• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯, ০৪:৩৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯, ০৪:৫৭ পিএম

মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতিও রাজাকার!

মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতিও রাজাকার!
মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো. মজিবুল হক নয়া ভাই  -  ছবি : জাগরণ

যার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, আজ সেই তিনিই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় হয়ে গেলেন রাজাকার!

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম মো. মজিবুল হক, যাকে এলাকার সবাই ‘নয়া ভাই’ নামে চেনে। স্বাধীনতাসংগ্রাম কমিটির এ নেতার নাম রাজাকারের তালিকায় প্রকাশ হওয়ায় গত সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) পাথরঘাটা সরকারি কেএম মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিজয় দিবসের মঞ্চে নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে।

ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির ভাষণে পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির নিন্দা জ্ঞাপন করেন। এ সময় উপস্থিত শত শত জনতা করতালির মাধ্যমে নিন্দার পক্ষে সমর্থন জানান। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পাথরঘাটার প্রত্যন্ত গ্রামে নয়া ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আশ্রয় নিয়েছেন মুক্তিকামী মানুষও। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার সংগ্রাম কমিটির মাধ্যমে পাথরঘাটা উপজেলা রাজাকারমুক্ত হয়েছিল। স্বাধীনতার সপক্ষের সংগঠক ও মুক্তিকামী মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাকারী মজিবুল হক নয়া ভাইয়ের নাম সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় আসায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাও।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় মজিবুল হকের নাম (লাল চিহ্নিত অংশ)

এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন পাথরঘাটার মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় তারা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মজিবুল হকের নাম রাজাকারের তালিকায় আসায় এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এ সময় তালিকা থেকে তার নাম বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবি করেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাথরঘাটা শেখ রাসেল স্কয়ারে পৃথক ব্যানারে মানববন্ধন করেন মজিবুল হক পরিবারের সদস্যরা, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ও সাধারণ জনগণ। বিকেল ৪টার দিকে শেখ রাসেল স্কয়ারে এক প্রতিবাদ সভা করে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

পারিবারিক সূত্রে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন  মজিবুল হক নয়া ভাই। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থেকেছেন মজিবুল হক। মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ গঠন থেকে শুরু করে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাথরঘাটা সংগঠনের সভাপতি ছিলেন নয়া ভাই।

এ বিষয়ে মজিবুল হকের স্ত্রী নুরহাজান বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর মারা গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। সংগ্রাম পরিষদ পরিচালনা করেছেন। যুদ্ধের সময় আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী মানুষকে ভরণ-পোষণ দিয়েছেন। আজ সেই মানুষটা কী করে রাজাকার হয়?’

পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাউন্সিলের সভাপতি আ. মন্নান হাওলাদার জানান, মজিবুল হক তার জীবন-যৌবন সব আওয়ামী লীগকে দান করে গেছেন। তিনি একসময় বঙ্গবন্ধুর সাথে একই মঞ্চে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। মারা যাওয়ার এত বছর পর আবার ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন মজিবুল হক নয়া ভাই। তিনি কখনো রাজাকার ছিলেন না। ছিলেন স্বাধীনতার সংগঠক। তার নাম কী করে রাজাকারের তালিকায় এসেছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এই তালিকা কারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এনআই

আরও পড়ুন