• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২০, ০৫:২৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৬, ২০২০, ০৫:২৬ পিএম

মোবাইল ফোনের জন্য হত্যা করা হয় বিদয়কে

মোবাইল ফোনের জন্য হত্যা করা হয় বিদয়কে
বিদয় হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত সাইমিন  -  ছবি : জাগরণ

হবিগঞ্জ শহরতলীর তেঘরিয়া গ্রামের ৫ম শ্রেণির ছাত্র (১০) ইসমাইল হোসেন বিদয়কে মোবাইল ফোনের জন্য পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর এই কিলিং মিশনে ছিল প্রতিবেশী হবিগঞ্জ জেকেএন্ডএইচকে স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার মারুফ ওরফে সাইমিন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন তথ্য দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম)।

প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, ১০ জানুয়ারি উত্তর তেঘরিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী ফারুক মিয়ার ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল হোসেন বিদয় (১০) পৌদ্দার বাড়ি এলাকায় নাটক দেখার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এ সময় তার মা শাহেনা আক্তার কার সাথে যাবে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, পাশের বাড়ির নবম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার মারুফ ওরফে সাইমিনের সাথে যাবে। রাত ৮টা বেজে গেলে বিদয় বাড়িতে ফিরে না আসায় বিদয়ের মা তার চাচাদের জানালে তারা বিদয়ের সাথে থাকা মোবাইলে ফোন করলে সেটা বন্ধ পান। আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে তার মা শাহেনা আক্তার রাতেই হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় নিখোঁজের সংবাদও ছাপা হয়। বিদয়ের নিখোঁজের বিষয়টি থানা পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রাখে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা আরো জানান, ১৩ জানুয়ারি সকাল ১০টায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের চরহামুয়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খোয়াই নদীর পূর্ব পাড়ে নদীর কিনারায় পানিতে একটি মৃতদেহ স্থানীয় লোকজন ভাসমান দেখতে পান। সংবাদ পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মো. রবিউল ইসলাম (পিপিএম), হবিগঞ্জ অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুক আলী, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) দৌস মোহাম্মদসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পানি থেকে লাশ উত্তোলন করেন। পরে পরিবারের লোকজন মৃতদেহটি ইসমাইল হোসেন বিদয়ের বলে শনাক্ত করে। মৃতদেহের মাথায় একাধিক জখম পরিলক্ষিত হয়। তার মৃতদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় বিদয়ের চাচা মো. টেনু মিয়া ১৪ জানুয়ারি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুক আলী মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম (পিপিএম), তদন্তকারী অফিসারসহ পুলিশের একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত শাহরিয়ার মারুফ ওরফে সাইমনকে ওই দিনই তেঘরিয়া থেকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, সাইমনকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় তার পার্শ্ববর্তী বাড়ির নিহত ইসমাইল হোসেন বিদয়ের হাতে এক মাস আগে একটি বিদেশি ক্যামেরা মোবাইল সেট সে দেখে। মোবাইল সেটটি তার বাবা বিদেশ থেকে পাঠিয়েছেন। মোবাইল সেট নিয়ে বিদয় নদীর পাড়ে তার সহপাঠীদের ছবি তোলে। ওই মোবাইল সেটের প্রতি আসামি সায়মনের প্রচণ্ড লোভ হয়। এ কারণে সে বিদয়ের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। একপর্যায়ে ১০ জানুয়ারি বিকেলে সাইমিন বিদয়কে হবিগঞ্জ শহরের পোদ্দার বাড়ি এলাকায় নাটক দেখার জন্য প্রস্তাব দেয়। বিদয় মোবাইল সেট দিয়ে নাটকের ছবি ও ভিডিও করার পরামর্শ দেয়। এতে বিদয় রাজি হয়। সে অনুযায়ী বিকাল ৪টার দিকে তারা বাড়ির পাশে খোয়াই নদী নৌকাযোগে পার হয়ে শহরের ভাঙ্গার পুল এলাকায় যায়। সেখান থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে ধুলিয়াখাল-মিরপুর রোডে মশাজান ব্রিজের ওপর অটোরিকশা থেকে নেমে যায়। বিদয়কে নিয়ে সাইমন তার নানাবাড়ি চরহামুয়া নোয়াবাদে যাওয়ার জন্য নদীর বেড়িবাঁধ দিয়ে হেঁটে গল্প করে করে রওনা দেয়।

চরহামুয়া গ্রামের নদীর বেড়িবাঁধে গিয়ে নদীর চড়ে সবজি ও শস্যক্ষেত দেখে সায়মন বিদয়কে নদীর ধারে গিয়ে ছবি তুলতে বললে বিদয় নদীর কিনারায় যায়। নাটকের মতো অভিনয় করে সায়মন কলাগাছের ছোলা দিয়ে বিদয়ের দুই হাত সামনে দিয়ে বাঁধে, পা দুটিও বাঁধে। সাইমিন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ছবি তোলার ভান করে নদীর পাড়ে একটি বাঁশের মোড়া দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে বিদয়ের মাথায় উপর্যুপরি কয়েকটি আঘাত করে। এতে বিদয় মারাত্মক আহত হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ সময় সাইমন বিদয়কে ধাক্কা মেরে খোয়াই নদীর পানিতে ফেলে দ্রুতবেগে একই পথ দিয়ে বিদয়ের মোবাইল নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসে। মূলত বিদেশি দামি ক্যামেরা মোবাইলের মোহে সাইমিন বিদয়কে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করে।

পুলিশ সুপার বলেন, বিদয়ের মোবাইল সেটটি উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাইমিন ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন অনুতপ্ত। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম পিপিএম, ডিআই-১ কাজী কামাল উদ্দিন, হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুক আলী প্রমুখ।

এনআই

আরও পড়ুন