• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০১৯, ০৮:৪৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৯, ২০১৯, ০৮:৪৮ এএম

সাগর তীরে চলছে শুঁটকি তৈরির ধুম

সাগর তীরে চলছে শুঁটকি তৈরির ধুম

গরমের খরতাপেও হয় না। হলেও তেমন সুস্বাদু নয়। যেমনটা সুস্বাদু শীতের কড়া রোধে শুকানো শুঁটকি। তাই শীত আসার শুরুতেই চট্টগ্রামের সাগর তীরে চলছে শুঁটকি তৈরির ধুম। এরইমধ্যে আনোয়ারায় গড়ে উঠা শুঁটকিপল্লীগুলো অন্যতম। ১০-১২টি শুঁটকিপল্লী রয়েছে এ উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকত ঘিরে। যেখানে শুঁটকি তৈরিতে রাতদিন সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রে জালে ধরা পড়া নানা প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরির কাজ চলছিল আনোয়ারা উপকূলীয় গহিরা ইউনিয়নের বাচামিয়া মাঝির ঘাটের আশপাশের এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠা কয়েকটি শুঁটকিপল্লীতে। এসব পল্লীতে পুরুষের পাশাপাশি শুঁটকি তৈরির কাজ করছেন নারী শ্রমিকরাও।  

কথা হয় আনু মাঝির শুঁটকিপল্লীর শ্রমিক সুমন, মোহাম্মদ আলী, রুবেল দাশ ও লক্ষী জলদাশের সাথে। আলাপকালে তারা জানান, শুঁটকি তৈরির কাজে সাগর তীরের শতাধিক জেলে পরিবারগুলোর যেমন কর্মসংস্থান হয়েছে, তেমনি শুঁটকি ব্যবসায় লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। গত কয়েক বছর শুঁটকি তৈরির কাজে বেশ স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে জানান, শুঁটকিপল্লীর মালিক আনু মাঝি।  

তিনি বলেন, শুঁটকিপল্লীগুলোতে উৎপাদিত শুঁটকির চাহিদা বেশি। কারণ কোনো রকম রাসায়নিক ছাড়াই এখানে শুঁটকি তৈরি করা হয়। ফলে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এসব শুঁটকি এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। 
একইভাবে শুঁটকি তৈরির ধুম চলছে কর্ণফুলী নদীর চর চাক্তাই এলাকায়। সেখানেও গড়ে উঠেছে ৫-৬টি শুঁটকিপল্লী। যেখানে বাঁশের মাচায় নানা প্রজাতির মাছ ঝুলিয়ে শীতের কড়া রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরির কাজ করছে শ্রমিকরা।  

সরেজমিনে আরো দেখা যায়, চিংড়ি ছাড়াও আহরিত মাছের মধ্যে ইলিশ, কোরাল, লইট্যা, রূপচাঁদা, পাঙ্গাস, পোপা, রিকশা, ছুরি, ফাইস্যা ও চইক্যাসহ বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছের শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। এরমধ্যে চিংড়ি মাছের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। যেগুলো শুঁটকি হিসাবে স্থানীয়দের মাঝে বেশ জনপ্রিয়।
কথা হয় শুঁটকিপল্লীর মালিক চকরিয়া পেকুয়ার বাসিন্দা জমির উদ্দিন ও কামাল উদ্দিনের সাথে। জমির উদ্দিন জানান, নভেম্বর মাসের শুরু থেকে শুঁটকি শুকানোর কাজ চলছে। প্রতিদিন শত শত টন ছোট চিংড়ি মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ে। আর এসব মাছ পাইকারি ক্রয় করে শুকিয়ে চট্টগ্রামের চাক্তায় খাতুনগঞ্জে বিক্রি করা হয়।

কামাল উদ্দিন জানায়, প্রতি ১২ কেজি ওজনের এক খাঁচা মাছ শুকিয়ে তিন কেজি শুঁটকি হয়। সকালে মাছগুলো রোদে দেয়া হয়। কয়েকদিন শুকানোর পর সেগুলো শুঁটকিতে পরিণত হয়। বর্তমানে কয়েকশ ব্যবসায়ী এখানে আড়তদারের কাজ করেন। প্রতিটি আড়ত থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচশ থেকে শুরু করে এক হাজার কেজি পর্যন্ত শুকনো শুঁটকি পাইকারি বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়া হয়।

আড়তদাররা জানান, এ ব্যবসায় তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। শুঁটকিপল্লী ঘিরে শত শত শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ নারী শ্রমিক। শ্রমিকদের প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি দেয়া হয়। এর মধ্যে কেউ কেউ মাছ শুকান, আবার কেউ কেউ মাছ পরিষ্কার করেন।

আড়তদার শাহআলম জানান, এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি স্বাদে ও মানে প্রসিদ্ধ হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্থানীয় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লইট্যা ৪০০-৬০০, ফাইস্যা ৩৫০-৪৫০ টাকা, ছুরি ৭০০-১১৫০ টাকা, বড় চিংড়ি এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 
এছাড়া শুঁটকি আড়তের মাছের গুড়া পোল্ট্রি ফার্ম ও ফিস ফিডের জন্যও সরবরাহ করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্ত। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে শুঁটকি ও মৎস্য ফিড তৈরি করায় ভাল দামও মিলছে বলে জানান আড়তদাররা। 

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাগরে ধরা পড়া মাছের বিশাল ভাণ্ডারের পাশাপাশি আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর চর চাক্তায়ে বহু শুঁটকিপল্লী গড়ে উঠেছে। এ অঞ্চলের মাছ সুস্বাদু হওয়ায় এলাকার মানুষের মাঝে শুঁটকি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সেই সাথে মৎস্যকূলের জন্যও বিশুদ্ধ খাবার সরবরাহ হচ্ছে। এতে অর্থনীতির চাকা সমৃদ্ধ হচ্ছে।  

কেএসটি

আরও পড়ুন