• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯, ০৩:৪২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯, ০৪:৫৬ পিএম

ক্যালেন্ডারের পাতায় শাপলা ফুল

ক্যালেন্ডারের পাতায় শাপলা ফুল

সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর এলাকা বিস্তৃত ঝিনাইদহের খাল বিল, বাঁওড়, নদী নালা ও অন্যান্য জলাশয় থেকে শাপলা ফুল আজ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জলাশয়গুলোর চিরচেনা রূপ হারিয়ে ওষুধি ও পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ ফুলটি এখন আর আগের মত চোখে পড়ে না। সৌন্দর্যপ্রেমীদের মনে আর ক্যালেন্ডারের পাতায় স্থান করে নিয়েছে শাপলা ফুল।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহে ১৬৪১.৭৫ হেক্টর আয়তনের ১২টি নদী রয়েছে। এছাড়া, ১৫৩৫ হেক্টর আয়তনের ১০৪টি বিল, ১৮৮৯ হেক্টর আয়তনের ৩৫টি বাঁওড়, ৩৫৯.৪০ হেক্টর ৪৩টি খাল এবং ৩৪৭৩.৪৩ হেক্টর আয়তনের ২৭,৬৪৯টি পুকুরসহ মোট ৭,৪৭৯ হেক্টর জলাশয়। এই বিশাল জলাশয়ের কোনস্থানেই বর্তমানে জাতীয় শাপলা চোখে দেখা পড়ে না।

প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসকারী লোকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষাকাল এলেই জলাশায়গুলোতে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় শাপলা ফুল। কিন্তু এখন আগের মত খাল বিল, বাঁওড়, নদী নালায় পানি না থাকায় এবং ওইসব জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবার জন্য মাছ চাষ করা হচ্ছে। নানা প্রযুক্তি, কিছু প্রকার রাক্ষুসে মাছ চাষ করার কারণে গুল্ম-লতার সাথে ফুলের লতাপাতা কচি অবস্থাতেই তারা খেয়ে ফেলছে। ফলে কোন জলাশয়ে শাপলছা জন্মলেও তা অঙ্কুরের তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী মহেশপুরের যাদবপুর এলাকার বয়োবৃদ্ধ মুত্তালিব হোসেন জানান, বিলাঞ্চলের কম আয়ের অভাবী মানুষগুলো বিলের শাপলা তুলে ও মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে কোনরকম খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাদ করতো। এখন শাপলা মানুষের খাদ্যের তালিকায় সবজি হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে বিলাসী মানুষদের জন্য। 

ওই গ্রামের যুবক সাইফুল ইসলাম জানান, খাল-বিল নদী নালার জীবন চক্র। শুকনো মৌসুমে অধিকাংশ খাল-বিল শুকিয়ে আবাদি জমিতে পরিণত হচ্ছে। ফলে শুধু জাতীয় ফুল শাপলাই নয়, দেশি প্রজাতির মাছ এবং নানাপ্রকার জলজপ্রাণিও হারিয়ে যাচ্ছে। বর্ষা শেষ হলে হেমন্তের শিশির ভেজা রোদমাখা সকালে বাহারিরূপে শাপলা ফুল মহেশপুরের জলুলি, জাগুসা, যাদবপুর ও আশপাশের গ্রামের বিলগুলোতে দেখা মিললেও এমন দৃশ্য দেখতে প্রকৃতি প্রেমিরা ছুটে আসছে না এখন।

এলাকার পেশায় কবিরাজ আরেক বয়োবৃদ্ধ জানান, তিনি শুনেছেন- সাদারঙের শাপলা সবজি এবং লালরঙের শাপলা ওষুধি ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। শাপলা চুলকানি, রক্ত আমশয়, ডায়াবেটিস, বুক জ্বালাপুড়া, লিভার, ইউরিনের সমস্যা এবং নারীদের বিভিন্ন রোগ নিরাময় উপকারী। আর ছোটদের কাছে শাপলা ফুল খুবই প্রিয়। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার, জলবায়ু পুরবর্তন, অবৈধ দখলদালদের কারণে প্রভাবে সরকারি খালবিল, নদী-নালা দখলে সংকীর্ণ এখন জলাশয়। কয়েকবছর আগেও অনেকে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যও পুকুরে শাপলা ফুল তৈরি করতো, এখন সেখানে বিদেশি কার্প জাতীয় মাছ চাষের কারণে তার শাপলা ফুলের চাষ বা লালন কোনটাই হচ্ছে না। 

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজার গোপালপুরের মৎস্য চাষি জিয়াউর রহমান বলেন, এখন বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের কারণে পুকুর বা বিল লিজ নিয়ে ভালোভাবে আগাছা বা ফুল পরিষ্কার করা হচ্ছে। তাছাড়া কোন কোন জায়গায় বিদেশি কার্প জাতীয় মাছ চাষের কারণে সেখানে শাপলা জন্মালেও তা ছোট থাকতেই নষ্ট হচ্ছে বা মাছে খেয়ে ফেলছে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃপাংসু শেখর বিশ্বাস বলেন, জেলায় নদী, খাল-বিল কম। আর যেগুলো আছে সেখানেও আবার সারা বছর পানি থাকে না। তাছাড়া, অনেক জায়গা ভরাট হচ্ছে, কিছু জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে মাছও চাষ করা হচ্ছে। ফলে শাপলা জন্মানোর উপযুক্ত পরিবেশের বড়ই অভাব দেখা যাচ্ছে।

কেএসটি

আরও পড়ুন