• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২০, ০৪:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১২, ২০২০, ০৪:০২ পিএম

খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের শঙ্কা, মৃত্যুঝুঁকিতে বসবাস

খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের শঙ্কা, মৃত্যুঝুঁকিতে বসবাস

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে চারদিনের টানা বৃষ্টি ও ভারি বর্ষণে ফলে পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পাহাড় পাদদেশে বসবাসকারীদের মৃত্যুঝুঁকিতে চাপা পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। রোববার থেকে থেমে বৃষ্টি হলেও বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার টানা বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে বেড়েছে চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বিপদসীমা অতিক্রম করে প্লাবিত হবে নিম্নাঞ্চল। পাহাড় ধস মোকাবেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুুত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, খাগড়াছড়ির জেলা সদরের শালবাগান, কদমতলী, কুমিল্লা টিলা, মোল্লাপাড়া, সবুজবাগ পাহাড় এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় স্থানীয়রা পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এছাড়া জেলার পানছড়ি, মাটিরাঙা, দীঘিনালা, রামগড়, গুইমারা, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি এবং মহালছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন স্থানীয়রা। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ‘এখানে আমরা বছরের পর বছর বসবাস করছি। অন্য কোথাও আমাদের থাকার জায়গা নেই।’

প্রতি বছর পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও পাহাড় ধস রোধে নেই কোনো স্থায়ী টেকসই ব্যবস্থাপনা বা পরিকল্পনা। ফলে প্রতি বছরই পাহাড় ধস বা পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। পাহাড় কর্তন করে পাদদেশে কিংবা পাহাড়ের ওপর বসবাসরতদের বেশির ভাগই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ। বিকল্প উপায় না পেয়ে বছরের পর বছর তারা এখানে বসবাস করছেন। মৃত্যুঝুঁকি জেনেও বাধ্য হয়ে এখানে তারা বসবাস করছেন। প্রত্যক বছর বর্ষা এলে পাহাড়ে বসবাসরতদের মাঝে আতঙ্ক বাড়ে। 

অপরদিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, জেলা পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, স্থানীয় সাংসদ সদস্যসহ সকলে দুর্যোগপুর্ণ অবস্থায় শালবন, কুমিল্লাটিলা, ন্যান্সি বাজার এলাকার প্রতিটি স্থান পরিদর্শন করে থাকেন।
কিন্তু এসব এলাকার জনগণকে পুনর্বাসন করা সম্ভব হয়নি অনুসন্ধান করে জানা যায়, এর মুল কারন মৌজা ও খাস জমি না থাকায় এসব এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদস্থানে সরিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না কারন জেলা সদরে যে সকল ভুমি বা জায়গা রয়েছে তার কিছু অংশ জেলা প্রশাসন(কালেক্টরিয়েট এলাকা), সেনানিবাস(কুমিল্লা টিলা), বনবিভাগ(নারানখাইয়া), পিডিবি(পান খাইয়া পাড়া), পানি উন্নয়ন বোর্ড(নদী তীরবর্তী বাজার এলাকা) এবং কর্ণফুলী পেপার মিলে(মহাজন পাড়া)র জায়গা। যার ফলে বাধ্য হয়ে উদ্বাস্তুুদের ন্যায় বসবাস করছে ওখানকার মানুষ। এ ব্যাপারে পরিবেশবাদীরা আশা করেন সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার উদ্ভুদ্ধ করন এবং জনগনকে ঝুঁকি হ্রাস কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা জরুরি।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। খাগড়াছড়িতে সরকারিভাবে পাহাড় কেটে উন্নয়নের প্রবণতা বেশি। এতে বিভিন্ন জায়গায় কর্তনকৃত পাহাড় ধসে পড়বে।
দীঘিনালার আবহাওয়া অফিসের উচ্চমান পর্যবেক্ষক ধর্মজ্যোতি চাকমা জানান, আগামী ২১জুলাই পর্যন্ত পাহাড়ে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এসময় পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুল্লাহ মারুফ জানান, পাহাড় ধস মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা প্রস্তুুত নেয়া হয়েছে।
এসকল সৃষ্ট সমস্যা ও ঝুকিপূর্ণ শ’শ লোকবলকে বার বার স্থানান্তর করার ব্যাপারে খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র মো: রফিকুল ইসলাম জানান এ বিষয়ে সব সময় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়।
অতীতের আষাঢ় মাসের ভয়াবহতা বর্তমান ৯ই জুলাই থেকে ১২ই জুলাই রোববার পর্যন্ত ৪দিনের প্রবল বর্ষণে গা-শিউরে উঠার মত গল্প মনে পড়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য পাহাড়ের চুড়ায় ঝুকিপূর্ণ শত শত বসতবাড়ি গুলো যেকোনো সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে লন্ডভন্ড হওয়াসহ ব্যপক প্রান হানির শঙ্কা রয়েছে।

ভৌগোলিক অবস্থান, কুপ্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য ও ঘনবসতি এবং অপরিকল্পিত পাকা বহুতল ভবন নির্মানের কারনে সদর উপজেলার শালবন, কুমিল্লাটিলা, ন্যান্সিবাজার এলাকা অন্যতম দুর্যোগ পুর্নস্থান হিসেবে পরিচিত প্রশাসনের নজরে। প্রতি বছর ভারী বৃষ্টি ও দুর্যোগের সময় এসব এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয় অন্যত্র, আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঐসকল লোকজন পুনরায় ঝুকিপুর্ণ বসত যার যার নিজস্ব বাড়িতে ফিরে আসে।