• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২০, ০৮:২৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১১, ২০২০, ০৮:২৫ পিএম

লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে মৎস্য উৎপাদন

একশ দিন পর কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু

একশ দিন পর কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু
কাপ্তাই হ্রদের জেলেরা মাছ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করছেন-জাগরণ

অবশেষে তিন মাস ১০ দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার  থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু হয়েছে। এ নিয়ে কাপ্তাই হ্রদের জেলে এবং মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ ১শ দিন মাছ শিকার বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরন শুরু হয়েছে। প্রতি বছরের মত এবারও ১ মে থেকে ৩ মাসের জন্য কাপ্তাই হ্রদে মাছের বংশ বৃদ্ধি ও পোনা অবমুক্তকরন এবং মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরনে হ্রদে মাছ শিকার  বন্ধ ছিল। এখন কাপ্তাই হ্রদের ৭২৫ বর্গ কি.মি. এলাকাজুড়ে জেলেদের মাঝে চলছে পুরোদমে মাছ ধরার প্রস্তুতি।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কাপ্তাই হ্রদ থেকে মাছ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৫৫০  মেট্রিক টন। কিন্তু এবার মাছ উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৬৯৫.৮২ মেট্রিক টন। যা অন্যান্য বারের  চেয়ে ১৪৫ মেট্রিক টন বেশি মাছ উৎপাদন হয়েছে। অপরদিকে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মৎস্য আহরন থেকে সরকারী রাজস্ব আয়ের  লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ কোটি টাকা কিন্তু  এবার  রাজস্ব আয় হয়েছে ১৬ কোটি টাকা। যা গত অর্থ বছরের চেয়ে ৩ কোটি টাকা বেশি।

এদিকে, কাপ্তাই হ্রদ এলাকার রাঙামাটি সদরের অধীন পুরান-নতুন জালিয়া পাড়া, ইসলামপুর, শরিয়তপুর, সাঁওতাল পাড়াতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেউ পুরাতন জাল মেরামত করছে, কেউ নতুন জাল বুনছে এবং কেউ মাছ ধরার নৌকা/ ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছে। জেলে পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যরাও বসে নাই। তারাও জেলেদের সাহায্য করছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে সরকার জেলেদের প্রতিমাসে ২০ কেজি করে চাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে দিয়েছে। জেলে পরিবারের জন্য এ সহায়তা ছিল অপ্রতুল। জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় প্রত্যেক জেলের মাথার উপর এনজিও অথবা দাদন ব্যবসায়িদের ঋণের কিস্তি ঝুলছে। সবাই তাদের সঞ্চয় ভেঙে দিনগুলো কোন ভাবে পার করছে। এছাড়া করোনার নিষেধাজ্ঞাও যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। মাছ আহরণ ভালো হলে নানা দুর্দশা থেকে মুক্তি পাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় জেলেরা।

পুরাতন জালিয়া পাড়ায় নৌকা মেরামতে ব্যস্ত জেলে সুভাষ দাস (৪২) জানান, জেলেদের মাছ ছাড়া আর কোন উপার্জন নাই। তাই নিষেধাজ্ঞা কালীন সময়ে যা সঞ্চয় ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞার পর মাছ না পেলে তাদের দুর্দশা আরও বাড়বে বলে সুভাষ জানান।

একই পাড়ার জেলে নেপাল দাশ (৪৪) জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারের দেয়া প্রতিমাসে ২০ কেজি করে চালে তাদের সংসার চলে না। তিনি খাদ্য সহায়তা বাড়াবার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান। তিনি বলেন, মাছ মারা বন্ধকালীন সময়ে খুবই কষ্টের মধ্যে দিয়ে আমাদের চলতে হয়।
এদিকে, পুরান জালিয়া পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি নির্মল দাস জানান, অর্থের অভাবে আমাদেরকে মাছ শিকার বন্ধকালীন সময়েও চুরি করে মাছ শিকার করতে হয়।

কাপ্তাই হ্রদে প্রাকৃতিকভাবে মাছে প্রজনন বৃদ্ধি, পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর মে থেকে জুলাই পর্যন্ত তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ বন্ধ থাকে। একটি হিসাব মতে, জেলায় প্রায় ২৩ হাজার জেলে ছাড়াও মাছ ব্যবসার সাথে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমমুখী সমবায় সমিতির  সাধারন সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া বলেন, তিন মাস দশ দিন পর মাছ শিকার আবার শুরু হয়েছে। কিন্তু কাপ্তাই হ্রদের পানি কম থাকায় আমরা শঙ্কিত। কারণ একদিকে পানি কম অন্যদিকে কোভিড-১৯ মহামারীতে আমরা হ্রদ থেকে মৎস্য আহরণ করে সরকারী  বিভিন্ন কর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামে যে  মাছ পাঠাবো এ মাছের সঠিক মূল্য পাবো কিনা তা নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন রাঙামাটির ব্যবস্থাপক লে: কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদে প্রায় ২৩ হাজার জেলের জন্য ভিজিএফ কার্ড পেয়েছি শুধুমাত্র দুইমাসের জন্য। বাকী একমাস দেয়া  হয়নি।কাপ্তাই হ্রদেও মাছের উৎপাদন সম্পর্কে  তিনি বলেন, উৎপাদন প্রতি বছর বাড়ছে।তবে ব্যবস্থাপক বলেন, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিও মধ্যে ছোঠ মাছের উৎপাদন বেশি হচ্ছে।লে: কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম আরো বলেন, অঅমাদেও মৎস্য অবতরন ঘাটে বড় মাছের ছোট মাছ বেশি আসে। এখানে বড় মাছগুলো স্থানীয় বাজারে বেশিরভাগই বিক্রয় হয় যায়। তিনি জানান, কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধকালীন সময়ে ৪৩ হাজার ৭৪ কেজি মাছের পোনা অবমুক্ত করেছি। আমি আশা করি এ মাছ গুলো বড় হলে কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের যে নিম্নগতি তা থেকে অনেকাংশে কমে আসবে।

এদিকে, মাছ ব্যবসায়ীদের মাছের দাম নিয়ে যে সংশয় প্রকাশ সম্পর্কে ব্যবস্থাপক বলেন, কাপ্তাই হ্রদে এখন মাছের দাম বেশি,তাই আশা করছি ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন এর  রাঙামাটির ব্যবস্থাপক লে: কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কাপ্তাই হ্রদের মাছ অনেক সুস্বাদ। এখানকার কাঁচকি, চাপিলা ও রুই, টেংড়া জাতীয় মাছ প্রচুর বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। যার থেকে সরকার বৈদশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে।

এমএইউ