• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০৮:৫৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০৮:৫৫ এএম

১১ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের আকাশে ওড়ে বিজয় পতাকা

১১ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের আকাশে ওড়ে বিজয় পতাকা

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধে মুখে মুন্সীগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়েছিল আজ ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ সনের এই দিনে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণের পর থেকেই দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মুন্সীগঞ্জ জেলায়ও গর্জে উঠেছিল মুক্তিকামী জনতা। ২৯ মার্চ হরগঙ্গা কলেজের শহিদ মিনারে সংগ্রামী ছাত্র জনতার সম্মুখে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ঐ দিনেই ছাত্র জনতা মুন্সীগঞ্জ অস্ত্রাগার লুট করে এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। জেলাটি ঢাকার সন্নিকটে হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের প্রতি পাকসেনাদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি ছিল। ৭১ সালের পহেলা মে, পাকবাহিনীর সৈন্য দল ধলেশ্বরী নদী পার হয়ে শহর ও আব্দুল্লাহপুর লঞ্চঘাট দিয়ে ঢুকে পরে মুন্সীগঞ্জে।

প্রবেশের পর হানাদার বাহিনী সরকারি হরগঙ্গা কলেজে তৈরি করে তাদের প্রধান ক্যাম্প। এই ক্যাম্পে নির্যাতন-হত্যা চালাতো। হত্যা করে কলেজেরে পূর্ব পাশে বধ্যভূমিতে ফেলে রাখতো। ক্যাম্পে বসেই নীলনকশার মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, হত্যাসহ ধ্বংসযজ্ঞ চালায় পাকসেনারা। পরিশেষে জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধ যখন চারিদিকে ছড়িয়ে পরতে থাকে, ক্রমেই কোণঠাসা হতে থাকে পাক হানাদার বাহিনী। অবশেষে প্রতিটা জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত এবং কঠিন প্রতিরোধের কারণে ১০ ডিসেম্বর গভীর রাতে মুন্সীগঞ্জ থেকে হানাদার বাহিনী লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়। গাঢাকা দেয় পাকবাহিনীর দোসর রাজাকাররাও। আর ১১ ডিসেম্বর কাক ডাকা ভোরে মুন্সীগঞ্জের আকাশে ওড়ে বিজয় কেতন। মুক্ত হয় মুন্সীগঞ্জ। 

মুন্সীগঞ্জে প্রথম ১৪ নভেম্বর শত্রুমুক্ত হয় টঙ্গীবাড়ী উপজেলা। টঙ্গীবাড়ীই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম হানাদার মুক্ত হয়। ১৫ নভেম্বর হানাদার মুক্ত হয় লৌহজং উপজেলা। ১৭ নভেম্বর শ্রীনগর ও ২০ নভেম্বর সিরাজদিখান উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। গজারিয়া উপজেলা মুক্ত হয় ৯ ডিসেম্বর। গেরিলাদের সাঁড়াশি আক্রমণে ১০ ডিসেম্বর গভীর রাতে হানাদার বাহিনী লেজ গুটিয়ে মুন্সীগঞ্জ ছেড়ে পালায়।

একাত্তরে হানাদার বাহিনী মুন্সীগঞ্জে কাতারে কাতারে মানুষ হত্যা করে। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, লেখক, সংবাদকর্মী, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী, অভিনেতা, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ মুক্তিসংগ্রামে নিবেদিত মানুষদের। একাত্তর সালের ৯ মাসে ৩৬৯ বর্গমাইল আয়তনের মুন্সীগঞ্জের ৪২টি স্থানে ১৪৫টি গণহত্যা সংগঠিত হয়।

স্বাধীনতার এতো ৪৮ বছর পার হলেও জেলায় জানা অজানা বেশ কয়েকটি বধ্যভুমি এখনও রয়েছে অরক্ষিত। আর যেসব বধ্যভূমি চিহ্নিত করা হয়েছে । সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ ও নামফলক স্থাপন করা হলেও অনেক শহীদদের নাম আজও রয়েছে অজানা। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে এসব বধ্যভূমিগুলোকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

’৭১ এর দিনে মুন্সীগঞ্জ হানাদার বাহিনীমুক্ত হয়েছিল। তাই দিবসটি পালনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রশাসন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

কেএসটি

আরও পড়ুন