• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২০, ০৫:৫২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৭, ২০২০, ০৫:৫৪ পিএম

পাখির কলতানে মুখর ঐতিহ্যবাহী জবইবিল

পাখির কলতানে মুখর ঐতিহ্যবাহী জবইবিল
অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর জবইবিল - ছবি : জাগরণ

নওগাঁ জেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা উপজেলা সাপাহার। ঠাঠা বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত জেলার এই সাপাহার উপজেলা। এই উপজেলাতে উৎপাদিত সুস্বাদু আমের খ্যাতি দেশজুড়ে। বর্তমানে এই বরেন্দ্র অঞ্চলে উৎপাদিত আম জেলার ব্যান্ডিং পণ্যে পরিণত হয়েছে। এই উপজেলার আরেকটি ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান হলো জবইবিল।

শীত এলেই জবইবিল পরিযায়ী (অতিথি) পাখিসহ নানা রকমের পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে। প্রতিবছর শীত মৌসুমের শুরু থেকে সুদূর রাশিয়া, সাইবেরিয়াসহ বিশ্বের শীতপ্রধান দেশ হতে শত শত পাখি এসে ভিড় জমায় এই বিলে। এসব সুন্দর সুন্দর পাখির আগমনে জবইবিল তার নিজ সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এই অতিথি পাখিসহ নানা জাতের নানা রকমের পাখি দেখার জন্য নওগাঁ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা এই জবই বিলে এসে ভিড় জমায়।

জেলা সদর থেকে প্রায় ৬২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত সীমান্তবর্তী এই উপজেলা সাপাহার। সাপাহার উপজেলার শিরন্টি ইউনিয়নে অবস্থিত এই জবইবিল। সাপাহার উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে জবই নামক স্থানে প্রায় হাজার একর জমির ওপর অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী বিল। পর্যটকদের অবস্থানের জন্য সাপাহার সদরে রয়েছে মানসম্মত আবাসিক হোটেল। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় পথে নেই কোনো দুর্ভোগ।

বিদেশ হতে আসা পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেংজা হাঁস, বালি হাঁস, পাতি কূটসহ দেশি জাতের শামুকখোল, পানকৌড়ী, ছন্নি হাঁস বিল এলাকা মুখরিত করে তুলছে। অতীতে একশ্রেণির মানুষ অবাধে বিল হতে এসব অতিথি পাখি শিকার করে হাটবাজারে বিক্রি করত। এমনকি গত বছরও এলাকার কতিপয় ব্যক্তি এ বিল হতে বেশ কিছু পাতি সরালি হাঁস ফাঁদ পেতে ধরে বিক্রি করার সময় জবইবিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সমাজকল্যাণ সংস্থার সদস্যরা তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরে ওই পাখিশিকারিদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার কল্যাণ চৌধুরীর নিকট নিয়ে এলে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের শাস্তি প্রদান করেন।

এর পর হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কঠোরতা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্যদের জোরালো নজরদারিতে বিল এলাকায় যেকোনো ধরনের পাখি শিকার বন্ধ রয়েছে। এর ফলে বর্তমানে দেশ-বিদেশ হতে হরেক রকম পাখির আগমনে পুরো বিল এলাকা এখন পাখির কলতানে মুখর হয়ে উঠছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে ওই এলাকার কিছু উৎসাহী যুবক জবইবিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সমাজকল্যাণ সংস্থা নামে একটি সংগঠন তৈরি করে বিলে অতিথি পাখিসহ সব ধরনের পাখি শিকার বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এছাড়া বিলে কোনো কচুরিপানা না থাকলেও সরকারি ও বেসরকারিভাবে মৎস্যজীবীরা খরা মৌসুমে বিলের পানি শুকিয়ে গেলে মা মাছগুলো রক্ষায় বিলের মধ্যে বেশ কিছু এলাকায় বাঁশ কাঠ ও কিছু কচুরিপানা দিয়ে কাঠা নামের একটি করে মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলে, খরা মৌসুমে মা মাছ যাতে ওই স্থানে থাকতে পারে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান জানান, বর্তমানে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্যদের প্রচেষ্টা ও স্থানীয় মৎস্যজীবীদের তৈরিকৃত কচুরিপানার কাঠা থাকায় অতীতের মতো আবারো আস্তে আস্তে শীত মৌসুমে দেশি-বিদেশি পাখি অবাধে বিলে আসতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে বিলের বিশাল অংশে কচুরিপানা দিয়ে মাছসহ পাখিদের বড় ধরনের অভয়াশ্রম এবং বিলের দ্বীপগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে বনাঞ্চল তৈরি করলে সারা বছর বিল এলাকায় পাখিদের আনাগোনায় জবই বিল আবারো ফিরে পেত তার ঐতিহ্য ও নাব্যতা।

ইতিমধ্যে অনেক পাখিপ্রেমিক ব্যক্তি পাখির সৌন্দর্য দেখতে বিল এলাকায় এসে ভিড় জমাচ্ছে। বিলপাড়ে পর্যটকদের জন্য ঘোরাফেরা ও বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হলে ভবিষ্যতে সাপাহারের জবইবিলটি এই এলাকায় একটি পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নিতে পারে বলেও অনেক পর্যটকসহ এলাকাবাসী জানান।

নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা-সাপাহার) আসনের সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাপাহার উপজেলার জবইবিলটিকে একটি ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কল্যাণ চৌধুরী বলেন, পূর্বে জবইবিল নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকলেও সবার সার্বিক সহযোগিতায় বর্তমানে জবইবিল পর্যটকদের জন্য একটি চমৎকার বিনোদনের স্পটে পরিণত হয়েছে। তবে একটি আধুনিক মানের বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে খাদ্যমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। আশা রাখি জবইবিলকে ঘিরে গৃহীত এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হলে জবইবিল একটি আধুনিক বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হবে। এছাড়া শীত মৌসুমে এই বিলে জড়ো হওয়া অতিথি পাখিসহ নানা রকমের পাখি দেখতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

এনআই

আরও পড়ুন