• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২১, ০৯:০৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২১, ২০২১, ১০:৫৬ এএম

দুই লাখ টাকার জন্য বন্ধুর স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা

দুই লাখ টাকার জন্য বন্ধুর স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা

হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই হবিগঞ্জের বাহুবলের আলোচিত ‘মা-মেয়ে গলা কাটা লাশ উদ্ধারের রহস্য’ উন্মোচন করেছে পুলিশ। দুই লাখ টাকার জন্য সংঘবদ্ধ দলের সহযোগিতা নিয়ে বন্ধুর স্ত্রী ও সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করে আমির হোসেন। 

আদালতে দেওয়া আমির হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা। 

শনিবার (২০ মার্চ) রাতে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী ইউনিয়নের লামাপুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা সবজি ব্যবসায়ী সঞ্জিত দাশ। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে স্থানীয় দ্বিগাম্বর বাজারের আব্দুল মোমিন তালুকদারের তৃতীয় তলা ভবনের ওপরের তলায় ভাড়া থাকতেন। একই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন ওই বাজারের সবজি শ্রমিক আমির হোসেন। এক ভবনে থাকার সুবাদে আমির হোসেন ও সঞ্জিত দাশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি সঞ্জিতের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা ধার নেয় আমির হোসেন। এ সময় সঞ্জিত দাশের ঘরে দুই লাখ টাকা জমা ছিল। টাকা ধার নেওয়ার সময় বিষয়টি টের পান আমির হোসেন। সেই থেকে আমির ফন্দি আঁটেন কীভাবে ওই টাকা লুট করা যায়। এরই মধ্যে বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে ব্যবসায়িক কাজে সুনামগঞ্জ যান সঞ্জিত দাশ। এ সুযোগে ওই টাকা লুটের পরিকল্পনা করেন আমির। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজের স্ত্রী-সন্তানকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন তিনি। পরিকল্পনার সঙ্গী করে আরও দুজনকে। ঘটনার দিন আমির হোসেন, সঞ্জিত দাশের স্ত্রী অঞ্জলি মালাকার ও তার শিশুকন্যা পূজা দাশ ছাড়া পুরো ভবনে আর কেউ ছিল না। বুধবার রাত সাড়ে ৩টায় (১৮ মার্চ) ভবনের বিদ্যুতের মেইন সুইচের সংযোগ কেটে দেন তারা। এ সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী সঞ্জিত দাশকে ফোন করে চুরির ঘটনা সাজান আমির হোসেন। এরপর অঞ্জলিকে ফোন করে আমির হোসেন বলে, ‘আমার বাসা চুরি হয়েছে, বউদি দরজাটি খুলুন।’ অঞ্জলি তখন দরজা খুলে দেন। এরপরই অঞ্জলি ও তার মেয়ে পূজাকে হত্যা করে ঘরে রক্ষিত ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নিজের হাত নিজেই কেটে আহত সেজে পাশের জমিতে পড়ে থাকেন আমির। পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। 

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সকালে সুনামগঞ্জ থেকে ফিরে স্ত্রী-সন্তানের রক্ত মাখা লাশ দেখতে পান সঞ্জিত দাশ। সঞ্জিত দাশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমির হোসেনকে আটক করে পুলিশ। এরপর সঞ্জিত দাশ বাদী হয়ে বাহুবল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় আমির হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরে আমির হোসেনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী অঞ্জলি মালাকারের ব্যবহৃত মোবাইল, রক্তমাখা ছুরি ও নগদ ৮৫০ টাকা উদ্ধারসহ অপর সহযোগী মনিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে তাদের অপর সহযোগী এখনো পলাতক রয়েছে। 

আমির হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। মনির মিয়াকে রোববার (২১ মার্চ) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে। 

আমির হোসেন (৩২) সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর গ্রামের আলমগীর মিয়ার ছেলে ও মনির মিয়া (৪৫) বাহুবল উপজেলার নোয়াই গ্রামের মৃত মহিদ উল্লার ছেলে। 

আরও পড়ুন