• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০৯:৫৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০৯:৫৩ এএম

অতঃপর বন্ধ হয়ে গেল শেবাচিমের আইসিইউ

অতঃপর বন্ধ হয়ে গেল শেবাচিমের আইসিইউ

বন্ধ হয়ে গেল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) কার্যক্রম। ১০টি ভেন্টিলেটরের মধ্যে সচল থাকা একমাত্র ভেন্টিলেটরটিও বিকল হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ওই ভেন্টিলেটরটির কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যার কারণে আইসিইউ সেবা না পেয়ে ডা. মারুফ হোসেন নয়ন নামের এক জুনিয়র চিকিৎসকের মৃত্যু বলে অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে খোদ চিকিৎসকদের মধ্যেই ক্ষোভ বিরাজ করছে।

হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, দীর্ঘ প্রতীক্ষা এবং বরিশালবাসীর আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হিসেবে ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই শেবাচিম হাসপাতালের পূর্ব পাশে রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য আইসিইউ চালু করা হয়।

১০টি আইসিইউ বেড ও ১০টি বড় আকারের ভেন্টিলেটর মেশিন, ৩টি চোট আকারের ভেন্টিলেটর মেশিন ও একটি সেন্ট্রাল মনিটর নিয়ে চালু হওয়া আইসিইউ পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত নার্সের ব্যবস্থাও করা হয়।

চিকিৎসক সংকট থাকলেও চালুর পর থেকে জোড়াতালি দিয়ে ইউনিটটিতে রোগী সেবার কার্যক্রম চলে আসছিল। কিন্তু গত দুই বছরের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র আইসিইউ’র কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেল।

ওয়ার্ডটির দায়িত্বে থাকা সেবক-সেবিকারা বলেন, ‘গত ২ অক্টোবর আইসিইউ’র নতুন নার্সিং ইনচার্জ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওইদিন তিনি ১০টির মধ্যে দুটি ভেন্টিলেটর মধ্যে ২টি সচল অবস্থায় পান। বাকি ৭টি অকেজো পাওয়া যায়। অবশিষ্ট ছিল মাত্র ১টি। ওই একটি দিয়ে এ যাবত একজন করে রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হতো। কিন্তু শেষ সম্বল ভেন্টিলেটরটিও মঙ্গলবার বিকল হয়ে গেছে।

আইসিইউ’র দায়িত্বে থাকা সহকারী অধ্যাপক ডা. নাজমুল হুদা বলেন, ‘একটি মাত্র ভেন্টিলেটর মেশিন দিয়ে আইসিইউ সেবা দেয়া হচ্ছিলো। কিন্তু ওই মেশিনটিও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে আর কাজ করছে না। এ কারণে মঙ্গলবার আইসিইউ’র অভাবে ডা. মারুফ হোসেন নয়ন নামের একজন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। নয়ন বরিশাল মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলো। তার বাড়ি ভোলায়।

ডা. নাজমুল বলেন, ‘নয়নের অ্যাজমা ছিল। এজন্য তাকে খুব দ্রুত আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটা করা সম্ভব হয়নি। তার আগেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। যা আমাদের জন্যও খুব দুঃখজনক।

তিনি বলেন, ‘ভেন্টিলেটর বিকল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অনেক আগে থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। কিন্তু গত দু’বছরেও সমস্যার কোন সমাধান দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে শেষ ভরসা একমাত্র ভেন্টিলেটরটিও বিকল হওয়ায় আইসিইউ’র কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেল।

আইসিইউ’র চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের জন্য আইসিইউ খুবই জরুরি। এখানে স্বয়ং সম্পূর্ণ আইসিইউ’র প্রয়োজন। এজন্য ইলেট্রিক ভেল্টিরেশন মেশিন, উন্নতমানের মনিটর (হার্টবিট, ব্লাড প্রেসার, ফুসফুল-লিভারের কার্যকারিতা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা) প্রয়োজন।

এর পাশাপাশি এজিবি মেশিন, ইলেক্ট্রোলাইট পর্যবেক্ষণ মেশিন, পোর্টেবল এক্সরে, পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাম, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর মেশিন ছাড়াও আইসিইউ রুম অথবা এর পাশেই ডায়ালাইসিস ফ্যাসিলিটেট রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং মেশিন, সিটি স্ক্যান, ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিন থাকা প্রয়োজন।

আইসিইউ প্রসঙ্গে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ‘১০টি ভেন্টিলেটরের মধ্যে ৯টি বিকল হওয়ার বিষয়টি আমার অবগত ছিল। এ কারণে ইতিপূর্বে ঢাকায় চিঠি দিয়ে মেশিন সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা এসে তিনটি ভেন্টিলেটর সচল করে দিয়ে যান। তা বেশিদিন টেকেনি। আবার বিকল হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরে চিঠি লেখা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে আইসিইউ’র বিষয়ে কোন সমাধান আজও আমরা পাইনি। বরং যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে আমাদের বরাদ্দও বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারনে মেশিন সচল কিংবা নতুন ভেন্টিলেটর ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। আর যে ঠিকাদার এটি সরবরাহ দিয়েছে তারাও টাকা না দেয়ায় কাজ করছে না।

ডা. বাকির হোসেন বলেন, ‘ডা. নয়নের মৃত্যুর বিষয়টিতে আমি নিজেও ব্যথিত। কেননা ও আমাদেরই ছাত্র ছিল। আমি ঢাকায় যাচ্ছি। আইসিইউ’র বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবো। তিনি বরাদ্দের ব্যবস্থা করলে আইসিইউ পুনরায় সচল হবে। আর বরাদ্দ না পেলে আমার পক্ষে কিছু করার থাকবে না।

কেএসটি
 

আরও পড়ুন