• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০১৯, ০৮:৫৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৮, ২০১৯, ০৮:৫৮ এএম

বানারীপাড়ায় ট্রিপল মার্ডারের নেপথ্যে প্রবাসীর স্ত্রীর পরকীয়া

বানারীপাড়ায় ট্রিপল মার্ডারের নেপথ্যে প্রবাসীর স্ত্রীর পরকীয়া

বেরিয়ে আসছে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামের কুয়েত প্রবাসীর মা ও ভগ্নিপতিসহ ট্রিপল মার্ডার ঘটনার রহস্য। কুয়েত প্রবাসীর স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের কারণেই খুন হয়েছেন একই পরিবারের ওই তিন সদস্য।

আটককৃত রাজমিস্ত্রি এবং রাতে ওই ঘরে থাকা নিহতের নাতনীকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর এমন তথ্যই খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। এমনকি প্রবাসীর স্ত্রী এবং ভাতিজির দেয়া বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনই মুখ খুলতে রাজি নন তারা।

বানারীপাড়া থানা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নিহত বৃদ্ধার পুত্রবধূ ও প্রবাসী আব্দুর রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশু ও নাতনী বানারীপাড়া চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী আছিয়া আক্তারকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিকে তারা পুরো ঘটনাটি এড়িয়ে যান। কিন্তু পরবর্তীতে তারা দু’জনই ঘটনার গোপন রহস্য ফাঁস করে দেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায় প্রবাসীর স্ত্রী মিশু ও কলেজছাত্রী আছিয়া পুলিশকে জানায়, শুক্রবার রাতে রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেন ও বেটে করে দাড়িওয়ালা অপর এক ব্যক্তি তাদের ঘুম থেকে জাগায়।

এসময় মিশুকে বিবস্ত্র করে তারা। পরে জাকির হোসেন বিবস্ত্র মিশুকে জড়িয়ে ধরে অপর ব্যক্তিকে দিয়ে মোবাইল ফোনের ক্যামেরা একাধিক ছবি তোলান এবং হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মুখ খুললে ওই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় মিশুকে।

এছাড়াও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তারা দু’জন যাতে মুখ না খুলে সে জন্য জাকির এবং তার সহযোগী কোরআন শরীফ স্পর্শ করিয়ে শপথ করান। এমনকি এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কাউকে কিছু বললে জিন ও পরীদের মাধ্যমে তাদের ক্ষতি করার পাশাপাশি মিশুর দুই শিশু সন্তানের বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে হুঁশিয়ার করে।

তাছাড়া জিন-পরীর ভয় দেখিয়ে ওই পরিবারটিকে গত তিন বছর ধরে আটক হওয়া জাকির জিম্মি করে রেখেছে জানিয়ে মিশু ও আছিয়া পুলিশকে জানায়, বিয়ে হলেও আছিয়ার কখনও সন্তান হবে না এবং মিশুর লিভার রোগ সমাধানের জন্য কথিত জিনের বাদশা দাবিদার জাকির ইতিপূর্বে তাদের দু’জনকে বিভিন্ন তাবিজ-কবজ দিয়েছে।

এদিকে, নিহতদের স্বজনদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পরে পুলিশ ওই বাড়ি থেকে বিভিন্ন তাবিজ কবচ ও পাটা-পুতা উদ্ধার করেছে। তাছাড়া শুক্রবার ভোর রাত ৪টায় প্রবাসীর স্ত্রী মিশু তার ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্ট থেকে কথিত জিনের বাদশা জাকির হোসেনের কাছে ৫ হাজার টাকা পাঠান। এ কারণে জাকিরের সঙ্গে প্রবাসীর স্ত্রীর পরকীয়ার সম্পর্কের বিষয়টি সামনে উঠে আসে।

যদিও হত্যাকাণ্ডের রহস্য সম্পর্কে কোন মন্তব্য না করে বরিশাল জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যই সন্দেহের মধ্যে রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হবে। তাছাড়া আলোচনায় থাকা জাকির হোসেনকে ওই বাড়ি থেকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে সে এখনো মুখ খোলেনি।

জাকির দাবি করেছে ঘটনার রাতে সে বরিশাল নগরীর সাগরদী এলাকায় তার ভাগ্নে তরিকুলের বাসায় ছিলেন। কিন্তু তরিকুল জানিয়েছে সে ঘটনার রাতে তার বাড়িতে ছিলেন না।

নিহতদের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, আটককৃত জাকির হোসেন প্রবাসী আব্দুর রব এর বাড়ি নির্মাণের সময় রাজমিস্ত্রী হিসেবে কাজ করেছে। সে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার পূর্ব রায়পাশা গ্রামের চুন্নু হাওলাদারের ছেলে।

রাজমিস্ত্রি কাজ করা অবস্থায় প্রবাসী রবের পরিবারের সঙ্গে সু-সম্পর্ক হয়। এর পরপরই স্বামীর অনুপস্থিতিতে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় স্ত্রী মিশু। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রবের ভাতিজী আছিয়া আক্তারের কি সম্পর্ক রয়েছে সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোরে বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর গ্রামের হাওলাদার বাড়ির বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আ. রবের বাসা থেকে তার বৃদ্ধা মা মরিয়ম বেগম (৭৫), বেড়াতে আসা ভগ্নিপতি সাবেক শিক্ষক সফিকুল আলম (৬৫) ও বাড়ির পুকুর থেকে খালাতো ভাই ইউসুফের (২২) হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়।


কেএসটি

আরও পড়ুন