• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২০, ০৫:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২২, ২০২০, ০৫:১৪ পিএম

গাইবান্ধায় বন্যার জলে

গরু-ছাগল কুকুর ও মানুষের একসাথে বসবাস!

গরু-ছাগল কুকুর ও মানুষের একসাথে বসবাস!

কোথাও এতটুকু দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই। যতদুর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। বাতাসে করুণ আর্তনাদ ভাসছে চারিদিকে। গাইবান্ধায় উজান থেকে ভেসে আসা পাহাড়ি ঢলে দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলার সাত উপজেলার চার উপজেলা মারাত্মক ভাবে বন্যা কবলিত হয়ে পরেছে। ভাঙছে অজস্র মানুষের ঘরবাড়ি এবং ফসলি জমি। ব্রম্মপুত্র, ঘাঘট এবং করতোয়ার পানি এখনো বিপদসীমার ওপরে। বন্যায় পানি বন্দী হয়ে পরেছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। এতে গরু-ছাগল, ছোট ছোট শিশুসন্তান আর নিজেদের জীবন বিপন্ন হওয়ার হাত থেকে বাঁচার প্রাণপন চেষ্টা করছে বন্যার পানিতে ভেসে থাকা পরিবারগুলো।

ঘর আছে তো বুক সমান পানি। সেখানেই খাটের নিচে ইট উঁচু করে কিংবা দড়ি দিয়ে খাট বেঁধে মাঁচা করে মানবেতর জীবনযাপন করছে অসহায় এই নদী অঞ্চলের হত-দরিদ্র মানুষেরা। ভেসে থাকা চকি কিংবা কলাগাছের ভেলায় শিশুদেরও থাকতে হচ্ছে। হতে পারে বিপদ যেকোনো মহুর্তেই। কোথাও একটু মাটি না থাকায় গরু-ছাগল ও প্রাকৃতিক প্রাণী গুলোর বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের পোড়ার চরে দ্বিতীয় দফা বন্যায় হত-দরিদ্র এইসব অসহায় মানুষের বেঁচে থাকার নিদারুণ আর্তনাদের এক করুণ চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।দেখা গেছে, একটি উঁচু চকিতে একসাথে গরু-ছাগল আর কুকুর এবং পাশেই মশারী দিয়ে ঘেরা
অন্য একটি খাটে শিশুসহ একটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে কিছু কিছু পরিবারকে ঘরের ভিতরে টিন ছুঁই ছুঁই পানির উপর  ভেলায় ভেসে থাকতে দেখা গেছে। সেই ভেলার একপাশে হাড়ি, পাতিল, খড়ি, মুরগী ও মুরগির বাচ্চা হাটাহাটি করছে। নলকুপ গুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায়, ভেলায় করে দূর দূরান্তের উঁচু বাঁধে গিয়ে খাবার পানির জন্য ছুটে যাচ্ছে পরিবারের শিশুকিশোর কিংবা বয়োবৃদ্ধরা। 

এদিকে পয় নিষ্কাসনের জন্য কোন উঁচু জায়গা না থাকায় শিশুসহ অনেকেই বাধ্যহয়ে পানিতেই মলত্যাগ করছেন। দূর থেকে পর্যাপ্ত পানি আনা যায়না বিধায় সেই পানিতেই গোসল, রান্নাবান্না করতে বাধ্য হচ্ছে বন্যা কবলিত এই পরিবারগুলো।

পানি বন্ধী এবং ঘরবন্দী এইসব অসহায় পরিবারের কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, তাদের কষ্টের কথা কেউ ভাবেন না। ঘরে একটুও খাবার নেই। খুব কষ্ট করে, এর ওর কাছে ধারদেনা করে সামান্য কিছু চাল-ডাল, আলু কিনে তাই রান্না করে একবেলা খেতে পারছি। বাচ্চাদের এবং পশুজাত প্রাণীদের খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে বিভিন্ন পানি বাহিত রোগের বিস্তার ঘটতে পারে। তারা আরও বলেন, এখন নিজেদের জন্য খাবার, পানি, গবাদিপশুর খাবার এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ খুব জরুরি।

একদিকে জীবন, অন্যদিকে জীবিকার তীব্র সংকটে পরেছে বানভাসি এই অসহায় মানুষগুলো। একটু খাবার আর পানির অভাবে ভুগছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি মানুষের যে মৌলিক চাহিদা গুলো মেটানো বাধ্যতামূলক, সেই অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসা- এর প্রত্যেকটি চাহিদার তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে এই বানভাসি এলাকায়। সরকারি পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, কৃত্রিম পয়নিষ্কাসনের ব্যবস্থা এবং আর্থিক প্রণোদনার সঠিক বাস্তবায়ন একান্ত জরুরি বলে মনে করেন গাইবান্ধার সচেতন মহল।

এম.ইউ

 

আরও পড়ুন