• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০, ১১:৩৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০, ১১:৩৭ এএম

বকেয়া টাকা না পেয়ে ৪ হাজার মুরগিকে খাবারে বিষ মিশিয়ে হত্যা

বকেয়া টাকা না পেয়ে ৪ হাজার মুরগিকে খাবারে বিষ মিশিয়ে হত্যা
এম এম আলম হ্যাচারির মুরগির খামারে খাদ্যের সাথে বিষ প্রয়োগ করে ৪ হাজার মুরগি হত্যা করেছে। ছবি-জাগরণ

পাওনা টাকা না দেওয়ায় ঝিকরগাছা চন্দনপুর এলাকার এম এম আলম হ্যাচারির মুরগির খামারে খাদ্যের সাথে বিষ প্রয়োগ করে ৪ হাজার মুরগিকে মারলেন সাতক্ষীরা কলারোয়া ঝাউডাঙ্গা বাজার এলাকার মুকুন্দ ঘোষ। এ ঘটনায় ঝিকরগাছা থানার একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ইতিমধ্যে মামলার তদন্ত রিপোর্ট আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝিকরগাছা থানার অফিস ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক।

ঝিকরগাছা চন্দনপুর এম এম নুর আলম  হ্যাচারি মুরগির খামারে মালিক নুর আলম বলেন, ঝিকরগাছা চন্দনপুর ঈদগার সামনে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মুরগির খামার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলাম। খামারে মুরগির খাদ্যের জোগান দিত কলারোয়া ঝাউডাঙ্গা বাজারের মেসার্স শুভ তিথি এন্টারপ্রাইজের মালিক মুকুন্দ কুমার ঘোষ। দীর্ঘদিন তার সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকায় সে কিছু বকেয়া টাকাও পেত। পাওনা টাকা নিয়ে কয়েকবার খামারের খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান শুভ তিথি এন্টারপ্রাইজের মালিক মুকুন্দ কুমার ঘোষের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সমঝোতার মাধ্যমে টাকা ধীরে ধীরে পরিশোধ করার মধ্যস্থতা হয়। সর্বশেষ ১৫ই জুলাই ইংরেজি তারিখে খাদ্য সরবরাকারী মুকুন্দ কুমার ঘোষ নুর আলমের হ্যাচারিতে মুরগির খাদ্য সরবরাহ করে। ওই খাদ্য খাওয়ানের পরপরই খামারের ৪ হাজার মুরগি বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া খামারের মুরগির বাজার মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা। 

বিষয়টি ঝিকরগাছা থানা পুলিশকে অবহিত করা হলে খাদ্য সরবরাহ কারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মুকুন্দ ঘোষকে পুলিশ থানা ডাকেন। একপর্যায়ে মুকুন্দ কুমার ঘোষ বিষয়টি সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে রাজি হয়। কিছুদিন পরেই খাদ্য সরবরাহ কারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মুকুন্দ ঘোষ সমঝোতা অস্বীকার করেন। সমঝোতা না করে বরং বিষয়টি রাজনৈতিক নেতাদের শরণাপন্ন হয়। এবং ক্ষতিগ্রস্ত খামারিকে ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেন। বিষয়টি ঝিকরগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার তপনের স্বরকে জানালে তিনিও প্রথমদিকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিবেন বলে জানান। পরে খোজ খবর নিয়ে জানতে পারেন খাদ্য সরবরাহ কারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মুকুন্দ ঘোষ তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয়। যে কারণে সে এ বিষয়টি এড়িয়ে যান। উপায়ন্ত্ত না পেয়ে আমি থানা পুলিশ ও আদালতের শরণাপন্ন হই। এরপর থেকেই  মুকুন্দ ঘোষ লোক দ্বারা আমাকে  বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এমনকি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ফোন দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।

বিষয়টি নিয়ে ঝাউডাঙ্গা বাজার শুভ তিথি এন্টারপ্রাইজের মালিক মুকুন্দ ঘোষের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, খাবারে ইঁদুর লাগার কারণে মাঝেমধ্যে বস্তায় ইঁদুর মারার বিষ দেয়া হয়ে থাকে। সেসব বিষয়ে আবার খুঁটে খুঁটে ফেলে দেয়া হয়।  তবে আমার খাবার খাওয়ানোর পর মুরগিগুলো মারা গেছে এটা সঠিক নয়। এমন কোন প্রমাণ সে দেখাতে পারবে না। কিছু সময় পরে তিনি ফোন করে বলেন ঝিকরগাছার অমুক নেতা আমার আত্মীয়, যশোরের কৃষক শ্রমিকনেতা আমার আত্মীয়। ফোন কেটে দেয়ার পরপরই কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে সাংবাদিককে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য হুমকিও দেন।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তপনের স্বরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রথমিকভাবে বিষয়টি সুরাহা করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে স্থানীয় নেতারা বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামানোতে আমি আর সামনের অগ্রসর হয়নি।

ঝিকরগাছা থানা অফিস ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক জানান, নুর আলমের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশকে অনুসন্ধানের জন্য খামারে পাঠানো হয়েছিল এবং খামার থেকে মৃত্যু মুরগি ও সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে জানা গেছে সাতক্ষীরা কলারোয়া ঝাউডাঙ্গা বাজারের তিথি এন্টারপ্রাইজের মালিক মুকুন্দ কুমার ঘোষের খাবার  খাওয়ানোর পর পর খামারের ৪ হাজার মুরগির সবগুলো মারা যায়। এটা খুবই অমার্জনীয় অপরাধ। টাকাপয়সা মানুষ পেতেই পারে। তাই বলে বিশ দিয়ে একটা খামারকে ধ্বংস করে দেওয়া এটা খুবই ন্যক্কারজনক কাজ। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা হয়েছে তাকে আদালতে একটা মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

জাগরণ/এমএইচ
 

আরও পড়ুন