• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২০, ০৬:৫৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৩, ২০২০, ০৬:৫৯ পিএম

কালের সাক্ষী তেলের ঘানি

কালের সাক্ষী তেলের ঘানি

আধুনিকতার ছোঁয়া আর উন্নত প্রযুক্তির ফলে দিন দিন বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন যাত্রা। সেই সাথে ঠাকুরগাঁও থেকে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য তেলের ঘানি। এক সময় মানুষের রান্না বান্না ও গায়ে মাখার জন্য যে তেল ব্যবহৃত হতো, তার একমাত্র অবলম্বন ছিল কাঠের তৈরী ও গরুর কাঁধে ঘুরানো ঘাঁনি। আজ কালের আবর্তনে গ্রাম-বাংলার চিরায়িত সেই ঘাঁনি মেশিন এখন বিলিনের পথে।বাংলাদেশ এক রুপ ও বৈচিত্রময় দেশ। এদেশে হাজার রকমের সংস্কৃতি ও গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধারণ করা হয়। 

তেলের ঘাঁনি তার মধ্যে অন্যতম একটি গ্রাম-বাংলার প্রচীন ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। আর এই ঘাঁনি মেশিনের রুপকার কলু সম্প্রদায়। যারা ঘাঁনি মেশিন দিয়ে সরিষা ও নারকেল মাড়াই করে তেল বের করে মানুষের চাহিদা পূরণ করে থাকে। তারা বংশ পরম্পরায় এ কাজ করে আসছেন। এক সময় গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আগের দিনের রাজা বাদশাদেরও তেলের চাহিদা মেটানোর একমাত্র উপায় ও মাধ্যম ছিলো। কলু সম্প্রদায়েরও একমাত্র আয়ের অবলম্বন ছিলো ঘাঁনিতে সরিষা মাড়াই করে তেল তৈরী করা। কাঁক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কুলু বাড়ির নারী-পুরুষের ব্যস্ত সময় কাটত এই ঘানি মেশিনের সাথে। গ্রামের মানুষ যখন সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো তখন কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে কুলুদের কাছে বায়না দিতে হতো তেলের জন্য। কিন্তু আধুনিক যান্ত্রিকয়তার অগ্রাসনে গ্রামগঞ্জের এ যুগের প্রজন্মের কাছে কাঁঠের তৈরী ঘানি এখন শুধুই যেন রূপকথার গল্প। এখন সরিষা ও নারকেল মাড়াইসহ ঘানি মেশিনের যাবতীয় কাজ করছে ইঞ্জিনচালিত মেশিন। তাই গ্রাম-বাংলার প্রচীন ঐতিহ্য কঠের তৈরী ঘানি আজ অসহায় আধুনিক মেশিনের কাছে।

প্রযুক্তির এই যুগে সেই স্থান দখল করে নিয়েছে উন্নত প্রযুক্তির মেশিন। বিদ্যুৎ চালিত এ প্রযুক্তিতে অল্প সময়ে অনেক কাজ করা যায়। উন্নত প্রযুক্তির মেশিন তৈরীর ফলে সুখ প্রিয় বাঙালী পরিবার আর সময় নষ্ট করে, সারাদিন বসে থেকে, ঘানি দিয়ে সরিষা ও নারকেল মাড়াই করে তেল তৈরী করতে চায় না। আর তাই কালের বিবর্তে আধুনিক যন্ত্রপাতির কাছে হার মেনে কাঁঠের তৈরী এই ঘানি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। সরেজমিনে সদর উপজেলার জামালপুর ও পীরগন্জ উপজেলার উজ্জলকোঠা ইউনিয়নে যেয়ে কয়েকটি পরিবারের দেখা মেলে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আধুনিকতার ছোয়ায় অনেকে পেশা পরিবর্তন করে ঝুকে পড়েছে । তারপরও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে জরাজীর্ণ কিছু পরিবার এখনও বাপ-দাদার ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রেখেছে কাঠের তৈরী ও গরুর কাঁধে ঘুরানো এই ঘানির পেশাকে। লাভহীন এই পেশাকে বর্তমানে বাপ-দাদার পেশা রক্ষায় আকড়ে রেখেছে মুষ্টিমেয় কিছু পরিবার। যাদের অনেকেই অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। হরিপুর উপজেলার কাঠালডাঙ্গী গ্রামের রাজকুমার জানান, ঘানিগাছ থেকে বছরের আশ্বিন, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই তিন মাসে বেশী বিক্রি হয়ে থাকে। অন্য মাসগুলোতে কোন সময় একটি বা দুইটি ঘানের কাজ হয়।