• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯, ১২:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯, ১২:৩৪ পিএম

বোয়ালমারীতে গণকবরের উপর শৌচাগার 

বোয়ালমারীতে গণকবরের উপর শৌচাগার 

মহান বিজয়ের ৪৮ বছরেও ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে অবস্থিত দুটি গণকবর চরম অবহেলা, অযত্ন, অবমাননায় পড়ে আছে। বোয়ালমারী পৌর সদরের কলেজ রোডস্থ গণকবরটির উপর গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। মালিকানা শর্তে বধ্যভূমিটির উপর বাড়ি নির্মাণকালীন শহিদদের যেসব হাড়, মাথার খুলি উঠে আছে সেগুলো সংগ্রহ করে সর্বশেষ যে স্থানে ফের সমাহিত করে সেখানেও শহিদরা শুয়ে আছে চরম অবমাননাকর পরিবেশে। কবরটির প্রাচীর ঘেঁষেই নির্মাণ করা হয়েছে এক লাগোয়া তিনটি শৌচাগার। 

বছরে একদিন শহিদদের ফুল দিয়ে স্মরণ করা হলেও সারা বছরই অবমাননার স্বীকার হচ্ছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদত বরণ করা নাম না জানা অসংখ্য শহিদ। গণকবরটির কোন প্রাচীর না থাকায় সারা বছরই গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণ শহিদ বেদীসহ পুরো এলাকাটায় ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ি বাজারে অবস্থিত গণকবরটিও। গণকবরটি স্থানীয়দের চরম উদাসিনতা আর অবহেলায় এখন প্রায় নিশ্চিহ্নের পথে। রাজাকার ও পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার দশজন শহিদের গণকবরটি চরম অবহেলা, অযত্ন, অবমাননায় এখন ঝোপঝাড় ঘেরা শৌচাগারের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। 

মহান স্বাধীনতার যুদ্ধের প্রথম দিকেই ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে রাজাকার কোটন বাহিনী ও পাক হানাদারদের হাতে নির্মমভাবে শহিদ হন দশ জন সাধারণ নাগরিক। উপজেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ি বাজার। ১৯৭১ সালের ২২ মে শনিবার, হাটবারের দিন চালানো হয় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সেদিন সবে জমতে শুরু করেছে হাট। হাটুড়িয়াদের আনাগোনা আর দোকানিরা বসেছে পশরা মেলে, এমন সময় তৎকালীন সংসদ সদস্য  এম এ ওয়াহিদ টেপু মিয়ার ছেলে, আলবদর প্রধান, কুখ্যাত রাজাকার কোটন মিয়ার আহবানে জিপে পাকা-হানাদার বাহিনীর একটি কনভয় প্রবেশ করে হাটটিতে। সাধারণ মানুষ কিছু বুঝে উঠার আগেই রাজাকারদের ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনির সাথে গর্জে ওঠে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। 

হানাদারদের এলোপাতাড়ি গুলিতে হাটের মধ্যেই লুটিয়ে পড়ে নারায়ন কুণ্ডু, নিতাই কুণ্ডু, তেল বিক্রেতা জহুরুল হক, হাশেম কাজী। মুহূর্তে খালি হয়ে যায় হাটটি। তারপর হিন্দু অধ্যুষিত বাজারটিতে বেছে বেছে হিন্দু বাড়িতে আক্রমণ চালানো হয়। হত্যা করা হয় জীবন চন্দ্র দাশ, হরিপদ মণ্ডলকে। বয়সের ভারে নূজ্যু ৯০ বছরের বৃদ্ধা কালীতারা কুণ্ডুও নির্মম হত্যাযজ্ঞের হাত থেকে বাদ পড়ে না। বিছানায় শয্যাশায়ী কালীতারা কুণ্ডুকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে অত্যাচার হত্যা করে ও বসতঘরসহ আগুনে পুড়িয়ে দেয়। হত্যা করা হয় ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধা যশোদা রানী কুণ্ডুকেও। গ্রামের সমস্ত বাড়িঘরে চালানো হয় লুটপাট আর অগ্নিসংযোগ। 

হানাদার বাহিনী লুটপাট শেষে ফিরে গেলে স্থানীয়রা শহিদদের মৃত দেহগুলো কোনমতে গর্ত খুঁড়ে সমাহিত করে। 
প্রত্যক্ষদর্শীর অভাবে অনেকটাই নিশ্চিহেৃর পথে গণকবরটি। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও স্বীকৃতি মেলেনি এই শহিদদের। তাদের স্মরণে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিস্তম্ভ বরং গণকবরটির পাশ ঘেষে নির্মাণ করা হয়েছে একটি শৌচাগার। যা শহিদের জন্য অবমাননাকর। 

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গোহাইলবাড়ি হত্যাযজ্ঞের শহিদদের স্মৃতি সংরক্ষণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে দাবি জানিয়েছেন গোহাইলবাড়ির উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আইয়ুব আলী। 

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঝোটন চন্দের দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে পৌর সদরের গণকবরটি পরিদর্শন করেছি এবং বাড়ির মালিককে শৌচাগারটি সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অচিরেই দুটি গণকবর চিহ্নিত করে স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদৎবরণকারীদের স্মরণে দুটি শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে। 

কেএসটি

আরও পড়ুন