• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২০, ০৮:৪৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২৬, ২০২০, ০৮:৪৫ এএম

ইটভাটায় যাচ্ছে ফসলি জমির মাটি

ইটভাটায় যাচ্ছে ফসলি জমির মাটি

চলছে শীতের মৌসুম। এ মৌসুম এলেই বেড়ে যায় মাটিখেকোদের তৎপরতা। শুরু হয় নদী ও নদীর তীরঘেঁষা ফসলি জমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি। এবারও থেমে নেই আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বংশী নদীর পাড়ঘেঁষা বেশ কয়েকটি স্থান থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা। পরে সেই মাটি বিক্রি হয় স্থানীয় ইটভাটায়। এর ফলে একদিকে যেমন ঝুঁকিতে পড়ে নদীপারের বসবাসরত লোকবসতি, অন্যদিকে কমছে ফসলি জমি এবং পুষ্টি উপাদান হারাচ্ছে কৃষিজমি। আর এসব কাজ করছেন খোদ জনপ্রতিনিধিরা।

সম্প্রতি আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাঙামাটি, কালিকাপুর, লালারটেক, গাজীবাড়ি ও গাজীখাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এসব স্থানের ফসলি জমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকযোগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়।

গাজীবাড়ি ও গাজীখালি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বংশী নদীর পাশের ফসলি জমি থেকে ৮-১০ ফুট গর্ত করে ভেকুর সাহায্যে মাটি কাটা হচ্ছে। পরে ওই মাটি ট্রাকযোগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন ইটভাটায়। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা ট্রাক দিয়ে মাটি বহন করার ফলে স্থানীয় আঞ্চলিক সড়ক রয়েছে পড়েছে হুমকিতে। যেকোনো সময় সড়ক ধসে যেতে পারে।

গাজীবাড়ি ও গাজীখালি এলাকা থেকে মাটি নেওয়া হচ্ছে গোহাইলবাড়ি এলাকার এমবি এন ব্রিকস নামের একটি ইটভাটায়—এমন সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ে ওই ইটভাটায় গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, প্রতি গাড়ি (ট্রাক) মাটি বিক্রি করা হয় ১ হাজার ২০০ টাকা করে। এক সপ্তাহ ধরে এখানে মাটি কাটা হচ্ছে। তবে মাটিগুলো জমির মালিকদের কাছ থেকে শতাংশপ্রতি ৩ হাজার টাকা ধরে কেনা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে মাটি এখান থেকে কে কিনেছেন, সে ব্যাপারে তিনি কোনো কথা বলেননি। কিন্তু ট্রাকে করে মাটি গোহাইলবাড়ির একটি ইটভাটায় যাচ্ছে বলে সত্যতা স্বীকার করেন।

অপর দিকে আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য খলিলুর রহমান ওরফে খলিল মেম্বার কালিকাপুর, লালারটেক এলাকায় বংশী নদীর তীর থেকে ও তীরঘেঁষা ফসলি জমি থেকে ভেকুর সাহায্যে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। যে স্থান থেকে তিনি মাটি কেটে বিক্রি করছেন তার পাশেই সরিষাক্ষেত। ক্ষেতে সরিষা ফুল ফুটে আছে। ভুট্টাগাছ সবেমাত্র উঠে দাঁড়াচ্ছে। তবে গাছগুলো শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারবে কি না, তা অনিশ্চিত। কারণ, মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ফলে যে গভীরতা সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে সরিষা ও ভুট্টাক্ষেতের পাশ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ট্রাক দিয়ে মাটি নিতে আসা ট্রাক ড্রাইভার শুব্রত সরকার জানান, বংশী নদীর কুল ঘেঁষে ৮-১০ ফুট পরিমাণ গর্ত করে মাটি কাটছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি খলিল। সেই মাটি আবার পাশের একটি ইটভাটার কাছে বিক্রি করছেন তিনি।

শুব্রত সরকার বলেন, “আমরা কিছু জানি না। তবে মেম্বার যেভাবে বলছে, আমরা সেভাবেই করছি। মেম্বাররের কেনা ভেকু দিয়ে তো প্রতিবছরেই এ এলাকা থেকে মাটি কাটা হয়। এবারও আমরা কাটছি।”

এমবি এন ব্রিকস ইটভাটার ব্যবস্থাপক আরমান হোসেন জানান, বছরের এ সময়টা শিমুলিয়ার ইউপির বিভিন্ন এলাকার মাটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমরা মাটি কিনে থাকি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কোথা থেকে মাটি দেয় বা কীভাবে মাটি আনা হয়, আমরা সেটা খোঁজ নিইনি। তবে আমরা টাকা দিই তাই মাটি পেলেই চলে।

শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য খলিলুর রহমান ওরফে খলিল মেম্বার ফোনে বলেন, “এলাকায় যদি ইটভাটা না চলে, যদি মাটি কাটা না যায়, তাহলে বন্ধ রাখমু অসুবিধা কী? নদীর মাটি কাটাও নিষেধ আর ফসলি জমির মাটি কাটাও নিষেধ, তাহলে বাংলাদেশে ইটভাটা চালাব কেমনে।”

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, “কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ার ফলে পুষ্টি উপাদান কমে যায় এবং ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে। আমরা শঙ্কিত, এভাবে উর্বর মাটি নষ্ট হলে কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হবে।”

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ঢাকা জেলা) মোসাব্বের হোসেন মো. রাজীব বলেন, “আইনে আছে যে কোন কোন স্থান থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় দেওয়া হবে, সেই বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কাছে হলফনামা দাখিল করতে হবে।”