• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০১৯, ১২:২০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৫, ২০১৯, ১২:২০ পিএম

ডিজিটাল পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চলছে ফলের দোকানে

ডিজিটাল পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চলছে ফলের দোকানে

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত আবাদপুকুর হাটে ছিল একটি শাখা পোস্ট অফিস। এই পোস্ট অফিসটির কার্যক্রম চলছিল একটি জরাজীর্ণ মাটির ঘরে। কিন্তু সেই মাটির ঘরটি ভেঙে যাওয়ায় পোস্ট অফিসটি বর্তমানে একটি ফলের দোকানে তার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। পূর্বে মাটির ঘরের পোস্ট অফিসটি ঝড়ে ভেঙে পড়ায় গ্রাহক সেবা ব্যাহত হচ্ছিল। কিন্তু জরুরি কার্যক্রম চালানোর জন্য বর্তমানে পাশের একটি ফলের দোকানে চলছে এই ডিজিটাল পোস্ট অফিসের কার্যক্রম। ফলের দোকানে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আর ভেঙে যাওয়া সেই মাটির ঘরটি এখন এলাকাবাসীর কাছে শুধুই স্মৃতি।

গত প্রায় ৩ মাস আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়ের কারণে এই ঘরটি ভেঙে পড়ায় দাপ্তরিক কাজকর্ম চলছে এখন ফলের দোকানে। গ্রাম থেকে আসা গ্রাহকরা প্রথমে এই ঘরে এসে ভাঙাচুড়া দেখে হোঁচট খেয়ে স্থানীয় দোকানিদের সহযোগিতায় পোস্ট আফিস খুঁজে পায় একটি ফলের দোকানে। 

আবাদপুকুর হাট শাখা পোস্ট অফিস হিসেবে প্রতি মাসে পায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুনজরের অভাবে প্রতিষ্ঠা কাল থেকে মাটির ঘরে কার্যক্রম চললেও ওই অফিসের সকল স্টাফ ও সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা ঝুঁকিপূর্ণ মাটির ঘরে রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল। ঘরটি ভেঙে পড়ার কারণে নির্ধারিত ভাড়ায় কোন ঘর না পাওয়ায় এক স্টাফের ফলের দোকানে চলছে এর কার্যক্রম। 

জানা গেছে, পাকিস্তান সরকারের আমলে রাণীনগর উপজেলার পূর্ব অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত বিশাল জনগোষ্ঠীর ডাক বিভাগের সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে তৎকালীন সময়ে আবাদপুকুর একটি সাব-পোস্ট অফিস স্থাপন করা হয়। এই অফিসের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসরত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় কালীগ্রাম মৌজার এক নাম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত দুই শতক জমির উপর বাঁশের বেড়া দিয়ে ছোট্ট একটি ঘর তৈরি করে পোস্ট অফিস তার গ্রাহক সেবার কাজ শুরু করে। 

দুই শতক জমি এক পর্যায়ে পোস্ট অফিসের নামেই রেকর্ডভুক্ত হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই ঘরটি কয়েক দফা ভেঙে গেলেও স্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠান প্রেমী ব্যক্তির একান্ত প্রচেষ্টায় ডাক বিভাগের সেবার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে কয়েক দফায় আর্থিক সহযোগিতায় বাঁশের ঘর থেকে মাটির দেয়াল দিয়ে ঘরটি তৈরি করা হয়। পোস্ট মাস্টার, পোস্ট ম্যান ও এক জন রানার নিরলসভাবে গ্রাহক সেবা দিয়ে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ইট দিয়ে নিজস্ব ভবন তৈরি করতে না পারায় এই পোস্ট অফিসটি রুগ্ন দশা থেকে মুক্ত পাচ্ছে না। উপজেলার কালীগ্রাম, একডালা ইউনিয়ন, বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার চাপাপুর ইউনিয়নের আংশিকসহ প্রায় ৬০টি গ্রামের বাসিন্দাদের জরুরি ডাক সেবা প্রদান করে যাচ্ছে এই অফিসটি। এরইমধ্যেই শাখাটি ডিজিটাল করণের লক্ষ্যে একটি ল্যাপটপ, প্রিন্টারসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আধুনিক জিনিসপত্র ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তবে ব্যবহারের সহজলভ্য হওয়ায় ইলেকট্রনিক ম্যানি অর্ডার (ইএমও) সার্ভিস গ্রহদের টাকা-পয়সা লেনদেনের সুবিধার্থে চালু হওয়ায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।

আবাদপুকুর পোস্ট অফিস মাস্টার এমদাদুল আলম বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পাকা ভবনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশসহ ২০১২ সালে জমির কেনার জন্য জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করলে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে আর্থিক বরাদ্দের প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেশ দিলে ফাইলটি আমি নিজে ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল বগুড়া ডিভিশনে জমা দেই। সেখান থেকে পোস্ট মাস্টার জেনারেল উত্তর অঞ্চল রাজশাহীতে প্রেরণ করলে ফাইলটি এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এরইমধ্যে ঝড়ের কারণে গত ৩ মাস আগে মাটির ঘরটি ভেঙে পড়ায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নষ্ট হলেও গ্রাহক সেবা চালু রাখার লক্ষে আমার এক অফিস স্টাফ নয়নের ফলের দোকানে কার্যক্রম চালিয়ে আসছি।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইস্রাফিল আলম বলেন, উপজেলা পূর্বাঞ্চল আবাদপুকুর বাজারে এই পোস্ট অফিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আবাদপুকুর থেকে উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। তাই আবাদপুকুর এলাকায় একটি আধুনিক মানের পোস্ট অফিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি এই পোস্ট অফিসের নতুন ভবনের জন্য জায়গা নির্বাচন করে ক্রয় করার এবং অতিদ্রুত নতুন একটি পোস্ট অফিস নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছি। এছাড়াও আমি নতুন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আবারো জানাবো। আশা করি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রুত আমলে নিবেন।

কেএসটি

আরও পড়ুন