• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০, ০৪:০০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০, ০৪:৩২ পিএম

ঝাঁজহীন পচা পেঁয়াজে কেবলই দুর্গন্ধ

পিঁপড়া খেল লাভের গুঁড়

পিঁপড়া খেল লাভের গুঁড়

ক্রেতাদের পোড়াতে পেঁয়াজ বাজারের ব্যবসায়ীরা যে আগুন লাগিয়েছিলেন এখন সেই আগুনে নিজেরাই পুড়ছেন। আমদানি জটিলতায় বিভিন্ন স্থলবন্দরে দিনের পর দিন আটকে থাকায় পচে গেছে বেশিরভাগ ভারতীয় পেঁয়াজ। দূর দূরান্ত থেকে পেঁয়াজ কিনতে হিলি স্থলবন্দরে এলেও পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় কিনছেন না কেউই। এমনিতেই ক্রেতা কম, তার উপর পচা পেঁয়াজ। এতে ব্যবসায়ীরা লোকসানের ঝুঁকিতে পড়লেও কেউ কেউ তাচ্ছিল্যের সুরে বলছেন, বাজারে অযথা দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার এটাই ফল। এক কথায় যাকে বলে লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেল।

গত পাঁচ দিন আগে ভারতে ট্রাকে লোড হয়ে আটকে থাকার পর শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১১টি ট্রাকে ২৪৬ টন পেঁয়াজ ঢুকলো বাংলাদেশে। অনেক আলাপ-আলোচার পর এলেও এসব পেঁয়াজের অধিকাংশই পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ডলার দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি করেছি বা পেঁয়াজ কিনেছি, কিন্তু ভারত সরকার আমাদের পেঁয়াজ দেয়নি; দিয়েছে পেঁয়াজের জুস। এমন জুস দিয়েছে যে, মানুষকে বিনামূল্যে দিলেও তারা নিতে চাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে পেঁয়াজ ফেলে দিতে হচ্ছে। শনিবার বন্দর দিয়ে ১১ ট্রাক পেঁয়াজ ঢুকেছে; যার মধ্যে ৬ ট্রাক পেঁয়াজ আমাদের ঘরে। বাকি পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে পানি বের হচ্ছে। পোকা ধরেছে, ভালো পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। গতবারও ঠিক এমন সময় পেঁয়াজ নিয়ে যা করেছিল মোদি সরকার, এবারও তাই করলো। আমরা দুই দেশকে ট্যাক্স দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যদি এমন করা হয় তবে আমাদের রাস্তায় নামা ছাড়া উপায় থাকবে না।’

স্থানীয় নাসিমা বেগম ও কাদের হোসেন বলেন, ‘শনিবার আসা পেঁয়াজের অধিকাংশই পচা, নষ্ট, পেঁয়াজ দিয়ে পানি বের হওয়ার কারণে আমদানিকারকরা রাস্তার ধারে ফেলে দিয়েছেন। বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি, এ কারণে আমাদের মতো গরিব মানুষের পেঁয়াজ কিনে খেতে সমস্যা হচ্ছে। তাই রাস্তার ধারে ফেলে দেওয়া এসব পেঁয়াজ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। বাসায় নিয়ে গিয়ে পরিষ্কার করে এর মধ্যে থেকে যা পাওয়া যায়, তাই বাড়িতে খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে।’

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে টানা পাঁচদিন আটকে থাকার পর শনিবার দুপুরে বাংলাদেশে ঢোকে নিষেধাজ্ঞার আগে এলসি করা ও এলসির বিপরীতে টেন্ডার করা ভারতীয় পেঁয়াজের ট্রাক। এখনো বিভিন্ন স্থলবন্দরের সীমান্তের ওপারে অপেক্ষায় রয়েছে শত শত ট্রাক। এতে আমদানিকারকদের পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তাদের মাঝেও স্বস্তি দেখা গেলেও হিলি স্থলবন্দরে মাত্র ১১টি ট্রাক আসার পরই বন্ধ হয়ে যায় এই কার্যক্রম।

রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কোনও পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশ করেনি। নতুন করে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানির সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে শনিবার আমদানি হওয়ায় ভালোমানের কিছু পেঁয়াজ গতকালের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা কমে আজ ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা লুৎফর রহমান ও সিদ্দিক হোসেন বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার কারণে গত কয়েকদিন ধরেই পেঁয়াজের বাজার বেশ চড়া। মাঝেমাঝে পেঁয়াজ আমদানির খবরে কিছুটা কমলেও আমদানি না হওয়ার কারণে আবারও বেড়ে যায়। তবে গতকাল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কারণে বন্দরের আড়তগুলোতে পেঁয়াজের দাম গতকালের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। গতকাল প্রকারভেদে আড়তগুলোতে পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আজ তা কমে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আরও কিছু খারাপ পেঁয়াজ রয়েছে, যেগুলো ১০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’

হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, ‘ভারত সরকার গত সোমবার হঠাৎ করে কোনও কিছু না জানিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল। এর পরে শুক্রবার একটি নোটিফিকেশন জারি করে যে, গত রবিবার টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজগুলো তারা রফতানি করবে। সেই মোতাবেক অনুমতি দেওয়ায় গতকাল শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র ১১টি ট্রাকে ২৪৬ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে। যে ১১ ট্রাক পেঁয়াজ রফতানি করেছে, তার অধিকাংশ পেঁয়াজই ইতোমধ্যে পচে নষ্ট হয়ে পানি ঝরছে। এ কারণে আমদানিকারকরা এসব পেঁয়াজ নিয়ে এসেও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখনও দুইশ’র বেশি পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এছাড়া যে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আমাদের এলসি দেওয়া রয়েছে, তার বিষয়ে  কোনও সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। এগুলোর বিষয়ে তারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা কী করবে তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছি। আজকে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ প্রবেশ করবে কিনা সেই বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কারণ শুধু গত রবিবারের টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজ রফতানির জন্য অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু নতুন করে কোনও নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ভারতীয় কাস্টম বন্দর দিয়ে কোনও পেঁয়াজ রফতানি করতে দেবে না।’

এসকে