• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২০, ০৯:০৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২০, ২০২০, ০৯:০৯ পিএম

রংপুর মহনগরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় হাঁটু পানি

রংপুর মহনগরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় হাঁটু পানি

পাহাড়ি ঢল কিংবা বন্যা নয়, নয় নদীতীরবর্তী নিন্নাঞ্চলও। মাত্র দু’দিনের লাগাতার ভারি বর্ষণেই রংপুর মহানগরীর অনেক উঁচুস্থান এখন দু’দিন ধরে জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। রবিবার ভোর রাত থেকে টানা এই বর্ষণের কারণে নগরীর কমপক্ষে ৩০টি মহল্লায় অন্তত লক্ষাধিক মানুষ এখনও হাঁটু থেকে কোমড় পানিতে নিমজ্জিত। পানি নিষ্কাষনের অভাবে এবং জলাবদ্ধতার কারণে এসব এলাকার অনেকেই এখন ঘর ছেড়ে বাইরে বের হতে পারছেন না। দরিদ্র মানুষদেও কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছে পাশর্^বর্তী কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা উঁচু স্থানে। এতে করে কেউ কেউ বিশুদ্ধ পানি আর খাবার সংকটের কারণে কমবেশি সকলেই রয়েছে চরম এক দূর্বিসহ অবস্থায়। 

সোমবার মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলো ছাড়াও স্বাভাবিত যেসব এলাকা রয়েছে সেসবও এখনও জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। অনেক এলাকার প্রধান সড়ক পানির নিচে তলিয়ে আছে। মহানগরীর প্রাণজুড়ে বয়ে যাওয়া শ্যামাসুন্দরী খাল পানিতে টইটুম্বও হয়ে বর্তমানে এর আশপাশের এলাকা এখন মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানার সামনের সড়ক, গোমস্তাপাড়া, লিচুবাগান, মুলাটোল, বাবুখাঁ, গনেশপুর, গুরাতিপাড়া, দক্ষিণ কামাল কাছনা, বৈরাগিপাড়া, মাছুয়াপাড়া, জলকর, জুম্মপাড়া, নিউ জুম্মাপাড়া, শালবন, মিস্ত্রিপাড়া, দর্শণা, হনুমানতলাসহ মহনগরীর অন্তত ৩০টি এলাকায় এ অবস্থা বিরাজ করছে। এসব এলাকার অধিকাংশ সড়ক ও বাসা বাড়িতে পানি অবস্থান করায় মানুষজন দু’দিন হয় গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছে। নগরীর গোম্স্তাপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী শাহ আলম কবির রবি ও বিদেশ ফেরত শহিদুল ইসলাম আসলাম জানালেন, এমন চিত্রতো দেখেছিলাম ৮৮’র বন্যায়। 

এখন রংপুর পৌরসভা সিটি করপোরেশনে রূপ পেয়েছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন কালভার্টসহ হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে নগরীতে। কিন্তু কী হাল নগরের ? পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিক না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, এসবের দায় কী সিটি মেয়র এড়িয়ে যেতে পারেন ? এ ব্যাপারে জানলেত চাইলে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, সদ্য নির্মিত ড্রেনের মুখগুলো সব বন্ধ হয়ে পড়ায় এবং শ্যামাসুন্দরী খাল জলমগ্ন হয়ে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, মুখ গুলো খুলে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। হলেই পানি নেমে যাবে। 

এদিকে টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার তিস্তা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বেড়ে যাওয়ায় গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ জলবন্দী অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। এসব এলাকার দরিদ্র মানুষ চরম বিপাকে পেড়েছেন তাদের স্ত্রী সন্তান ছাড়াও গবাদি পশু ও হাস মুরগি নিয়ে। এসব পরিবারের সদস্যরা এখন স্থানীয় শহর রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মাঝেও দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান রবিবার বিকালে দুর্গত গঙ্গাচড়া বেশ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শণ করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাছে শুকনা খাবার বিতরণ করেছেন। 

স্থানীয় আবহাওয়া দফতর সূত্র জানায়, গত ৪৮ ঘন্টায় রংপুরে মোট ২৬৮ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে তারা। সূত্র মতে, বৃষ্টিপাত আরও দু’একদিন অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে আতংকিত হয়ে পড়েছে নদীতীরবর্তী মানুষজন ছাড়াও নগরবাসীও। অন্যদিকেক পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে (সোমবার বিকালে) তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্ট ও কাউনিয়ায় পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

জাগরণ/এম.ইউ

আরও পড়ুন