কসবা উপজেলার মন্দবাগ স্টেশনে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেন তূর্ণা নিশীথার চালক ও গার্ডকে দায়ী করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন বিভাগীয় তদন্ত কমিটি।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান ও পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের মাধ্যমে মহাপরিচালকের কাছে এই প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়াশা ও মাটির স্তুপের জন্য স্টেশনের সিগন্যাল বাতি দেখতে পাননি বলে চালকরা যে দাবি করেছেন, তদন্তে তার সত্যতা মেলেনি। তূর্ণা নিশীথার দুই চালক এ সময় ঘুমিয়ে ছিলেন, এ বিষয়ে কমিটি নিশ্চিত হয়েছে।
এতে দুর্ঘটনার জন্য তূর্ণা নিশীথার ট্রেন চালক তাছের উদ্দিন ও সহকারী চালক অপু দেকে দায়ী করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার জন্য দায়ী করা হয়েছে গার্ড আবদুর রহমানকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে জানান, প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্ত্রী ও ডিজি ঢাকায় ব্রিফ করবেন। তার আগে এ বিষয়ে কিছুই বলা উচিত হবে না। তবে মন্দবাগ স্টেশনের বিপজ্জনক দুটি সংকেত অমান্য করে ট্রেন পার করার কারণে মঙ্গলবার ভোরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
দুর্ঘটনা তদন্তে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) মো. নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির অন্য তিন সদস্য হলে- রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মো. হামিদুর রহমান, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী ফয়েজ আহামেদ ও বিভাগীয় টেলিসংকেত প্রকৌশলী (ডিএসটিই) মো. জাহেদ আরেফিন পাটোয়ারী তন্ময়।
তদন্ত কমিটির প্রধান ডিটিও মো. নাসির উদ্দিন জানান, আজ দুপুরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। যদিও বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল। মূল প্রতিবেদনটি ছয় পৃষ্ঠার। এই কমিটি দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনের লোকোমাস্টার (চালক), গার্ড ও স্টেশন মাস্টারসহ ১৭ জনের সাক্ষ্য নেয়া নিয়েছে।
প্রতিবেদন একদিন দেরিতে দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে মো. নাসির উদ্দিন বলেন, কিছু বিষয়ে কমিটির সদস্যরা একমত হতে পারেননি। এ জন্য প্রতিবেদন দাখিল একদিন পিছিয়ে যায়।
বিভাগীয় টেলিসংকেত প্রকৌশলী জাহেদ আরেফিন পাটোয়ারী তন্ময় কিছু মতভিন্নতা সৃষ্টি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তূর্ণার চালক ও গার্ডকে দায়ী করার ব্যাপারে তিনি ইঙ্গিত দেন। তবে মূল কমিটির প্রতিবেদন আগামী সোমবার দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তার (সিওপিএস) নেতৃত্বাধীন মূল কমিটি তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি। নিখুঁতভাবে প্রতিবেদন তৈরি এবং দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে এই কমিটি আরও দুই থেকে তিনদিন সময় চেয়েছে।
আগামী রোববার বা সোমবার মূল কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন পূর্বাঞ্চলের সিওপিএস মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম।
তিনি জানান, পূর্বাঞ্চলের সিওপিএসের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের কমিটি লোকোমাস্টার, স্টেশন মাস্টার, গার্ড এবং প্রত্যক্ষদর্শীসহ ৪১ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। পূর্বাঞ্চলের প্রধান দপ্তর সিআরবিতে বুধবার দিনভর তাদের সাক্ষ্য নেয়া হয়।
এই কমিটির অন্য তিনজন সদস্য হলেন- পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী ও প্রধান সংকেত প্রকৌশলী।
পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওপিএস) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, আগামী সোমবারের আগে এ প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না। একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কেন এই দুর্ঘটনা এবং কে দায়ী তা চিহ্নিত করতে একটু সময় লাগছে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার ভোর রাত পৌনে তিনটার দিকে কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেন তূর্ণা নিশীথা এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উদয়ন এক্সপ্রেসের মাঝামাঝি তিনটি বগিতে প্রচণ্ড আঘাত হানে তূর্ণা নিশীথা। এতে ৩ শিশুসহ ১৬ জন যাত্রী নিহত এবং শতাধিক যাত্রী আহত হন। এ ঘটনায় রেল মন্ত্রণালয়, রেল ভবন ও বিভাগীয় রেলওয়ে কার্যালয় ৪টি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের একটিসহ মোট ৫টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
টিএফ