রাজশাহীর মসজিদ মিশন একাডেমীর হিসেবে থেকে প্রায় ১১ লাখ টাকার হদিস নেই। এই অর্থ অর্থ জঙ্গিবাদ ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছেন রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।

সোমবার নগরীর একটি রেস্তোরাঁর সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এই অভিযোগ আসেন বাদশা। মসজিদ মিশন একাডেমীর অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে এই আয়োজন করেন এমপি।

সেখানে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, রাজশাহীর মসজিদ মিশন একাডেমির প্রায় ১১ কোটি টাকার হদিস পায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। ২০০৬-৭ অর্থ বছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মধ্যে এই টাকা নগদে খরচ দেখানো হয়েছে। অডিটের সময় ব্যাংক চেকের মাধ্যমে টাকা খরচের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

নগদে কোন খাতে টাকা খরচ হয়েছে তারও কোন হিসাব পাওয়া যায়নি। তার শঙ্কা এই অর্থ জঙ্গিবাদ ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হয়েছে। এসময় ফজলে হোসেন বাদশা মসজিদ মিশন একাডেমির শিক্ষকদের সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ তুলে ধরেন।

সাংবাদিকদের বাদশা জানান, রাজশাহীর মসজিদ মিশন একাডেমি একটি বেসরকারি সংস্থা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত। বাংলাদেশ মসজিদ মিশন রাজশাহী জেলা শাখা নামের ওই সংস্থা ১৯৭৬ সালে সমাজসেবা থেকে নিবন্ধন নেয়। এরপর সংস্থাটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। 

বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়। তবে নিবন্ধনের পর সংস্থাটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে কোন অডিট  রায়নি। নিজেদের ইচ্ছেমতো কমিটি গঠন করে সংস্থাটি পরিচালিত হয়ে আসছে। তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও কমিটি হয় নিজেদের ইচ্ছেমতো।

এই স্কুলে কোন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় না। অমুসলিম ছেলেমেয়েদেরও এখানে পড়াশোনার সুযোগ নেই। সংস্থার ১০ কোটি ৬০ লাখ ৭৮ হাজার ৪৭০ টাকা এই স্কুলে খরচ দেখানো হয়েছে।

বাদশা অভিযোগ করেন, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে মসজিদ মিশন সংস্থা চলছে। তাদের গঠনতন্ত্রের কোথাও স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা ছিল না। কিন্তু তারা করেছে। তারা ইচ্ছেমতো স্কুলটি পরিচালনা করে। তাই সংস্থাটির নিবন্ধন বাতিল করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে স্কুলটি সরকারের তত্ত্বাবধানে নেয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, স্কুলে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংগীত গাওয়া হতো না। আমরা বাধ্য করেছি। কিন্তু স্কুলে এখনও সরকারের পাঠ্যসূচি অনুসরণ করা হয় না। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জামাতের বই পড়ানো হয়। তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। এ টাকা জঙ্গিবাদ-নাশকতায় ব্যয় করা হয়। এক সময় বাংলা ভাইকে সহায়তা করা হতো। আমরা তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখতে চাই।

এমপি বলেন, শিক্ষাবোর্ড মসজিদ মিশন একাডেমির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সমাজসেবা অধিদপ্তর সংস্থার বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এই সংস্থা এতদিন কীভাবে চলল তার কৌফিয়ত দিতে হবে। যেসব কর্মকর্তারা এতদিন বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন আমি তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।

এর আগে গত ২২ জুলাই মসজিদ মিশন একাডেমির নানা অনিয়ম ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রশ্নে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেন ফজলে হোসেন বাদশা। একই দিনেই ২২ জুলাই বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের রাজশাহী জেলা শাখার নিবন্ধন বাতিল করতে সমাজসেবা কার্যালয়কেও চিঠি দেন। এছাড়া ১০ আগস্ট মসজিদ মিশন সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা
প্রশাসককে চিঠি দেন বাদশা।

এম