• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২০, ০৫:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৮, ২০২০, ০৫:৩০ পিএম

বিএনপির প্রার্থী সুফিয়ানের অভিযোগ

চট্টগ্রামে উপনির্বাচনে ডিজিটাল জালিয়াতি করেছে ইসি

চট্টগ্রামে উপনির্বাচনে ডিজিটাল জালিয়াতি করেছে ইসি
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান  -  ছবি : জাগরণ

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোটকে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন।

নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আবু সুফিয়ান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণে অনিয়ম, কেন্দ্র দখল ও হামলার বিষয়ে ভোট গ্রহণের দিনেই রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ করা হলেও নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণ স্থগিত করেনি।

আবু সুফিয়ান বলেন, ভোট শুরুর পর থেকে ১৭০টি কেন্দ্রের সব কটি সন্ত্রাসী বাহিনীর দখলে ছিল। কিন্তু সুষ্ঠু ভোটের পক্ষে সাফাই গেয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটাধিকার হরণের প্রতিষ্ঠান।

নির্বাচনের দিন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে আবু সুফিয়ান বলেন, ১৫টি কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকের প্রাপ্ত ভোট ৯১টি। ১৫ কেন্দ্রে বুথ ছিল ৭৬টি। ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট ছিল ৭৬ জন। পোলিং এজেন্ট বাদ দিয়ে প্রতি কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পড়েছে মাত্র ১টি করে।

আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের কেন্দ্রে ভোট দিতে দেয়নি। নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় ইভিএম মেশিনের পাসওয়ার্ড নিয়ে প্রতি বুথে ৭০-৮০টি করে ভোট দিয়েছে। এভাবে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে।

সুফিয়ান বলেন, এ সংসদ নির্বাচনে আমি যেসব কেন্দ্রে ২০০-৩০০ ভোট পেয়েছি, সেসব কেন্দ্রে আমার ভোট ১-১০টি দেখানো হয়েছে। তার মধ্যে বোয়ালখালী উপজেলার ৪৭নং পোপাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আমার ভোট দেখানো হয়েছে মাত্র ১টি। কিন্তু সেখানে আমার এজেন্ট ছিল ৪ জন। আমার আর ৩ এজেন্টের ভোট গেল কই?

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্র দখল করে ইভিএমের পাসওয়ার্ড নেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, নগরীর হামজারবাগ রহমানিয়া স্কুল কেন্দ্রে দুপুর ১২টার সময় ২ নম্বর কক্ষে কয়েকজন বহিরাগত সন্ত্রাসী প্রবেশ করে। তারা নির্বাচন কমিশনের আইটি বিশেষজ্ঞ ও প্রিসাইডিং অফিসার ছোটন চৌধুরীকে নিয়েই সেখানে যায়। তার মোবাইল থেকে নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে ডিভাইস নম্বর দিয়ে কোড অথবা পাসওয়ার্ড চাইলে +৮৫৮৪৭৭৬৭+ নম্বরটি দেওয়া হয়। তারা এ সময় বলতে থাকে ১০ শতাংশ ম্যাচিং কোড দিয়ে তাড়াতাড়ি ভোট নিয়ে নেন। তখন অন্য জনের আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। অবৈধভাবে শুরু করা ভোটার নম্বর ৪২২, ৫০২, ৪৯৯ ও ৫৮০।

মৃত ব্যক্তি এবং প্রবাসীদের নামেও ভোট দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগের রাতে বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও সরকারদলীয় নেতারা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে কেন্দ্র দখল করেছেন। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেও কেন্দ্র দখল করা হয়েছে। ভোট শুরুর কিছুক্ষণ পরই পুলিশের উপস্থিতিতে নৌকার লোকজন ইভিএমের গোপন বুথে অবস্থান নেয়। ভোটাররা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেয়ার পরই ব্যালট ইউনিটে নৌকার সমর্থকরা ভোট দিয়ে দেয়।

সুফিয়ান আরো বলেন, ১৩ জানুয়ারি কোনো সুষ্ঠু ভোট হয়নি। তাই অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস, সদস্যসচিব মোস্তাক আহমদ খান, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামরুল ইসলাম ও সহদপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী এ সময় সাথে ছিলেন।

জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনে গত ১৩ জানুয়ারি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ৮৭ হাজার ৩৪৬ ভোট পেয়ে জয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আবু সুফিয়ান পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৩৫ ভোট।

এনআই

আরও পড়ুন