• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২০, ০১:১৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২, ২০২০, ০১:১৯ এএম

মেজর সিনহা নিহতের ঘটনা তদন্তে কমিটি, যৌথ উদ্যোগ চায় সেনাসদর

মেজর সিনহা নিহতের ঘটনা তদন্তে কমিটি, যৌথ উদ্যোগ চায় সেনাসদর
পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান

কক্সবাজারের টেকনা‌ফ উপ‌জেলার বাহারছড়ায় মে‌রিন ড্রাইভ সড়‌কে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও সাবেক এসএসএফ সদস্য মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হবার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শনিবার (১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহে এলিন মাইনুল আমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুসারে, পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনা তদন্তে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেয়া মেজিস্ট্রেট মোহা.শাজাহান আলিকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য হিসেবে কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ১০ম পদাতিক ডিভিশননের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারকে নিযুক্ত করা হয়েছে। নির্ধারিত কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্য সংশ্লিষ্ট ঘটনা তদন্তপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।

শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাত সা‌ড়ে ১০টা নাগাদ কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলাস্থ বাহারছড়া মেরিন ড্রাইভে অবস্থিত পুলিশ চেকপোস্টে এই ঘটনা ঘটে।

পু‌লিশ জা‌নি‌য়ে‌ছে, ওই সেনা কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত গা‌ড়ি‌তে ক‌রে অপর একজন স‌ঙ্গীসহ টেকনাফ থে‌কে কক্সবাজার আস‌ছি‌লেন। ‌মে‌রিন ড্রাইভ সড়‌কের বাহারছড়া চেক‌পো‌স্টে পু‌লিশ গা‌ড়ি‌টি থা‌মি‌য়ে তল্লাশি কর‌তে চাইলে তিনি বাধা দেন। এই নি‌য়ে তর্কবিত‌র্কের এক পর্যা‌য়ে নিহত সেনা কর্মকর্তা সিনহা তার সঙ্গে থাকা পিস্তল বের কর‌লে 'আত্মরক্ষার্থে' পুলিশ গু‌লি চালায়। এতে ওই সেনা কর্মকর্তা  গুরুতর আহত হন। পরে‌ কক্সবাজার সদর হাসপাতা‌লে নি‌লে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা ক‌রেন। আজ শ‌নিবার সকা‌লে নিহ‌তের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হ‌য়ে‌ছে।

 
এছাড়া নিহত এই সাবেক সেনা কর্মকর্তার ব্যবহৃত গাড়ি তল্লাশি করে ৫০টি ইয়াবা, কিছু গাজা এবং দুটি বি‌দেশি ম‌দের বোতল উদ্ধার করা হ‌য়ে‌ছে বলেও জনায় পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিহত সিনহা মো. রাশেদের দুই সঙ্গীকে আটক করা হয়েছে এবং দুটি মামলও দায়ের করা হয়েছে বলেও জান্যয় পুলিশ।

অপরদিকে সংশ্লিষ্ট বিষয় সেনা সদর দপ্তরের (এজি শাখা) পক্ষ থেকে পিএস পরিদপ্তর বরাবর পাঠানো একটি বিবৃতির (স্মারক নং- ২৩.০১.১০১.০৩৮.০৫.০৩৪.০১.০১.০৮.২০/পার্ট) তথ্য মতে, উল্লেখিত পুলিশ চেকপোস্টের পূর্বে একটি বিজিবি চেকপোস্টে মেজর (অব.) সিনহার গাড়িটি থামিয়ে প্রাথমিক তল্লাশি করা হয়। এ সময় তার পরিচয় পেয়ে বিজিবি তাকে ছেড়ে দেয়। পরে শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে পৌঁছালে এসআই লিয়াকত তার সঙ্গীয় ফোর্সসহ নিহত সেনা কর্মকর্তার গাড়িটি থামান। প্রথমে তার পরিচয় পেয়ে পুলিশ তাকে যাওয়ার অনুমোতি দিলেও আবার থামার নির্দেশ দেয়। এরপর এসআই লিয়াকত সরাসরি অস্ত্র তাক করে মেজর (অব.) সিনহা ও তার সঙ্গীকে গাড়ি থেকে নামার নির্দেশ দেন। সঙ্গীর মত সিনহাও এ সময় দু'হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে এবং কোন কথা না বলেই এসআই লিয়াকত সিনহাকে গুলি করেন।

বিবৃতির তথ্য মতে, এই ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়ে এএসইউ মাঠকর্মী সার্জেন্ট আইয়ুব আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় সেখানে বেশ কয়েকজন স্থানীয় এলাকাবাসীও উপস্থিত ছিলেন। সার্জেন্ট আইয়ুব আলী সেখানে গুলিবিদ্ধ সিনহাকে পড়ে থাকতে দেখে ভিডিও ধারন করতে চাইলে পুলিশ তাকে বাধা দেয় এবং পরিচয় জানতে চায়। সার্জেন্ট লিয়াকতের পরিচয় পাওয়ার পর পুলিশ তার মোবাইল ও পরিচয় পত্র কেড়ে নেয়।

এছাড়া পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত বলেও অভিহিত করেছে সেনাসদর।

সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বিতর্কিত তথ্যের উপস্থিতি নজরে আসায় এর সুষ্ঠ তদন্তের জন্য গঠিত হয় তিন সদস্যের এই কমিটি। তবে জানা গেছে যে, সুষ্ঠ তদন্ত নিশ্চিত করতে যৌথ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি করেছে সেনাসদর।

বিশিষ্টজনদের মতে, স্পর্শকাতর এই ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করা জরুরি। তারা মনে করেন, পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তার ইস্যুটি যাতে কোনো মহল গুজব ছড়ানো বা অবান্তর বিতর্ক উষ্কে দেয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না করতে পারে সে ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি অপ্রত্যাশিত এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তে সেনা-পুলিশ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে যাবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তারা।

এসকে