• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২১, ০২:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৮, ২০২১, ০২:১১ পিএম

মৃত্যুঝুঁকি নিয়েও পাহাড়ে বসতি

মৃত্যুঝুঁকি নিয়েও পাহাড়ে বসতি

মৃত্যুঝুঁকি জেনেও কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় এখনো বাস করছে হাজার হাজার মানুষ। ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে প্রাণহানির ঘটনা। এ কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে আসার জন্য নানাভাবে প্রচারণা চালানো হলেও তাতে কর্ণপাত করছেন না বসবাসকারীরা। 

দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের ওপরে-নিচে বসতঘর নির্মাণের ঘটনা বাড়ছে। এতে প্রাণহানির ঘটনাও বেড়েই চলছে। সময়ের সঙ্গে মানুষের বসবাসের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পাহাড় বেচাকেনায় মেতে উঠেছে ভূমিদস্যুরা। ক্রেতারা অল্প টাকায় পাহাড়ি জমি কিনে তাতে গড়ে তোলে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বসতি। প্রশাসন নানাভাবে চেষ্টা ও আইন করেও আটকাতে ব্যর্থ পাহাড়খেকোদের।

জানা যায়, কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনা, পাহাড়তলী, সার্কিট হাউস, টেকনাইফ্যা পাহাড়, হিমছড়ি, মহেশখালী উপজেলাসহ সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ায় পাহাড় ধস প্রতি বর্ষা মৌসুমের নিয়মিত ঘটনা। প্রতিবছর ছোট-বড় পাহাড় ধসে মারা যান বহু লোক। এত ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করার কারণ জানতে চাইলে পাহাড়তলী হেলালী ঘোনার আব্দুল বলেন, “আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। দিনমজুরি করে সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকতে পারি না। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পাঁচ বছর আগে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ২ শতক পাহাড়ি জমি কিনে কোনোমতে টিন দিয়ে ঘর তৈরি করে বসবাস করছি। এছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।” 

একই কথা বলেছেন রুমালিয়ারছড়াস্থ বাঁচা মিয়ার ঘোনার আব্দুল হালিম, বাদশাঘোনা এলাকার মৌলভী হাফেজ আলম, পাহাড়তলী ইসলামপুরের মো. আমিন, বৈদ্যঘোনার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মো. হোসেন, কলাতলী চন্দ্রিমার ঘোনার বিধবা খায়রুন্নাহার ও বাদশার ঘোনার হোসনে আরা বেগম। তারা আরও বলেন, “সরকার আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করলে আমরা এসব পাহাড় ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।”

২০১০ সালের জুন মাসে কক্সবাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় সাত সেনা সদস্যসহ ৫৬ জনের মৃত্যু হয়। আর ২০১৫ সালের জুলাই মাসে কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ায় ভয়াবহ পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজনসহ প্রাণ হারান পাঁচজন। কক্সবাজারের পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, যারা পাহাড় কাটছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪৫টির বেশি মামলা হয়েছে। তবে পাহাড়খেকোরা বরাবরেই সক্রিয় রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজার জেলার সভাপতি ফজলুল করিম চৌধুরী জানান, কক্সবাজার শহরের আদর্শগ্রাম, কলাতলী, সিটি কলেজ এলাকা, পাহাড়তলী, ঘোনারপাড়া, খাজা মঞ্জিল, বৈদ্যঘোনাসহ বিভিন্ন এলাকার ২০টির বেশি স্থানে দু-লাখের বেশি মানুষ চরম ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ে বসবাস করছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টি হলে ফের পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন কবির বলেন, রোহিঙ্গারা ঘরবাড়ি তৈরির জন্য প্রতিদিন পাহাড় কাটছে। অনেকে বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে পাহাড় কাটে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে পাহাড় কাটার মাটি নেমে এসে শহরের নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে যায়। ফলে পুরো শহরে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। পাহাড়কাটা রোধে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্তা বলেন, “পাহাড় কাটা বন্ধ ও বসতি উচ্ছেদের জন্য গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত অন্তত ২০টি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় নতুন করে তৈরি শতাধিক ঘরবাড়ি উচ্ছেদ ও পাহাড় কাটার দায়ে মামলা ও জরিমানা করা হলেও আরও বহু অবৈধ স্থাপনা রয়ে গেছে। এসব স্থাপনা উচ্ছেদে যৌথ অভিযান দরকার। কিন্তু আমাদের লোকবল সংকটের কারণে একসঙ্গে এত অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।” 

তিনি আরও বলেন, “বৃষ্টি হলে পাহাড় কাটার কারণে মাটি নরম হয়ে ধসে পড়ে। যদি বর্ষাকালে টানা বর্ষণ হয়, তাহলে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীর পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।”