• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০১৯, ০৪:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৭, ২০১৯, ০৪:৩৪ পিএম

চট্টগ্রামে এবার ফেলে দেয়া পচা পেঁয়াজ বিক্রি

চট্টগ্রামে এবার ফেলে দেয়া পচা পেঁয়াজ বিক্রি
নদীতে ফেলে দেয়া পচা পেঁয়াজ কুড়িয়ে তুলছে খেটে খাওয়া মানুষ - ছবি : জাগরণ

চট্টগ্রামে এবার ফেলে দেয়া পচা পেঁয়াজ বিক্রি চলছে। খাল-নদী ও ময়লার ভাগাড় থেকে কুড়িয়ে রোদে শুকিয়ে এসব পেঁয়াজ বিক্রয় করছে খেটে খাওয়া মানুষ, যা খেলে জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে বলে শঙ্কা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও লিভার বিশেষজ্ঞ আবদুল কাদের বলেন, পেঁয়াজে ভিটামিন সি, বি পটাশিয়াম, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ আরও অনেক পুষ্টি উপাদান আছে। পেঁয়াজে অ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তিদের ত্বক ও চোখের লালচে ভাব, চুলকানি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, মুখের ফোলা ভাবসহ রক্তচাপ কমে যেতে পারে।

তবে পেঁয়াজের অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকর। অন্ত্রের গ্যাস, পেট ফুলে যাওয়া, ফ্রুকটোজের সমস্যাসহ অতিরিক্ত পেঁয়াজ গর্ভবতী নারীরা হৃদরোগের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। পচা পেঁয়াজে ব্যাপকহারে অ্যামোনিয়া সৃষ্টি হয়। এতে জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

পচা পেঁয়াজ কুড়িয়ে এনে শুকানো হচ্ছে  -  ছবি : জাগরণ

শুধু তা-ই নয়, পচা পেঁয়াজ কর্ণফুলীতে নিক্ষেপের ফলে অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বাড়বে। ফলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাবে। এ পরিস্থিতি যেকোনো প্রাণীকুল ও জীববৈচিত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নদী বিশেষজ্ঞ মনজুরুল কিবরিয়া।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতের আঁধারে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের ময়লার ভাগাড়, কর্ণফুলী নদী ও চাক্তাই খালে প্রচুর পরিমাণে পচা পেঁয়াজ ফেলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে একশ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষ ও টোকাইরা সাধ্যমতো কুড়িয়ে নিয়ে যায় পেঁয়াজ। অবশ্য এসব পেঁয়াজ সিটি করপোরেশনের গাড়িতে সরিয়ে নেয়া হয়।

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক আহমদ ছফা জানান, খাতুনগঞ্জের ময়লার ভাগাড় থেকে শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাত পর্যন্ত অন্তত ১৬ টন পচা পেঁয়াজ বায়েজিদ এলাকার আরেফিন নগর ময়লার ভাগাড়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এই ফাঁকে ৪-৫ টনেরও বেশি পেঁয়াজ বেছে বেছে নিয়ে গেছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। এছাড়া হামিদুল্লাহ মার্কেটের সামনের রাস্তায়, চান মিয়া বাজার ও মধ্যম চাক্তাই এলাকায় পচা পেঁয়াজ পাওয়া গেছে। সেখান থেকে চার ট্রাক সরিয়ে নিতে পেরেছি। সেখান থেকেও বেশ কিছু পেঁয়াজ কুড়িয়ে নিয়ে গেছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। এছাড়া চাক্তাই খালের পানি থেকেও পেঁয়াজ কুড়িয়ে নেয়া হয়েছে, যেগুলো রোদে শুকাতে দেখা গেছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ময়লার ভাগাড়, খাল ও নদী থেকে কুড়ানো পেঁয়াজ শুকিয়ে তুলনামূলক ভালো পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় স্থানীয় হোটেল-রেস্টুরেন্টে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। অনেকে ভ্যানগাড়িতে করে বিক্রির জন্য নগরীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও অলিগলিতে নিয়ে গেছে।

ফেলে দেয়া পচা পেঁয়াজ কুড়াচ্ছে টোকাইরা  -  ছবি : জাগরণ

নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে ভ্যানে করে পচা পেঁয়াজ বিক্রয় করছিলেন আমান উল্লাহ। তিনি বলেন, অতি মুনাফার লোভে গুদামজাত করা পেঁয়াজ পচে গেছে। ফেলে দেয়া পেঁয়াজ থেকে বেছে বেছে ভালোগুলো বিক্রি করছি অনেক কম দামে।
তিনি বলেন, আড়তের ভালো পেঁয়াজ এখন কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। সে হিসেবে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি কুড়িয়ে আনা পেঁয়াজ। দাম কম হওয়ায় ক্রেতারাও কিনছেন বলে জানান তিনি।

পেঁয়াজ কিনতে আসা গৃহিণী কামরুন নাহার বলেন, পেঁয়াজের যে দাম বাজারে, তার চেয়ে ভ্যানগাড়িতে একটু কম আছে। পেঁয়াজগুলো একটু পচা এই আর কি। পচা আর ভালো পেঁয়াজ দিয়ে কী হবে, খেতে পারলেই তো হলো!

খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিচ জানান, যেসব পেঁয়াজ ময়লার ভাগাড় ও নদীতে ফেলে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা সেগুলো মিয়ানমারের পেঁয়াজ। আনার সময় নৌকার তলায় পানি লেগে সেগুলো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা অন্তত ২০ টন পচা পেঁয়াজ ফেলে দিয়েছেন। যেগুলোতে অন্তত ২৭-২৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পচা পেঁয়াজের ক্ষতি পোষাতে ভালো পেঁয়াজগুলো কেনা খরচের চেয়েও অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এনআই

আরও পড়ুন