• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২০, ০৫:৫৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৮, ২০২০, ০৬:০২ পিএম

হতদরিদ্রের ৩০০ টাকার চাল পেতে ২০০ টাকার কর

হতদরিদ্রের ৩০০ টাকার চাল পেতে ২০০ টাকার কর

হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরের ৩০০ টাকার চাল পেতে ইউনিয়ন পরিষদকে বাধ্যতামূলক কর দিতে হচ্ছে নগদ ২০০ টাকা! এই কর ছাড়া মিলছে না সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর এই চাল। করের টাকা দিতে না পারায় অনেকে চাল না পেয়ে খালি হাতেই ফিরে গেছেন। এই অভিযোগ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাগডহর ইউনিয়নের উপকারভোগীদের। ইউনিয়ন পরিষদের এমন জুলুমের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে উপকারভোগীরা নেমেছেন রাস্তায়। এ নিয়ে বিব্রত ও হতবাক সরকারদলীয় স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

খাগডহর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান হতদরিদ্রদের কাছ থেকে কর আদায়ের কথা অকপটে স্বীকার জানান, ইউনিয়ন পরিষদের আয় বাড়াতেই এই উদ্যোগ। আর স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জানালেন, কর আদায়ে কোন বিধিনিষেধ নেই। তবে হতদরিদ্রদের ক্ষেত্রে কর আদায় সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম। ইউনিয়ন পরিষদের একটি সূত্র জানায়, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা-ছিন্নমূল উন্নয়ন সোসাইটির পরামর্শেই হতদরিদ্রদের কাছ থেকে এই কর আদায় করছে ইউনিয়ন পরিষদ। 

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, তালিকাভুক্ত হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। একজন কার্ডধারী হতদরিদ্র ৩০০ টাকার বিনিময়ে খাদ্য বিভাগের নিয়োজিত স্থানীয় ডিলারদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল পেয়ে আসছে। অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাগডহর ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের এই চাল পেতে ইউনিয়ন পরিষদকে ২০০ টাকার বাধ্যতামূলক হোল্ডিং কর দিতে হচ্ছে। খাগডহর ইউনিয়ন পরিষদ রসিদের মাধ্যমে এই কর আদায় করছে বলে অভিযোগ। 

উপকারভোগীরা জানায়, ডিলারদের কাছ থেকে ৩০০ টাকার চাল নেয়ার সময় এই রসিদ দেখাতে হচ্ছে। করের ২০০ টাকার রসিদ ছাড়া হতদরিদ্রদের এই চাল দিচ্ছে না কোন ডিলার। ইউনিয়ন পরিষদের করের টাকা দিতে না পারায় গেল সেপ্টেম্বর মাসে চাল না পেয়ে অনেকে খালি হাতে ফিরে গেছেন। খাগডহর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মীর্জাপুর গ্রামের হতদরিদ্র শিরিনা খাতুন ও রেজিয়া খাতুন অসুস্থ থাকায় ২টি কার্ড নিয়ে ডিলারের কাছে যান বোন জয়গুন নেছা (৫০)। এ সময় করের কোন রসিদ না থাকায় ২ জনের ৬০ কেজি চালের জন্য ৬০০ টাকার সঙ্গে আরও ৪০০ টাকা নগদ গুনে চাল নিতে হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের হোল্ডিং করের কথা বলে বাড়তি ৪০০ টাকা আদায় করেন স্থানীয় ডিলার। এ সময় করের টাকা দিতে না পারায় অনেকে ফিরে গেছেন খালি হাতে। উপকারভোগীরা অভিযোগ করে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরিব মানুষকে বাঁচাতে মাত্র ১০ টাকা কেজি দরের চাল দিয়েছেন। অথচ খাগডহর ইউনিয়ন পরিষদ এই চাল পেতে হতদরিদ্র উপকারভোগীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে হোল্ডিং কর নিচ্ছে।

গরিবদের ওপর করের এই জুলুম কেন-প্রশ্ন উপকারভোগীদের। খাগডহর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় এরকম উপকারভোগীর সংখ্য ২১২২ জন। এর বাইরে দুস্থ প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা ও ভিজিএফ উপকারভোগীরাও এই করের আওতায় পড়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।