• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০২:১৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০২:৪২ পিএম

চট্টগ্রামের বাতাসে সহনীয় মাত্রার ৯ গুণ বেশি ধূলিকণা

চট্টগ্রামের বাতাসে সহনীয় মাত্রার ৯ গুণ বেশি ধূলিকণা

চট্টগ্রাম মহানগরীর বাতাসে সহনীয় মাত্রার চেয়েও ৯ গুণ বেশি ধূলিকণা রয়েছে। এমন তথ্য মিলেছে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় পরিচালিত সমীক্ষায়। এতে চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিবেশ অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

দূষণের অন্যতম উৎস হিসেবে উন্নয়নের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িকে দায়ী করা হয়েছে। দূষণের কারণে নগরীতে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। এমন মন্তব্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক (ল্যাব) মো. নূরউল্লাহ নূরী। 

তিনি বলেন, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ ১৫০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত সহনীয়। কিন্তু চলতি বছরের ২৪ নভেম্বর পরিমাপ যন্ত্রের মাধ্যমে দেখা যায় প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ধুলোর পরিমাণ নগরীর আগ্রাবাদে ৩০৯ মাইক্রোগ্রাম, একে খান মোড়ে ৪৫০ মাইক্রোগ্রাম এবং চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর অফিসের সামনে ৭০০ মাইক্রোগ্রাম। 

সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা নগরীর হেলদি ও ভিআইপি ওয়ার্ড জামালখানের। এখানে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ পাওয়া গেছে ১ হাজার ৩৪০ মাইক্রোগ্রাম। এর আগে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম মহানগরে বাতাসে ধুলিকণার পরিমাণ ছিল গড়ে ২৩২ মাইক্রোগ্রাম। ২০১৮ সালে ২৭৩ মাইক্রোগ্রাম ছিল। যা চলতি বছরে ৩৩০ মাইক্রোগ্রামের ওপরে।  

তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে বায়ু দূষণ চলছে। কিন্তু তা সঠিক হচ্ছে না। দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন অনুযায়ী কাজের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়াসহ নিয়মিত পানি ছিটানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানছে না নগরীর সেবা সংস্থাগুলো। 

তিনি আরো বলেন, সরকারি এবং বিদেশি সংস্থার অর্থায়নে বাস্তবায়িত মেগা প্রকল্পগুলোতেও পরিবেশের বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব না দেয়ায় পরিবেশের সর্বনাশ ঘটছে। অথচ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি প্রকল্প গ্রহণের শুরুতেই বিবেচনায় নেয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, জামালখান, নাসিরাবাদ, হালিশহর, টাইগারপাসসহ বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নকাজ করছে সরকারি সেবা সংস্থাগুলো। উন্নয়নকাজ করতে গিয়ে পুরো শহরই পরিণত হয়েছে ধুলোর রাজ্যে। উন্নয়ন কাজে দিনে তিনবার পানি ছিটানো কথা থাকলেও তারা এ নিয়ম মানছেন না। ফলে চট্টগ্রামের বাতাসে ধুলিকণার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ যদি শূন্য থেকে ৫০ পিপিএমের মধ্যে থাকে, তাহলে ওই বাতাসকে বায়ু মানের সূচকে (একিউআই) ভালো বলা যায়। এই মাত্রা ৫১ থেকে ১০০ পিপিএমের মধ্যে থাকলে বাতাস মধ্যম মানের। ১০১ থেকে ১৫০ পিপিএমের হলে বাতাস বিপদসীমায়। আর পিপিএম ১৫১-২০০ হলে বাতাসকে অস্বাস্থ্যকর, ২০১-৩০০ হলে খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১-৫০০ হলে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রামের পরিবেশকে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক এ প্রসঙ্গে বলেন, বায়ু দূষণের বিষয়ে সতর্ক করে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরীর সেবা সংস্থাগুলোকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এরপরও ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না উন্নয়ন সংস্থাগুলো।

তিনি বলেন, সড়কে মালামাল, ময়লার স্তুপ আর যানবাহনের ছোটাছুটিতে বাতাসে ধুলোবালির আধিক্যতা জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। যানবাহনের ধোঁয়ায় বিশুদ্ধ বাতাস হয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত। সরকারি সেবা সংস্থাগুলো পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অনুসরণ না করায় তীব্র বায়ু দূষণ হচ্ছে। 

চমেক হাসপাতালের অধ্যাপক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন খান বলেন, বায়ু দূষণে নগরীর বাতাসে বেশি মাত্রায় পিএম থাকায় মানুষের ধমনীতন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে শিশুরা। এভাবে বায়ু দূষণ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে অকাল মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে। 

কেএসটি

আরও পড়ুন