• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০৩:১১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০৩:১১ পিএম

ইটভাটাতেও নারী শ্রমিকরা মজুরি বৈষম্যের শিকার

ইটভাটাতেও নারী শ্রমিকরা মজুরি বৈষম্যের শিকার

রাজধানী ঢাকার পাশে অবস্থিত দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার ইটভাটাগুলোতেও প্রতিনিয়ত কর্মরত নারী শ্রমিকরা মজুরি বৈষম্য শিকার হচ্ছে। দরিদ্রতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ও এক শ্রেণির দালাল সামান্য মজুরিতে নারী শ্রমিকদের কাজ করাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ৯ ঘণ্টায় একজন পুরুষ শ্রমিক ৪শ টাকা আয় করলেও নারী শ্রমিকদের গড় আয় ১০ ঘণ্টায় মাত্র ২শ টাকা। এমনটায় দাবি ইটভাটায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নবাবগঞ্জের সাহেবখালী, শিকারীপাড়া, ইছামতি নদীর পাড় সংলগ্ন সাইলকা এলাকা, চালনাই মৃদ্ধাকান্দা, অন্তরপুর, মহব্বতপুর ও দোহার নবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকা ইসলামপুর খালপাড় অঞ্চলে অবস্থিত  অধিকাংশ ইটভাটায় কর্মরত নারী শ্রমিকের মজুরি খুব সামান্য। ১০ ঘণ্টা কাজ করে তারা পাচ্ছে মাত্র দেড়শ টাকা। প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠেন তারা। সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় তাদের। প্রতি হাজার ইট দু-চাকার গাড়িতে ঠেলে নিয়ে যায় মাত্র ৯৫ টাকায়। দুজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন ৩ হাজার ইট বহন করে থাকে। গড়ে ১ জন নারী শ্রমিক দেড়শ থেকে ২শ টাকা আয় করে থাকে। 

দোহার ইসলামপুর খালপাড় অঞ্চলে অবস্থিত জয়পাড়া ব্রিকে কর্মরত নারী আছমা বেগম (ছদ্ম নাম) বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জে। বর্ষা মৌসুমে ধান পানিতে ধান তলিয়ে গেছে। পরিবার পরিজন  নিয়ে খাব কি, তাই এ কাজ করি। তিনি আরো বলেন, সর্দার আমাদের নিয়ে আসছে ১৫ হাজার অগ্রিম দিয়ে। ৬ মাস কাজ করলে ৩০ হাজার টাকা পাব। এর মধ্যে খাওয়া দাওয়ার খরচ যায় চলে অনেক টাকা। 
একই ইটভাটায় কর্মরত পুরুষ শ্রমিক কালাম (ছদ্ম নাম) জানায়, ৮ ঘণ্টা কাজ করে ৪শ থেকে ৫শ টাকা আয় করেন প্রতিদিন। অথচ সালমা খাতুন তার চেয়ে ২ ঘণ্টা বেশি শারীরিক পরিশ্রম করে মাত্র দেড়শ টাকা পাচ্ছেন।

আর এভাবেই প্রভাবশালী ইটভাটা মালিক ও দালালরা প্রতিনিয়ত শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে নারী শ্রমিকদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিকারীপাড়া, চালনাই মৃদ্ধাকান্দা, অন্তরপুর, মহব্বতপুর ও কৈলাইল ইছামতি নদী সংলগ্ন সাইলকা এলাকায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি ইটভাটায় অসংখ্য নারী শ্রমিক কাজ করছে। যাদের অধিকাংশের বয়স ১০ থেকে ১৬ বছর। শিকারীপাড়া অবস্থিত একটি ইটভাটায় কর্মরত সাহেরা বয়স ১৪ বছর (ছদ্ম নাম) বলেন, আমারা অনেক মেয়ে এখানের ৬টি ইটভাটায় কাজ করি। গরিব মানুষ কি করে খাব। দিনে ১শ-দেড়শ আয় করি ভাত খাই। 

শিকারীপাড়া উত্তর বাহ্রা এলাকায় অবস্থিত এন.বি.সি ও শিকারীপাড়া চকে ডি.এন. কৈলাইল ইছামতি নদী সংলগ্ন সাইলকা জে.বি সি ইটভাটায় অসংখ্য নারী শ্রমিক কাজ করছে সামান্য মুজরিতে। এদের মধ্য বয়সী নারীসহ রয়েছে কিশোরী ও শিশু শ্রমিক। আর এসব ইটভাটায় নারীদের জন্য পৃথক টয়লেটেরও ব্যবস্থা নেই। নেই কোন ধর্মীয় ইবাদতের স্থান। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করছে অসংখ্য পরিবার। স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে নেই এসব নারী শ্রমিকদের কোন তথ্য। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইটভাটা মালিকরা নীরবে চালাছে নারী ওপর শোষণ। 

সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসোর্স ইন স্ট্র্যাটেজিক হিউম্যান রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট এন পরিচালক অধ্যাপক ড. ফারুক আহ্মদ বলেন, নারী শ্রমিকরা আমাদের দেশ ও সমাজের অংশ। তারা যাতে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে ও প্রতারিত না হয় সেই দায়িত্ব সমাজের সচেতন মানুষদের।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শাহিদুজ্জামান বলেন, অনিয়ম হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য  স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি।  

কেএসটি

আরও পড়ুন