুধবার সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হতে থাকে। পরদিন ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আবহাওয়া আরও খারাপ হলেই মধ্যরাতেই ফুঁসে উঠে সমুদ্র। তীব্র বেগে লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসে পাহাড় সমান উচুঁ ঢেউ। ৩০-৪০ ফুট উচুঁ সেই ঢেউ আছড়ে পড়ল লোকালয়ের উপর। আর মুহূর্তেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষ, গবাদি পশু, বাড়ি-ঘর এবং ক্ষেতের সোনালী ফসল। পথে-প্রান্তরে উন্মুক্ত আকাশের নীচে পড়েছিলো কেবল লাশ আর লাশ।  

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের সেদিন রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে কোনো কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ করে শুরু হয় ঘূর্ণিঝড়। এর আগে, কয়েকদিন ধরেই বিক্ষুব্ধ ছিল প্রকৃতি। গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপের খবর দিচ্ছিল আবহাওয়া বিভাগ। আগেরদিন বিকালে দেয়া হয় ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত। প্রশাসনের উদ্যোগে আর প্রচারণায় সাইক্লোন শেল্টারসহ বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে আশ্রায় নেয় উপকূলের মানুষ। মোটামুটি ভালোভাবেই কাটে আগের রাতটি। ঝড় হয়নি দেখে পরদিন সকালে ঘরে ফেরে সবাই। তখনও বহাল ছিল সর্বোচ্চ বিপদ সঙ্কেত। বিকালে থেকেই বাড়তে থাকে ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি। বিকাল ৫ টার পরে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় সমুদ্র থেকে উপকূলে উঠতে শুরু করে সিডর। সঙ্গে করে নিয়ে আসে ১২-১৫ ফুট উচু জলোচ্ছ্বাস। সিডর চলে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল প্রায় ১ মাস। বিচ্ছিন্ন ছিল বিদ্যুতের সংযোগও। দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থারাও যোগাযোগ না থাকার কারণে সঠিক সময় ত্রাণসহ সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেনি। এরপর দীর্ঘ বার বছর অতিবাহিত হলেও অনেকে হারানো স্বজনদের এখনো খুঁজে ফেরে। অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরে আসতে পারেনি।

প্রতিবছর উপকূলের মানুষ এ দিনটিকে সিডর দিবস হিসেবে পালন করে। সময়ের আবর্তনে বছর ঘুরে এসেছে সেই দিনটি। ১২ বছর পরও দুঃসহ সেই দিনের কথা মনে করে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন অনেকে। হারানো স্বজনের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান কেউ কেউ। স্মৃতিচারণে চাপা কান্না আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের উদ্দেশে আয়োজন করা হয় দোয়া ও মোনাজাতের। ১৫ নভেম্বর স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনাসভা ও সেমিনার। 

বরগুনা মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, সুপার সাইক্লোন সিডরে জীবিকার তাগিদে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা অনেকেই ফিরে আসতে পারেনি স্বজনদের কাছে। অনেকে চলে গেছে সাগরের অথৈ তলদেশে, সিডরের সময়ে সাগরে প্রায় ৬০টি ফিশিং ট্রলার নিখোঁজ হয়। সরকারি হিসেব মতে ৪শ ৪৯ জন জেলে নিখোঁজ হয়।

 

একেএস

আরও পড়ুন