• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ১০:৪৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ১০:৪৫ এএম

চলছে আলু রোপণের মহোৎসব

চলছে আলু রোপণের মহোৎসব

মুন্সীগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আলু রোপণের মহোৎসব শুরু হয়েছে। কৃষকের ব্যস্ততা দেখে বোঝার উপায় নেই যে, গত তিন মৌসুমে তারা লাখ লাখ টাকার লোকসানের কবলে পড়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। বর্ষার পানি নেমে যাওযার পর নভেম্বর মাস থেকেই জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে কৃষককূল চলতি মৌসুমে আলু আবাদে নেমে পড়েছে নিজ নিজ জমিতে। 

অন্যদিকে কৃষকের জমিতে আলু আবাদে যুক্ত হয়ে জেলার বিস্তীর্ণ জমিতে আলু রোপণ করে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রায় লক্ষাধিক পুরুষ ও নারী শ্রমিক। তারা রোজ হিসেবে আবার চুক্তি হিসেবে কৃষকের জমিতে আলু রোপণ করছেন। ফলে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পেয়ে অভাব-অনটন থেকে মুক্ত হয়ে আর্থিক ভাবে সচ্ছলতার পরিবেশ ফিরে পেয়ে আলু আবাদের কাছে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। নভেম্বরে শুরু হওয়া আলু রোপণ কাজে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যস্ত থাকবে কৃষককূল ও শ্রমিকরা। একই সঙ্গে বাড়ির আঙিনায় কৃষকদের সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে বাড়ীর গৃহিণীরাও। 

সদর উপজেলার সাতানিখিল গ্রামের আইয়ুব মিয়ার স্ত্রী গৃহবধূ সাজেদা আক্তার জানান, এবারও তারা জমিতে আলু রোপণ করছেন। এ জন্য কৃষক স্বামী আইয়ুব মিয়াকে সাহায্য করতে নিজ বাড়ির উঠানে বসেই আলু বীজ কেটে দিচ্ছেন। প্রতিবেশী গৃহবধূরাও মজুরি পাওয়ায় আশায় এ কাজে যুক্ত হয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার ৭৫ থেকে ৮০ হাজার কৃষক পরিবার আলু আবাদের সঙ্গে জড়িত। তাই পরিবারগুলো এখন আলু রোপণ করে লাভের আশায় নতুন স্বপ্ন বুনছে। আলুর বাম্পার ফলন করেই আগামীর অর্থনৈতিক ভিত তৈরির স্বপ্ন দেখছেন কৃষককূল। 

বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চরকেওয়ার, বাংলাবাজার, মোল্লাকান্দি, শিলই ও আধারা, মহাকালী, বজ্রযোগিনী, রামপাল ইউনিয়নে এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আলদী, ধামারণ, কাঠাদিয়া, শিমুলিয়া, যশলং, ধীপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে এবং সিরাজদিখান, লৌহজং, গজারিয়া ও শ্রীনগর উপজেলা জুড়েও আলু রোপণ কাজে কৃষকের ব্যস্ততার দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। তাদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বিভিন্ন জেলার পুরুষ-নারী শ্রমিক ও কৃষকের পরিবারের সদস্যরাও।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু আবাদের মৌসুম এলে র রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নিলফামারী, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শ্রমিকরা রোপণ কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় এক লাখ শ্রমিক বর্তমানে কৃষকের সঙ্গে আলু রোপণ কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। 

রংপুর জেলা থেকে আগত শ্রমিক আব্বাস মিয়া জানান, কোথাও চুক্তি অনুযায়ী আবার কোথাও দিনব্যাপী মজুরি নিয়ে তারা কৃষকের জমিতে আলু রোপণ কাজ করছেন। রোপণ কাজ শেষে ফিরে যাওয়ার পর আবার আলু উত্তোলনের সময় তারা আবারও আসবেন মুন্সীগঞ্জ জেলায়। কৃষকরা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়ায় তারাও খুশি জোয়ার নিয়ে প্রখর রোদের তাপে আলু রোপণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আল মামুন জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৯ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শীতের শুরুতেই মুন্সীগঞ্জ সদর, সিরাজদীখান, লৌহজং, টঙ্গিবাড়ী, গজারিয়া ও শ্রীনগর উপজেলা বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আলু আবাদের উৎসব শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলু আবাদ হচ্ছে জেলা সদরেই। গত মৌসুমে জেলায় ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৩৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল।

কেএসটি