• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯, ০২:২৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯, ০২:২৬ পিএম

বাসে যৌন হয়রানি, প্রতিবাদে শুধু চবি শিক্ষার্থীরাই 

বাসে যৌন হয়রানি, প্রতিবাদে শুধু চবি শিক্ষার্থীরাই 

চট্টগ্রামে গণপরিবহনে একের পর এক যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে প্রতিবাদ উঠছে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের মধ্য থেকেই। যদিও অন্য নারীরাও অহরহ যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। 
প্রতিবাদ উঠার কারণে গত ২০ দিনে পাঁচটি যৌন হয়রানির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায়ও এনেছে প্রশাসন। এরমধ্যে বাসচালক, সহকারী ও সুপারভাইজারসহ যাত্রীরাও রয়েছেন।   

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে কর্মজীবী হাজারো নারী, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদালয় ছাত্রী গণপরিবহনে যাতায়াত করে। এদের মধ্যে কোনো না কোনো নারী প্রতিদিন যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে অনেকে তা প্রকাশ করছে না।  

তিনি বলেন, চলন্ত বাসে যৌন হয়রানির যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে শুধু বাসচালক, সহকারী বা সুপারভাইজাররা জড়িত নয়, যাত্রীরাও জড়িত। নারী যাত্রীরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হলেও এরমধ্যে শুধুমাত্র চবির ছাত্রীরাই প্রতিবাদ করছে। 

তিনি আরো বলেন, চলন্ত বাসে যৌন হয়রানি মোকাবেলায় আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেনতনতামূলক কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করছে পুলিশ। নগরীর জিইসির মোড়, আগ্রাবাদ, মুরাদপুর, নিউমার্কেট মোড়সহ সবকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে গণপরিবহনে সচেতনতামূলক চার ধরনের স্টিকার লাগানো হয়েছে। 
স্টিকারে মায়ের পক্ষ থেকে লেখা হয়, বাবা রে, নারীদের হয়রানি করিস না। বোনের পক্ষ থেকে লেখা হয়, ভাই, বাসের নারী যাত্রীদের দিকে তাকানোর সময় আমার কথা মনে রাখবে। স্ত্রীর পক্ষ থেকে লেখা হয়-শুধু আমাকে নয়, সব নারীকে সম্মান করো। মেয়ের পক্ষ থেকে লেখা হয়েছে, আব্বা, আমিও কিন্তু একদিন একা বাসে উঠবো।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, যৌন হয়রানির বিষয়ে কোনো অভিযোগ বা তথ্য পেলেই সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়ার জন্য পুলিশের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে। ফলে প্রকাশ পাওয়া প্রতিটি যৌন হয়রানির ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। 
তিনি জানান, গত ২৭ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত চলন্ত বাসে পাঁচটি যৌন হয়রানির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এরমধ্যে ১৪ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে চলন্ত বাসে এক যাত্রীর হাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মার্কেটিং বিভাগের এক ছাত্রী সর্বশেষ যৌন হয়রানির শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেইটে ঘটনাটি ঘটার পর অন্য শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে এ ঘটনায় অভিযুক্ত জামাল উদ্দিনকে (৩৫) এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। হাটাহাজারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সম্রাট খীসা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। 

গত ১১ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর শাহ আমানত সেতুর বাকলিয়া থানার অংশে চলন্ত বাসে সিটের ফাঁক দিয়ে দুই বোনকে যৌন হয়রানি করছিল পেছনের সিটে বসা ইসমাইল হোসেন (২৫) নামে এক যাত্রী। এ সময় এক বোন চিৎকার শুরু করলে বাসের অন্য যাত্রীরা তাকে ধরে পুলিশের দেওয়ার চেষ্টা করে। 
আর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে চলন্ত বাস থেকে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে পেছন থেকে আসা অন্য বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে বলে জানান বাকলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিন। 

গত ৮ ডিসেম্বর রোববার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী ৩নং একটি বাসে যৌন হয়রানির শিকার হন চবি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেইট থেকে ওই যাত্রীকে আটক করে বাসের অন্য যাত্রী ও শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির নিকট হস্তান্তর করেন। 
সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির মাধ্যমে তাকে হাটহাজারী থানায় হস্তান্তর করা হয়। অভিযুক্ত যাত্রী মো. মানিক মিয়ার বাড়ী হাটহাজারী উপজেলার মন্দাকিনি এলাকায়। এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত মানিক মিয়াকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয় বলে জানান, হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদ আলম। 

গত ৩ ডিসেম্বর চবি লোকপ্রশাসন বিভাগের এক ছাত্রী কক্সাবাজার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের চালক ও সুপারভাইজারের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হন। এ ঘটনায় তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা এখন কারাগারে রয়েছেন। 
এর আগে গত ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে ফেরার পথে নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকায় সোহাগ পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো ব-১৫৬০৭৭) যৌন হয়রানির শিকার হন চবির মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী। 
২৮ ডিসেম্বর সকালে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নিজের টাইমলাইনে পোস্ট দেওয়ার পর জানাজানি হয় বিষয়টি। এরপর অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশ সোহাগ পরিবহনের বাসচালক এহসান করিম (২৭) ও তার সহকারী ফররুখ আহমেদ ভুট্টো (৩৫) ও সুপারভাইজার আলী আব্বাসকে (৩৫) গ্রেফতার করে। তাদের বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার হারবাং গ্রামে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর এস. এম. মনিরুল হাসান বলেন, চলন্ত বাসে যৌন হয়রানির ঘটনা অহরহ ঘটছে। কিন্তু এর প্রতিবাদ উঠছে শুধুমাত্র চবি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। ভুক্তভোগী সব নারী ও সচেতন মহলের উচিত এ বিষয়ে প্রতিবাদি হয়ে উঠা। তাহলেই চলন্ত বাসে নারীদের যৌন হয়রানির সাহস কেউ করবে না। 

কেএসটি

আরও পড়ুন