• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২০, ০২:৪৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৮, ২০২০, ০২:৪৬ পিএম

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ে, শারীরিক সম্পর্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু 

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ে, শারীরিক সম্পর্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু 

সংসারের অভাব ঘোচাতে আর কিশোরীর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় পড়ার টেবিল থেকে তুলে বসানো হয় বিয়ের পিঁড়িতে। মাস খানেক আগেই লাল শাড়ি আর মেহেদী পরে কনের সাজে শ্বশুরবাড়িতে যায় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নূর নাহার (১৪)। কিন্তু বিয়ের মাত্র ৩৪ দিনের মাথায় জীবনের ইতি টানতে হলো এই কিশোরীর। 

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নূর নাহারের বাবা সখীপুর উপজেলার নলুয়া কলাবাগান গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি রিকশাচালক। আর মা গার্মেন্টসকর্মী। অভাবের সংসারে তার দিনমজুর নানা উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের কলিয়া গ্রামের বাসিন্দা লাল খান চার বছর বয়সে নূর নাহারকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর তাকে স্কুলে ভর্তি করান। নূরনাহার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

গত ২০ সেপ্টেম্বর উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ৩৪ বছর বয়সী ছেলে প্রবাস ফেরত রাজিব খানের সঙ্গে বিয়ে হয় নূর নাহারের। বিয়ের সময় নানা লাল খানের প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। এই টাকার জোগান দেন তার আত্মীয়-স্বজনরা।

তবে মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়নি। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় শারীরিক সম্পর্কের পরই নূর নাহারের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নূরনাহার ও রাজিবের পরিবারে আলোচনা হয়।

পরে রাজিবের পরিবারের পক্ষ থেকে গ্রাম্য করিবাজ দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। এতেও ফল না পাওয়ায় গত ২২ অক্টোবর নূর নাহারকে ভর্তি করা হয় টাঙ্গাইলের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। ওই ক্লিনিকে নূর নাহারকে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে স্বামী রাজিব ও তার পরিবার কৌশলে কেটে পড়ে। পরে অবস্থার অবনতি হলে নূরনাহারের পরিবার তাকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এ সময় মেয়েটির চিকিৎসা করানোর মতো টাকাও ছিল না গরিব পরিবারটির হাতে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় গ্রামবাসী প্রায় ৬০ হাজার টাকা তুলে দিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য নূর নাহারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে তার পরিবার।

কিশোরী নববধূর এমন দুঃসময়েও শ্বশুরবাড়ির কোনো লোকই ছিলোনা পাশে। অবশেষে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে মৃত্যু হয় তার। পরদিন রোববার (২৫ অক্টোবর) ময়নাতদন্ত শেষে তাকে তার নানার বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নূর নাহারের নানা লাল খান বলেন, মেয়ের জামাইয়ের অভাবের কারণে নাতনি নূর নাহারকে ছোটকালেই আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। দিনমজুরি করেও তাকে লেখাপড়া করাচ্ছিলাম। ছেলে প্রবাসী ও ধনী হওয়ায় মেয়েটির সুখের কথা ভেবে আমরা নূর নাহারকে বিয়ে দিই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে আর বাঁচাতেই পারলাম না।

মৃত্যুর পর নূর নাহারের স্বামী রাজিব তার লাশটি পর্যন্ত দেখতে আসেননি। মূলত স্বামীর কারণেই আমার নাতনির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু আইন দিয়ে নয়, সামাজিকভাবে বাল্যবিয়ে নির্মূল করতে হবে।

জাগরণ/এমআর