• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২১, ০২:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৪, ২০২১, ০২:৪৩ পিএম

গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই 

গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই 

আবারও দেশজুড়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রকোপ। তবে সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। তার মধ্যে অন্যতম সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন। সরকারের নির্দেশনা থাকলেও মিরসরাইয়ে তা মানা হচ্ছে না। ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। ওদিকে অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা থাকলেও বাস বোঝাই করেই যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। পিছিয়ে নেই অন্যান্য যানবাহনও। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়াচ্ছে হেলপাররা। সব মিলিয়ে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, গণপরিবহনগুলো সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। প্রতিটি গণপরিবহনে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায় করা হলেও এসব ঘটনায় হাতে গোনা কয়েকটি মামলা করেই প্রশাসন দায়িত্ব শেষ করছে। গাড়িগুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। চট্টগ্রাম থেকে ফেনীমুখী একটি যাত্রীবাহী বাসে দেখা গেছে, ডাবল সিটে ডাবল যাত্রী। আবার ভাড়াও নেয়া হচ্ছে ডাবল। সামাজিক বা শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই। একে অপরের সাথে গাদাগাদি করে বসেছে। নেই কোন মুখে মাস্ক।

কথা হয় ওই বাসের যাত্রী বারইয়ারহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার এনামুল হকরে সাথে। তিনি অভিযোগ করেন, যাত্রীবাহী বাসগুলো সরকারি কোন নির্দেশনা মানছে না। ডাবল সিটে একজন করে যাত্রী নেয়া ও ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও তারা ডাবল সিটে দুজন যাত্রী নিচ্ছে। ভাড়াও নিচ্ছে দ্বিগুন। গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছে। এভাবে চলতে পারে না। প্রশাসন দ্রুত প্রদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
 
এমন চিত্র শুধু এই একটি বাসে নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করা সব বাসই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এছাড়া বারইয়ারহাট-বড়দারোগাহাট-সীতাকুন্ড রুটে চলাচল করা হিউম্যান হলার ও লেগুনা সার্ভিসেও একই অবস্থা। যাত্রী নিচ্ছে বেশি ভাড়াও নিচ্ছে বেশি। মিরসরাই থেকে নিজামপুর কলেজ ভাড়া ১০ টাকা। সিঙ্গেল যাত্রী নিলে ১৬ টাকা ভাড়া আসে। কিন্তু যাত্রী নিচ্ছে ডাবল, ভাড়াও নিচ্ছে ২০ টাকা।
 
রিপন নামে এক যাত্রী বলেন, আমি মিঠাছড়া থেকে উত্তরা বাসে করে মস্তানননগর বিশ্বরোড় যাচ্ছি দাঁড়িয়ে। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে সিটে বসতে পারিনি। কিন্তু আমার কাছ থেকে ডাবল ভাড়া নিয়েছে। নির্ধারিত ভাড়া ১০ টাকা। ভাড়া নিয়েছে ২০ টাকা। এভাবে আমাদের প্রতিদিন দিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামের মাদারবাড়ি থেকে বারইয়ারহাট রুটে চলাচল করা উত্তরা বাসের হেলপার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা বেশি যাত্রী উঠতে নিষেধ করার পরও যাত্রীরা জোর করে উঠে যায়। এতে আমাদের কি করার আছে? ভাড়া বেশি নেয়ার বিষয়ে বলেন, মালিক এখন আমাদের কাছ থেকে ইনকাম বেশি নেয়, তাই বাধ্য হয়ে ভাড়া বেশি নিতে হচ্ছে।
সম্প্রতি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে বারইয়াহাট-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করা ১৭ গনপরিবহনকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুবল চাকমা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
 
এই বিষয়ে বাস-মিনিবাস হিউম্যান হলার শ্রমিক ইউনিয়ন বারইয়ারহাট শাখার সাধারণ সম্পাদক আরিফ উদ্দিন মাসুদ বলেন, আমরা চালকদের দুই সিটে (ডাবল) একজন করে যাত্রী নিতে নির্দেশ দিয়েছি এবং সরকার ঘোষিত ভাড়া নেয়ার কথা তাদের বলা হয়েছে। আমরা খবর নিয়ে দেখি যদি কোন চালক-হেলপার অতিরিক্ত যাত্রী ও ভাড়া নেয় তাদের বিরুদ্ধে সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা সহকারি কমিশার (ভূমি) সুবল চাকমা বলেন, কিছুদিন আগে আমরা অতিরিক্ত যাত্রী ও ভাড়া নেয়ায় বেশ কিছু গণপরিবহনকে জরিমানা করেছি। এসময় তাদের অতিরিক্ত যাত্রী ও ভাড়া না নিতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

জাগরণ/এমআর