• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ২, ২০২১, ০২:৫৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২, ২০২১, ০২:৫৭ পিএম

লাশ দেখতে গিয়ে নিজেরাই লাশ হলেন

লাশ দেখতে গিয়ে নিজেরাই লাশ হলেন

শনিবার (১ মে) রাত ২টার দিকে বেজে ওঠে মোবাইলের রিং টোন। অপর প্রান্ত থেকে খবর আসে— হাসপাতালে মারা গেছেন জাকারিয়ার বড়ভাই। ভোরের অপেক্ষায় কাটে আরও ৩ ঘণ্টা। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়ের মৃতদেহ দেখতে বের হলেও গন্তব্যে আর পৌঁছানো হয়নি তাদের!

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয়েছেন জাকারিয়ার পরিবারের ৪ জনসহ ৫ জন। একজনের দাফনের বদলে এখন প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে পরিবারের চারজনকে দাফনের!

তবে জাকারিয়া দম্পতি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এখন শুয়ে আছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই বিছানায়।

বড় ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকার্ত জাকারিয়ার এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার বিষয়টি যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। তার কেবলই মনে হচ্ছে এটি স্বপ্ন, এটি বিভ্রম। সবকিছু আগের মতোই আছে। আছে প্রিয় ভাতিজি সাদিয়া। ঘুমুচ্ছে আদরের শাহাদাত। অন্যরাও যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। কোথাও কেউ থেমে নেই।

শারীরিক আঘাত আর পরিবারের সদস্যদের হারানোর বেদনা নিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচ তলার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মো. জাকারিয়া। যখনই পরিবারের কথা মনে হচ্ছে, তখনই ফুঁপিয়ে কাঁদছেন তিনি। বার বার বলছেন, “একটা সিএনজি (অটোরিকশা) ভালোমতোই পৌঁছে গেল। আর অল্পের জন্য আমাদেরটা কেন পৌঁছালো না? হঠাৎ করেই একটি ট্রাক এসে আমাদের সিএনজিকে চাপা দিল!”

এদিকে, তার স্ত্রী হাসিনা বেগম চিকিৎসাধীন আছেন হাসপাতালের চতুর্থ তলার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তবে তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।

দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া হাবিবুন্নেসার মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন তার ভাই মাহমুদ আলী। তিনি দুর্ঘটনার খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে গেছেন। তবে হাসপাতালের নানা জায়গায় খুঁজেও বোনকে না পেয়ে খোঁজ নেন জরুরি বিভাগে। সেখান থেকে জানানো হয়, হাসপাতালে আনার পথেই মারা গেছেন হাবিবুন্নেসা। তার মরদেহ জরুরি বিভাগের নির্দিষ্ট কক্ষে রাখা আছে। সেখানে গিয়ে স্ট্রেচারে বোনের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

হাবিবুন্নেসার ছেলে দিলদার হোসেন বলেন, ‌‌‌‌“সিলেট রাগীব রাবেয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া আব্দুল কাইয়ূম মামার মরদেহ দেখতে মামা, দুই মামী, মামাতো ভাই-বোন, মাসহ কয়েকজন সকালে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে রওনা দেন। তবে পথিমধ্যে দুটি সিএনজির একটিকে চাপা দেয় একটি ট্রাক। এতে ছোট মামী, তার ছেলে-মেয়ে, আমার মা ও সিএনজির চালক মারা যান। আর বড় মামা ও মামী আহত হন। তাদের পুলিশ উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন।”

রবিবার (২ মে) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সিলেটের জৈন্তাপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন পাখিবিল এলাকার মৃত আরব আলীর ছেলে হোসেন আহমদ (৩৫), জামাল মিয়ার স্ত্রী সাফিয়া বেগম (২৯), জামাল মিয়ার মেয়ে সাদিয়া (৭), জামাল মিয়ার ছেলে শাহাদাত (৫ মাস) ও মৃত হাফিজ মিয়ার স্ত্রী হাবিবুন্নেসা (৩৩)।

আর আহতরা হলেন পাখিবিল এলাকার মৃত আরজান আলীর ছেলে জাকারিয়া ও জাকারিয়ার স্ত্রী হাসিনা বেগম। তাদের উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, জৈন্তাপুর ফেরিঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা হঠাৎ মহাসড়কে উঠে এলে দ্রুতগামী একটি ট্রাক ওই অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়।