• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২১, ০৫:১৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২০, ২০২১, ০৫:১৭ পিএম

বর্ষায় বেড়েছে চাঁই-নৌকার কদর

বর্ষায় বেড়েছে চাঁই-নৌকার কদর

বরিশালের আগৈলঝাড়ার প্রত্যন্ত এলাকায় বর্ষা মৌসুমে চলাচল, জীবন-জীবিকা ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম বাহন নৌকা। দরিদ্র জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে পরিবারের সঙ্গে নিবিরভাবে জড়িয়ে রয়েছে নৌকা। বর্ষা মৌসুমে নৌকায় জাল, চাঁই (মাছ ধরার ফাঁদ) অথবা বড়শি নিয়ে মৎস্য শিকারে ছুটে চলেন জেলেরা। তাই প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় চাঁই ও নৌকার কদর। আর এই মৌসুমে চাঁই ও নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে এ অঞ্চলের শত শত পরিবার।

আগৈলঝাড়া উপজেলার বিলাঞ্চল হিসেবে পরিচিত বারপাইকা, দুশুমি, রামানন্দেরআঁক, বাটরা, বাহাদুরপুর, ত্রীমুখি, রামশীল, সাদুলপুর, পীরের বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় নৌকা তৈরি করা হয়। জৈষ্ঠ্য থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত আগৈলঝাড়ার সাহেবেরহাট, বাহাদুরপুর ও পাশ্ববর্তী কোটালীপাড়ার ঘাঘর, রামশীল হাট এলাকায় বসে নৌকার হাট। এসব অঞ্চলের মানুষের বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা। হাট-বাজার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে আসার জন্য তাদের নৌকার উপর নির্ভর করতে হয়। এ কারণে বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই জমে উঠেছে নৌকার হাট।

বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চলছে নৌকা বানানোর ধুম। নৌকা তৈরির কারিগর রমেশ অধিকারী জানান, তারা গ্রাম অঞ্চল থেকে কাঠ কিনে এনে নৌকা তৈরি করে থাকেন। চাম্বল কাঠ দিয়ে ডিঙ্গি ও ছোট আকারের পিনিশ নৌকা তৈরি করা হয়। আর রেইন্ট্রি কাঠ দিয়ে তৈরি হয় কম দামি নৌকা।

কাঠ মিস্ত্রি মৃণাল দাস জানান, বর্ষার সময় কাঠ মিস্ত্রিদের বাড়ি-ঘর নির্মাণ কাজ বা ফসলি জমিতে তেমন কোনো কাজ না থাকায় এসময় তারা নিজেরা বাড়িতে বসেই নির্মাণ করেন বিভিন্ন আকার ও নকশার নৌকা। ১২ থেকে ১৫ মণ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১০ হাত লম্বা একটি নৌকা বানাতে তিনজন মিস্ত্রির দুই দিন সময় লাগে। জারুল গাছের ওই নৌকা তারা ছয় থেকে সাত হাজার টাকায় বাজারে বিক্রি করেন। এতে তাদের দুই হাজার টাকা লাভ হয়।   নৌকার ক্রেতারা জানান, শুধু বর্ষা মৌসুমে ব্যবহারের জন্য কম দামি নৌকা বেশি বিক্রি হয়ে থাকে।
মাছ ধরার চাই তৈরির জন্য বিখ্যাত আগৈলঝাড়া উপজেলার মোহনকাঠী গ্রাম। এ গ্রামে কবে, কখন, কে চাই তৈরি করার কাজ শুরু করেছেন? তা সঠিকভাবে বলতে না পারলেও প্রবীণরা জানিয়েছেন, প্রায় ২০০ বছর ধরেই এ গ্রামে চাঁই তৈরি ও বিক্রি চলছে। বংশ পরম্পরায় এ গ্রামের ৪০০ পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে চাই তৈরি করে। গ্রামের পুরুষেরা বর্ষা মৌসুমের ছয় মাস চাঁই তৈরি ও শুষ্ক মৌসুমে দিনমজুরের কাজ করেন।

মোহনকাঠী গ্রামের তৈরি করা চাই বিক্রি হয় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার হাট-বাজারে। গ্রামটির নাম মোহনকাঠী হলেও চাই তৈরি করতে গিয়ে গ্রামের নাম হয়েছে আগৈলঝাড়ার চাই পল্লী। নানাবিধ সমস্যার মধ্যে বংশ পরম্পরায় এ গ্রামের বাসিন্দারা চাঁই তৈরির পেশাকে ধরে রেখেছেন। চাই তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ, বেত ও লতার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই অর্থাভাবে মহাজনদের কাছ থেকে দাদন ও বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে টাকা এনে চাঁই বানাচ্ছেন। গ্রামের মাখন বৈরাগীর পুত্র দুলাল বৈরাগী বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। হরলাল বৈদ্যর পুত্র প্রশান্ত বৈদ্যও স্নাতক শ্রেণিতে পড়ছেন। 

তারা জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে চাঁই বুনতে তারা সহযোগিতা করে থাকেন। শুধু দুলাল ও প্রশান্তই নয় গ্রামের প্রত্যেকটি ঘরের ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনার পাশাপাশি চাঁই তৈরির কাজে পিতা-মাতাকে সাহায্য করে থাকে। বর্ষা মৌসুম এলেই পরিবারের সকলের ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায়। তাদের গ্রামের তৈরি চাঁই স্থানীয় মাহিলাড়া, পয়সারহাট, সাহেবেরহাট, ধামুরাসহ বানারীপাড়া, স্বরূপকাঠী, ঘাঘর, শশীকর, নবগ্রাম, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়।

জাগরণ/এমআর