• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২১, ০৩:৫৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১০, ২০২১, ০৪:২৩ পিএম

‘দুই দিন আগে যেখানে ঘুমাতাম, আজ সেখানে স্রোত বইছে’

‘দুই দিন আগে যেখানে ঘুমাতাম, আজ সেখানে স্রোত বইছে’

“দুই দিন আগেও পরিবার নিয়ে যেখানে ঘুমাতাম, আজ সেখানে নদীর স্রোত বইছে।” কথাটি বলেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড় এলাকার সাইফুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) আমাদের প্রতিবেদক ওই এলাকায় গেলে সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গ্রামবাসীর সহায়তা তিস্তার তীরে বালুর বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধটি হওয়ায় আশা করেছিলাম এ বছর আর নদী ভাঙনের মুখে পড়তে হবে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতে পারব। কিন্তু বর্ষার শুরুতে পানির চাপে তিন দিনের ব্যবধানে বালুর বাঁধটি বেশির ভাগ অংশই বিলীন হয়েছে। বাঁধটি বিলীন হলে বাড়িঘর নদীর মুখে পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। বর্ষার আগে কুটিরপাড়, চৌরাহা ও বাদিয়ারটারী গ্রাম বিলীন হতে পারে।” 

বুধবার (৯ জুন) বিকেলে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, “উপজেলায় তিস্তার তীরে স্থানীয়দের সহায়তায় গড়া বালুর বাঁধের অর্ধকিলোমিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।” 

স্থানীয়রা জানান, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদী মরুভূমিতে পরিনত হলেও বর্ষার শুরুতে উজানের ঢলে ফুলে ফেঁপে উঠে হিংস্র রূপ ধারণ করে। প্রতিবছর তীর ভেঙে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে পথে বসছে তিস্তাপারের  হাজার হাজার পরিবার। জন্মলগ্ন থেকে তিস্তা নদী খনন না করায় সামান্য পানিতে দুই কূল ভাসিয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে। চরম দুর্ভোগে পড়ে তিস্তাপারের মানুষ। দুর্ভোগ লাঘবে নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। নিজেদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় গ্রামে গ্রামবাসীর সহায়তায় প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি বালুর বাঁধ তৈরি করা হয়। স্থানীয়রা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধটি নির্মাণ করেন। বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় আশায় বুক বাঁধে নদী-তীরবর্তী কুটিরপাড়, বালাপাড়া ও চৌরাহা এলাকার কয়েক হাজার পরিবার।

তবে গত তিন দিনে তিস্তার প্রবল স্রোতে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার বাঁধ বিলীন হয়ে যায়। গত তিন দিনে প্রায় ১০টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। তারা তাদের ঘরবাড়ি ও আসবাব উঁচু রাস্তায় বা অন্যের উঠানে স্তূপাকারে রেখেছেন। জমির অভাবে তারা ঘর তুলতে পারছেন না। বাঁধটি এবং পাশের গ্রাম তিনটি রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে ১০ হাজার জিও ব্যাগ প্রয়োজন বলে স্থানীয়দের দাবি।

জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে নগদ অর্থ ও ঢেউটিন মজুত আছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা ইউএনও তা বিতরণ করবেন। আর বালুর বাঁধটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। নদী ভাঙনের সর্বশেষ তথ্য সার্বক্ষণিক মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন