• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০১৯, ০৮:৩৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৮, ২০১৯, ০৮:৩৬ এএম

বরিশাল মুক্ত দিবস আজ 

বরিশাল মুক্ত দিবস আজ 

বরিশাল মুক্ত দিবস আজ ৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে বরিশাল শহর থেকে পালিয়ে যায়।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় বরিশাল মুক্ত দিবস পালনে বরিশাল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ‘একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিকামী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করে।

তবে বরিশালে পাকিস্তানি বাহিনী প্রবেশ করে ২৫ এপ্রিল। ওই দিন গানবোট ও হেলিকপ্টারে করে হানাদার বাহিনীর একাধিক গ্রুপ স্টিমার ঘাট, বিসিক ও চরবাড়িয়া এলাকা দিয়ে শহরে প্রবেশ করে।

চরবাড়িয়া থেকে আসা গ্রুপটি লাকুটিয়া সড়ক ধরে শহরে আসার পথে নির্বিচারে বাঙালিদের হত্যা করে। ওই গ্রুপটি সন্ধ্যায় এসে ওঠে নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে। অন্য দুটি গ্রুপ দখল করে শহরের অশ্বিনী কুমার টাউন হল ও জিলা স্কুল। পাকিস্তানি সোনাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উঠে সার্কিট হাউসে।

২৯ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিপরীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা কলোনি দখল করে তাদের ক্যাম্প বানায়। ক্যাম্পের পশ্চিম দিকে সাগরদী খালের তীরে বাংকার তৈরি করে সশস্ত্র পাহারা বাসায় পাকিস্তানি সেনারা। 

ওয়াপদা কলোনির এ ক্যাম্প থেকেই ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও ভোলায় অপারেশন চালাত পাকিস্তানিরা। তাছাড়া ওয়াপদা কলোনির ২৫ নম্বর ভবনে শত শত বাঙালি মুক্তিকামী নারী-পুরুষকে ধরে নিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়।

ক্যাম্পের পাশ ঘেসে বয়ে যাওয়া সাগরদী খালে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিকামী মানুষের মৃতদেহ। যাদের মধ্যে শহীদ মজিবর রহমান কাঞ্চন, শহীদ আলমগীর ও শহীদ নজরুলের নাম বলতে পেরেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

এছাড়া স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আজিজুল ইসলামকে ৭১’র ৫ মে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। ওয়াপদা কলোনির পেছনে দক্ষিণ পাশে খাদ্য বিভাগের কর্মচারীরা তার মরদেহ দাফন করেন।

যেভাবে মুক্ত হলো বরিশাল

১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা থেকে বরিশালে কারফিউ জারি করেছিল পাকবাহিনী। সীমান্তে মিত্র বাহিনী আক্রমণ শুরু করার পর ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকেই পাক সেনারা বরিশাল ত্যাগের প্রস্তুতি নিতে থাকে। বরিশাল শহর কেন্দ্রিক বিভিন্ন সড়ক পথ চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় হানাদাররা নৌপথে পালাবার পরিকল্পনা করে।

এ উদ্দেশ্যে যাত্রীবাহী স্টিমার ইরানি, কিউইসহ লঞ্চ ও কার্গো বরিশাল স্টিমার ঘাটে প্রস্তুত রাখা হয়। এসব নৌযানে করেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, পাক মিলিশিয়াসহ শহরের দালাল ও রাজাকার কমান্ডাররা বরিশাল ত্যাগ করে।

পাক-সেনাবাহিনীর নৌযানগুলোর একাংশ চাঁদপুরের কাছে মেঘনা মোহনায় ভারতীয় মিত্রবাহিনীর বিমান হামলার কবলে পড়ে। তাদের কিউই জাহাজসহ গানবোট ও কার্গো ধ্বংস হয়। অপর অংশটি বরিশালের কদমতলা নদীতে ভারতীয় বিমানের বোমার আঘাতে নদীতে ধ্বংস হয়। ফলে এসব জাহাজে পলায়নরত সকল পাকসেনা, মিলিশিয়া, রাজাকার কমান্ডার ও দালাল নিহত হয়। পাক বাহিনীর শহর ত্যাগের খবরে ৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ বরিশালের মুক্তিকামী মানুষ বিজয়ের আনন্দে স্লোগান দিয়ে দলে দলে রাস্তায় নেমে আসে।

এদিকে, বরিশাল মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর বগুরা রোডে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে বিকালে আমতলার মোড় বিজয় বিহঙ্গ চত্বরে মোমবাতি প্রজ্জলন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

কেএসটি
 

আরও পড়ুন