• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১, ০৯:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১, ০১:১৮ এএম

টেকনাফে মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল জকির

টেকনাফে মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল জকির

কক্সবাজারের টেকনাফের নয়াপাড়া মৌচনি-শালবন রোহিঙ্গা শিবিরে মাদক-মানব পাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য ও দোকান দখল সবই চলে। মৌচনি-শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করত জকির আহমদ ওরফে জকির ডাকাত। অপরাধের রাজ্যের সর্বশেষ নেতৃত্বে ছিল সে। 

গতকাল মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় ডাকাত সর্দার জকির। ডাকাতি ছাড়াও তার দল অপহরণ, ছিনতাই, মাদক কারবারে জড়িত ছিল। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় তার আরও দুই সহযোগী নিহত হয়েছে।

নয়াপাড়ার সি-ব্লকের আমিনের ছেলে জাকির। তার মৃত্যুতে হাফ ছেড়ে বেঁচেছে মৌচনি-শালবন রোহিঙ্গা শিবিরে বাসিন্দারা। নিহত অপর দুজন হলো, মো. হামিদ ও শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের মো. জহির।

জকির মূর্তিমান আতঙ্কের নাম

জকির ডাকাত গ্রুপ মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম উল্লেখ করে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, জকিরসহ তার সহযোগীদের নামে ধর্ষণ, ডাকাতি, হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। জকিরের বিরুদ্ধে ২০টির বেশি মামলা রয়েছে। মূলত তারা ক্যাম্পে ত্রাস ছিল।

আজিম আহমেদ আরও বলেন, “এই গ্রুপকে ধরতে র‌্যাব-১৫ দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার বিকালে নয়াপাড়া-মৌচনি রোহিঙ্গা শিবিরের পশ্চিম পাহাড়ে জকির বাহিনীর আস্তানা ঘিরে ফেলে র‍্যাব। মাইকিং করে তাদের বারবার আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারা র‌্যাবকে লক্ষ্যে করে গুলি চালায়। র‌্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। ঘণ্টাখানেক গোলাগুলির পর ডাকাতরা পিছু হটে পাহাড়ি অঞ্চলে ঢুকে পরে। পরে ঘটনাস্থলে তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। তার মধ্যে ডাকাত দলের প্রধানও ছিল। এ ঘটনায় র‌্যাবের এক সদস্য গুলিবিদ্ধসহ দুজন আহত হয়েছে।”

র‌্যাব বলেছে, ঘটনাস্থল থেকে দুটি পিস্তল, দুটি বন্দুক, ৫টি ওয়ান শুটারগান ও  ২৫ রাউন্ড পিস্তলের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

কক্সবাজারের-টেকনাফ প্রধান সড়ক থেকে তিন কিলোমিটার ভেতরে নয়াপাড়া মৌচনি-শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝামাঝি পাহাড়ি এলাকায় জকির ডাকাত আস্তানা গড়ে তুলেছিল। খুন, ধর্ষণ, ইয়াবা কারবার, মানবপাচার, অপহরণ এমন কোনও অপরাধ নেই তার এলাকায় হত না। অপরাধের এত শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল সে, যেখানে সাধারণ লোকজনের চলা ফেরা তো দূরে থাকুক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রবেশ করতে বেগ পেত।

কে এই জকির

স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, টেকনাফের নয়াপাড়ার সি ব্লকের আমিনের ছেলে জকির (২৮)। ২০-২৫ জনের একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল জকির ডাকাত। কোনও কোনও জায়গায় জকির বাহিনী ভিন্ন নামেও পরিচিত। বিশেষ করে টেকনাফের নয়াপাড়া মৌচনি-শালবন, জাদিমুরা, লেদাসহ বেশ কয়েকটি ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করত সে।

যেভাবে উত্থান জকিরের

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, এক সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করত নূরে আলম ডাকাত। তার গ্রুপ এক আনসার সদস্যকে হত্যা করে তার অস্ত্র লুট করেছিল। ২০১৮ সালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় সে। এরপর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নেয় সলিম বাহিনী। নূরে আলম ও সলিম দুজনের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক ছিল জকিরের। কিন্তু ইয়াবার মুনাফার টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সলিমকে হত্যা করে জকির বাহিনী। এর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পে জকির প্রায় একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। তখন থেকে জাদিমুরা, মৌচনি-শালবন ক্যাম্পের পাহাড়ে অপরাধের ‘রাজা’বনে যায়।

আয়ের উৎস ইয়াবা, মানবপাচার ও চাঁদাবাজি

জকির বাহিনীর অর্থের জোগানের একটি বড় উৎস ইয়াবা ও মানবপাচার। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যেসব সিন্ডিকেট ইয়াবা ও মানবপাচার করছে, তাদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নিত তারা। অনেক সময় জকির বাহিনীর সদস্যরা ইয়াবা ও মানবপাচারে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। ইয়াবা ছাড়াও ক্যাম্পে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় তারা নিয়মিত মহড়া দিত।

কখন থেকে জকির বাহিনী কোণঠাসা

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ২ মার্চ টেকনাফের জাদিমোরা ও শালবনের মাঝামাঝি পাহাড়ে র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে সাত ডাকাত নিহত হয়। তারা সবাই জকির ডাকাতের দলের সদস্য ছিল। এতে জকির বাহিনী কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ফলে দল গোছাতে নতুন করে সদস্য সংগ্রহের চেষ্টায় ক্যাম্পের উঠতি বয়সের যুবকদের টার্গেট করেছিল।

খুশি সাধারণ রোহিঙ্গারা

টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মো. ইসলাম বলেন, “ গতকাল মঙ্গলবার বিকালে শিবিরের পশ্চিমে পাহাড়ি এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে  গোলাগুলিতে শীর্ষ ডাকাত জকিরসহ তিন নিহত হয়েছে। ডাকাত নিহত হওয়ার খবরে শিবিরে লোকজনের মাঝে স্বস্তি এসেছে। তবে ডাকাত দলের আরও লোকজন জীবিত থাকায় শিবিরের বাসিন্দারা ভয়ে রয়েছেন।”