• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯, ০৫:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯, ০৫:০৪ পিএম

সংস্কারের অভাবে বেহাল দশা ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর’

সংস্কারের অভাবে বেহাল দশা ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর’

পদ্মা নদীর পাশে গড়ে উঠা জনপদ, দোহার উপজেলার রাইপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রাম। এই গ্রামে অবস্থিত পোদ্দারবাড়ি খ্যাত ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর’টি সংস্কারে অভাবে একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে রূপান্তর হতে চলেছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় কোন দুর্ঘটনা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রিয় মানুষ ৪৮তম বিজয় দিবস উৎযাপন করতে যাচ্ছে- সেই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘরটি একটি কুচক্রী মহলের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোহারের পরিত্যক্ত এই পোদ্দারবাড়িটিতে ১৯৭১ সালে দোহার এবং নবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি (ক্যাম্প) ছিল। স্বাধীনতার পর বাড়িটিকে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। 

এ বিষয়ে কথা হয় দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাবুলের সাথে। তিনি বলেন, একাত্তরে দোহার উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা এই বাড়িটিতে সকলেই যাতায়াত করতো। দোহার উপজেলাকে পাক হানাদার মুক্ত অঞ্চল গড়তে এই বাড়িটি একটি নিরব সাক্ষী। তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটি দ্রুত সংস্কারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন। 

জয়পাড়া, লটাখোলা এলাকার বাসিন্দা, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা, মুক্তিযোদ্ধা করম আলী বলেন, দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে পরে আছে অযত্নে আর অবহেলায় এই বাড়িটি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটি সংস্কারে তিনি অনুদানও দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে এই বাড়িটির ভিতরে অবস্থান করে দোহার নবাবগঞ্জ ও মনিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা। এখান থেকে সুসংগঠিত হয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতেন বলে জানান।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটির জমি প্রায় ৫২ শতাংশ। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ইশরাশী গ্রামের মৃত আনোয়ার খান মেম্বার এই বাড়িটি লিজ নেয় এবং দীর্ঘদিন ভোগ দখল করেন। পরে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করলে তৎকালীন দোহার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল আমিন লিজ বাতিল করে ভবন ও জমি দখলমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তর করেন ও তাদের দলিলপত্র বুঝিয়ে দেন।  

জানা যায়, ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর করার ঘোষণা দেন। এবং সে অনুযায়ী অখিল পোদ্দারের বাড়িটি বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘরের নিজস্ব সম্পত্তি হিসাবে বিবেচিত।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর হিসেবে

মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষায় এই বাড়িটি দোহার নবাবগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন। সমাজের বিত্তশালীরা কেউ এগিয়ে আসলেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে পারে। গড়ে উঠতে পাড়ে একটি দর্শনীয় মুক্তিযোদ্ধাদের যাদুঘর। যা আগামী প্রজন্মকে দেশের প্রতি ভালবাসা ও দেশ প্রেমিক নাগরিক হতে সাহায্য করবে। এমটাই প্রত্যাশা দেশ প্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ভবন সংস্কারের জন্য টাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। সেই টাকার কি অবস্থা এখন জানি না।

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা আত্তার রিবা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘরের নিজস্ব সম্পত্তি এটা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হওয়ায় বিষয়টি আমরা দেখবো। ভবন সংস্কারের জন্য টাকা উঠানো বিষয় তিনি কিছু জানেন না বলেও জানান।  

কেএসটি

আরও পড়ুন