• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২০, ১২:১৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৬, ২০২০, ১২:৩৬ এএম

বিএএসএ সংবাদ সম্মেলন

‘ইউএনওর ওপর হামলা পরিকল্পিত’

‘ইউএনওর ওপর হামলা পরিকল্পিত’
ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম

চুরি করতে গিয়ে দেখে ফেলায় ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)।

তাদের অভিযোগ, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর পরিকল্পিত হামলা হয়েছে। কিন্তু কোনও কোনও মহল ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য ‘বিচ্ছিন্ন ও চুরির ঘটনা’ বলে চালিয়ে দেয়ার অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কারণ, দৃর্বৃত্তরা কোনও প্রকার জিনিস বা সম্পদ চুরি করেনি বা খোয়া যায়নি। এটি একটি পরিকল্পিত আক্রমণের ঘটনা এবং এর সঙ্গে আরও অনেক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন। বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেলালুদ্দীন আহমেদ এসব কথা বলেন। এ সময় সংগঠনের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন এবং অফিসার্স ক্লাবের (ঢাকা) সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মেজবাহ উদ্দিন, বিয়াম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

গত বুধবার গভীর রাতে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় আটক তিনজন র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। চুরির অভিপ্রায় থেকেই নৃশংস এই হামলার ঘটনা ঘটে বলেও আটক ব্যক্তিরা র‌্যাবকে জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে র‌্যাব। অবশ্য র‌্যাব বলছে, প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য আরও সময় দিতে হবে, আরও তদন্ত করতে হবে, প্রয়োজনে সম্পৃক্তদের রিমান্ডে নিতে হবে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদশে ইউএনওদের নিরাপত্তায় ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগের দাবি জানিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, সব জেলাতে ব্যাটালিয়ান আনসার নেই। যেসব জেলাতে আছে, সেখানে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগ দেয়ার জন্য আবেদন জানাব।

ওয়াহিদাকে ‘সৎ নির্লোভ ও নির্ভীক কর্মকর্তা’ অভিহিত করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল বেআইনি তদবিরে ব্যর্থ হয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

সংগঠনের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, আমরা দেখেছি, ইউএনও ওয়াহিদা ইদানিংকালে কিছু উচ্ছেদ করেছেন। আরও কিছু উচ্ছেদ করার জন্য কিছু লোকজন তার উপর সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। ওখানে যে বালুমহালে অবৈধভাবে বালু তুলতে সে বাধা দিয়েছিল। এ সমস্ত কারণে প্রভাবশালী কেউ হয়ত তার উপর ক্ষিপ্ত হতে পারেন। সেটির বহিঃপ্রকাশ এভাবে হতে পারে বলে আমরা মনে করি।

তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এটি তদন্ত করছে, সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে পারছি না। তদন্ত কার্যক্রম যখন চলে, এখন যদি সুনির্দিষ্টভাবে কথা বলি, তাহলে তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।

জনপ্রশাসন সচিব বলেন, উপজেলাতে বিভিন্ন পেশা ও সংগঠনের লোকজন থাকেন। মানুষের চাহিদা অফুরন্ত হয়ে গেছে। সে চাহিদার মধ্যে কোনটা আইনি, কোনটা বেআইনি, এটা কিন্তু তারা অনেক সময় বাছবিচার করে না। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ইউএনওরা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে থাকেন। মোবাইল কোর্ট থেকে শুরু করে আইনের প্রতিটি বিষয় দেখভাল করে থাকেন। যেন কোথাও আইনের ব্যত্যয় না হয়। কোথাও আইনের ব্যত্যয় করে যদি কিছু আবদার করা হয়, তখন অনেকে (ইউএনও) তাদের বিরাগভাজন হন।

হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ওয়াহিদা খানম তেমন কোনও চাপে বা অস্বস্তিতে ছিলেন বলে জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কারও কাছে সঙ্গে শেয়ার করেননি। যেহেতু পুলিশ, র‌্যাব ও সিআইডি এই ঘটনাটি তদন্ত করছে তাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা যায় না। তবে বাংলাদেশ অ্যাডমিনস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা প্রয়োজনে যারা তদন্ত করছে তাদের সঙ্গে সময়ে সময়ে মত বিনিময় করবেন এবং তদন্তকাজের গতিবিধি পর্যালোচনা করবেন।

ইউএনওরা উপজেলার অনেক কমিটির দায়িত্ব পালনে করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থির মুখোমুখি হয়। তাই প্রশাসনের এই কর্মকর্তাদের কাজের পরিধি কমানোর বিষয়ে কোনও চিন্তাভাবনা আছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ইউএনওদের অনেক প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলা হয়। এছাড়া অনেক কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপদেষ্টা সংসদ সদস্যরা (এমপি) রয়েছেন। ফলে তারা উপজেলার বিভিন্ন কমিটি দায়িত্ব পালনে কোনও সমস্যা হয় না।

তিনি বলেন, মাঠ প্রশাসনে কাজ করতে গিয়ে যে কোনও বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনও ঝামেলা তৈরি হলে বিষয়টি ইউএনওদের দেখতে হয়। এতে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসহ অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টি হলেও বিরাগভাজন হন ইউএনওরা। ফলে তাদের সব সময় ঝুঁকি কাজ করতে হয় বলে জানান তিনি।

ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় আটকদের রাজনৈতিক পরিচয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলেও তদন্তের স্বার্থে এ নিয়ে কিছু বলতে চাইছেন না অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইউসুফ হারুন বলেন, এই দুর্বৃত্তদের কেউ রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে। যে সমস্ত লোকজন এই দুর্বৃত্তায়ন করে, তাদের যে সবসময় রাজনৈতিক প্রভাব থাকে এরকম না। অন্য জায়গা থেকে ও অন্য দল থেকে আসে। তারাও কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে এরকম রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়ে এ সমস্ত কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে। সব রাজনীতিবিদ যে খারাপ এরকম নয়। সব দুর্বৃত্তরা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য, এটি আমরা মনে করি না।

কেএপি

আরও পড়ুন